মোঃগোলাপমিয়াআদিতমারী (লালমনিরহাট) প্রতিনিধিঃ উজানের ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে লালমিনরহাটে ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গত তিনদিন ধরে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি। পরিবারগুলো ঘরবাড়ি হারিয়ে বিভিন্ন বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। পানিবন্দী পরিবারগুলোর মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার (২১ জুন) সকাল ৯টায় হাতীবান্ধার দোয়ানী পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদ দৌলা দৈনিক ভোরের দর্পণ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।এদিকে ধরলা নদীর পানি শিমুলবাড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচে রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে সোমবার (২০ জুন) সন্ধ্যা ৬টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ৫২ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২.৬০) যা বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এতে বানভাসি মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এদিকে সোমবার (২০ জুন) রাত ১০টায় লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর লালমনিরহাট সদর এবং আদিতমারী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন।
জানা গেছে, তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধিতে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রমনীগঞ্জ, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া, হলদিবাড়ী, কেতলী বাড়ী ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, বাহাদুরপাড়া, গোবরধন, চন্ডিমারী, আরাজি ছালা পাক ও কুমড়ীরহাট,ভেলাবাড়ী, দুর্গাপুর,কমলাবাড়ী, সদর উপজেলার কালমাটি, খুনিয়াগাছ, গোকুন্ডা, কুলাঘাট, মোগলহাট, বড়বাড়ি, রাজপুর, ইউনিয়নের তিস্তা নদীর পানি প্রবেশ করায় ১৬ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান মতি বলেন, আজ মঙ্গলবার (২১ জুন) সকাল থেকে এখানকার অধিকাংশ লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। পানিবৃদ্ধির কারণে ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের ১নং, ২নং ও ৩নং ওয়ার্ডের চর সিন্দুর্না এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। গত ৭ দিনে প্রায় ৫০টি পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।উপজেলার চরসিন্দুর্না গ্রামের জরিনা খাতুন বলেন, তিস্তার পানিতে ঘরবাড়ির সবকিছু ভেসে গেছে। কিছু মালামাল নৌকায় করে এপাড়ে নিয়ে এসেছি। মুরগি, ছাগল সবকিছুই ভেসে গেছে। জায়গা জমি নাই। স্থানীয় হাটখোলায় বাজারে মানুষের জমিতে আশ্রয় নিয়েছি। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, বন্যাকবলিত জেলার পাঁচ উপজেলায় ১৫০ মেট্রিক টন চাল, ১২ লাখ ৭০ হাজার টাকা, শুকনো খাবার ও শিশু খাদ্য বরাদ্দ হয়েছে তা বিতরণ কার্যক্রম শেষের দিকে। বন্যাকবলিত মানুষদের জন্য একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস ফারুক বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন এদিকে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদ দৌলা বলেন, গতরাত থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে শুরু করে বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। তিস্তাপাড়ের মানুষদের নিরাপদ স্থানে থাকার জন্য বলা হয়েছে।