নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা : ৩ আগস্ট,২০২৩ কলকাতার কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল হলে আয়োজিত হল বর্ণাশ্রম প্রকাশনা সংস্থার উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদের লেখা ১৬টি গ্রন্থ প্রকাশ,রাখিবন্ধন উৎসব ও সাহিত্য পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান।উদ্বোধনী সঙ্গীতের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়,বর্ণাশ্রম প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার শুভজিত মুখোপাধ্যায় প্রথমেই এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য,পটভূমি ব্যখ্যা করে স্বাগত ভাষণ দেন,এরপর বিশিষ্ট সাহিত্যিক সনৎ ভট্টাচার্য্যের ৭৬ তম জন্মদিন উপলক্ষে পুষ্পস্তবক ও শ্রদ্ধা স্মারক প্রদান করে একে অন্যের হাতে রাখি বন্ধন উৎসব পালিত হয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বর্ণাশ্রম প্রকাশনা সংস্থা থেকে যে ১৬/টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয় সেগুলি হলো বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সম্পাদক ড.মহীতোষ গায়েন ও বর্ণাশ্রম প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার শুভজিত মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ৬০ জন গবেষকের গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ সমৃদ্ধ আই.এস.বি.এন যুক্ত বিশেষজ্ঞ দ্বারা শংসায়িত “পশ্চিমবঙ্গের জেলা ভিত্তিক গবেষণা গ্রন্থ (তৃতীয় খণ্ড)”,গবেষণা গ্রন্থের প্রবন্ধগুলি বিভিন্ন জেলাবিষয়ক প্রবন্ধ বিভাগে ভাগ করা হয়েছে যেমন সামগ্রিক পশ্চিমবঙ্গ,দক্ষিণ ২৪পরগনা,উত্তর ২৪পরগনা,দার্জিলিং,হাওড়া,মালদহ,মুর্শিদাবাদ, দিনাজপুর,জলপাইগুড়ি,পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর,পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান,নদীয়া,বাঁকুড়া,বীরভূম,হুগলি,কলকাতা, কুচবিহার,ঝাড়গ্রাম,পুরুলিয়া,মোট ২০টি জেলা থেকে ৬০জন প্রাবন্ধিকের গবেষণা পত্র দ্বারা সমৃদ্ধ এই গ্রন্থটি আশা করা যায় গবেষণামহল ও পাঠকসমাজে সমাদৃত হবে।এই গ্রন্থের উপদেষ্টা মণ্ডলীতে আছেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক চিত্তব্রত পালিত,ইতিহাসবিদ অধ্যাপক রঞ্জিত সেন,ইতিহাসবিদ অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন পান্ডা,কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতপূর্ব নুরুল হাসান চেয়ার প্রফেসর অরুণ বন্দোপাধ্যায়, সুন্দরবন গবেষক ও ঔপন্যাসিক ধূর্জটি নস্কর, দক্ষিণ ২৪পরগনার গবেষক শক্তি রায়চৌধুরী,রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুরঞ্জন মিদ্দে। সম্পাদক মন্ডলীতে আছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ডিন ও ইতিহাস বিভাগের ভূতপূর্ব বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. সৈয়দ তানভীর নাসরিন,কল্যানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাবু জগজীবনরাম চেয়ার প্রফেসর ড. অনিল সরকার,কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. রাজশেখর বসু,রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড.আশীষ কুমার দাশ, কলকাতার সিটি কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. মহীতোষ গায়েন (মুখ্য সম্পাদক),বর্ণাশ্রম প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার শুভজিত মুখোপাধ্যায় (মুখ্য সম্পাদক), সিটি কলেজের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. শর্মিলা রায়,ভাঙড় মহাবিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড.সোমনাথ মণ্ডল এবং পাশকুড়া বনমালী কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ধ্রুব কর। গবেষণা গ্রন্থটির লক্ষ্য,উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তার কথা ব্যখ্যা করে
সম্পাদক মহীতোষ গায়েন ঘোষণা করেন যে আগামী বছর থেকে গবেষণা গ্রন্থের সেরা ৩টি প্রবন্ধকে পুরস্কৃত করা হবে। অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্বে প্রকাশিত হয় সাহিত্যিক ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় রচিত ছোটগল্পের দ্বিতীয় সংস্করণ “মানুষ রাজা” ও “স্বাগতকুঞ্জ”,সাহিত্যিক সনৎ ভট্টাচার্য্যের কাব্যগ্রন্থ “এক ঝাঁক ভালোবাসার কবিতা”,কবি বীরেশ্বর মুখোপাধ্যায় রচিত কাব্যগ্রন্থ”আমি আছি তোমরাও আছো তাই”,ঝাড়খন্ডের সাহিত্যিক প্রদীপ কুমার অধিকারী রচিত ছোট গল্প সংকলন “দ্বাদশী”,উত্তর দিনাজপুরের সুলেখিকা শ্রীমতী খুশী সরকারের ছোটগল্প সংকলন”কুয়াশা”,
সাহিত্যিক সৈকত পত্রনবিশ রচিত ছোটগল্প সংকলন “পরাজিত প্রেম ও অন্যান্য”,ছড়াকার শ্রী কামাক্ষাচরণ নাথ রচিত “শতেক ছড়ার ছড়াছড়ি” শ্রী শাহজাহান সিপাই রচিত “অমর বাঁশি”,লেখক ও সাংবাদিক রাজীব দত্ত সম্পাদিত শারদ সংকলন “মহামায়া”। এছাড়া কবি কেশব মণ্ডল রচিত কাব্যগ্রন্থ “সাজাই তোমার ঘেঁটুফুলে”,কবি সুব্রত চট্টপাধ্যায় রচিত কবিতা সংকলন “নষ্ট নারী”,দক্ষিণ ২৪পরগনার বিশিষ্ট কবি গোবিন্দ সরকার রচিত”রৌদ্র গহনে মেঘমল্লার”(২য় সংস্করণ) কৃষ্ণেন্দু বন্দোপাধ্যায় রচিত কাব্যগ্রন্থ “কবিতার ক্যানভাস”(প্রথম খণ্ড)। শেষ ২টি গ্রন্থের ভূমিকা ও শুভেচ্ছাবার্তা লেখেন বিশিষ্ট লেখক ও সম্পাদক ও কলকাতার সিটি কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. মহীতোষ গায়েন।
সাহিত্যিক ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত বর্ণাশ্রম প্রকাশনা সংস্থা জন্মলগ্ন অর্থাৎ ২০১৫ থেকেই
প্রতিবছর তাদের বাৎসরিক অনুষ্ঠানে দীর্ঘদিনের সাহিত্য সাধককে”রামমোহন রাধারাণী স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার”প্রদান করে। পূর্বেএই পুরস্কার পেয়েছেন —
২০১৫- অশ্রুরঞ্জন চক্রবর্তী ও সলিল চক্রবর্তী
২০১৬- সনৎ ভট্টাচার্য্য ও কৃষ্ণলাল মাইতি
২০১৭- প্রয়াত নির্মাল্য চ্যাটার্জী ও প্রশান্ত নস্কর (মরনোত্তর)
২০১৮- সজল বসু রায় ও শুক্লা সেনগুপ্তা
২০১৯-ও ২০২০,২০২১-কোবিদ এর জন্য অনুষ্ঠান হয়নি।
২০২২- কবি অরুপ মণ্ডল ও কবি গোবিন্দ সরকার।
গ্রন্থগুলি প্রকাশ করেন অনুষ্ঠানের সম্মানীয় অতিথি সাহিত্যিক ও সম্পাদক মহীতোষ গায়েন,সাহিত্যিক সনৎ ভট্টাচার্য্য,আকাশবাণী কলকাতার ঘোষক ও প্রাত্যহিকীর উপস্থাপক বরুণ দাশ ও কবি গোবিন্দ সরকার।তাঁরা প্রত্যেকেই অনুষ্টানের সাফল্য কামনা করে বক্তব্য রাখেন।
এবছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে বর্ণাশ্রম প্রকাশনা সংস্থা থেকে দীর্ঘদিনের সাহিত্য সাধনা ও ইতিহাস গবেষণার স্বীকৃতি স্বরূপ “রামমোহন রাধারাণী স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার” পান বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিক-প্রাবন্ধিক-সম্পাদক ও সিটি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ড. মহীতোষ গায়েন, বর্ণাশ্রমের কর্ণধার শুভজিত মুখোপাধ্যায় তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দিয়ে সম্মানিত করেন। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে এই পুরস্কারের জন্য ২জনের নাম ঘোষণা করেন কর্ণধার শুভজিত মুখোপাধ্যায়, তাঁরা হলেন যথাক্রমে সাহিত্যিক,গবেষক, প্রাবন্ধিক গৌতম মুখোপাধ্যায় এবং কবি,প্রাবন্ধিক বীরেশ্বর মুখোপাধ্যায়।
প্রতি ৫বছর অন্তর বিশিষ্ট সাহিত্যিক -কে “মৃত্যুঞ্জয় স্মৃতি স্মারক”প্রদান করে এই সংস্থা।২০২২ এ এই সম্মান পান দলিত সাহিত্য আকাদেমি সভাপতি সাহিত্যিক মনোরঞ্জন ব্যাপারী ও সাহিত্যিক সনৎ ভট্টাচার্য্য।২০২৭- এ এই সম্মান কারা পাবেন তা ঘোষিত হবে ২০২৬ এর অনুষ্ঠানে।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক রাজীব দত্ত সম্পাদিত শারদ সংকলন “মহামায়া” প্রকাশিত হয়।এই সংকলনটি সমৃদ্ধ হয় যাদের কবিতায় -মহীতোষ গায়েন, উত্তম মন্ডল, আঁখি রায়, শুভাশিস বিশ্বাস, মহম্মদ মফিজুল ইসলাম,অনীশ দাস, ইন্দ্রানী মাইতি, তৃষ্ণা ঘোষ, চন্দন কুমার মাইতি,কাজী নূর(বাংলাদেশ),রাজেশ কর্মকার,সোমনাথ রাণা,সংহিতা চক্রবর্তী বিশ্বাস,রাজেশ চট্টপাধ্যায়,অভীক দাস,দীপংকর নায়েক,স্নেহময় ঘটক,বীরেশ্বর মুখোপাধ্যায়,রাজীব দত্ত, প্রবন্ধে -সুরজিৎ কোলে,সুস্মিতা ঘোষ,ছোটগল্পে-অভিজীত চৌধুরী,শর্মিষ্ঠা মুখার্জি,সুস্মিতা নস্কর,লিওনি সাহা,চন্দ্রদীপ দাস।প্রচ্ছদ -অভীক দাস,সম্পাদনা সহকারী চন্দ্রদীপ দাস ও সংহিতা চক্রবর্তী বিশ্বাস।সমস্ত লেখকদের হাতে শংসাপত্র ও মেডেল দিয়ে সম্মানিত করেন “মহামায়া” র সম্পাদক রাজীব দত্ত ও সাহিত্যিক মহীতোষ গায়েন।বিশিষ্ট প্রচ্ছদ শিল্পী সাইনাজকেও শংসাপত্র ও স্মারক দিয়ে সম্মানিত করা হয়। অনুষ্ঠানের অন্তিম পর্বে কবিতা উৎসবে কবিতা পাঠ করেন আকাশবাণী কলকাতার ঘোষক বরুন দাশ,উত্তম মন্ডল, স্বপন কুমার মন্ডল,সংহিতা চক্রবর্তী বিশ্বাস,আঁখি রায়, তৃষ্ণা ঘোষ,সোমনাথ রাণা,রাজেশ চট্টপাধ্যায় প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন সুকণ্ঠী দীপান্বিতা গুহ সরকার।এদিনের এই সাহিত্য, ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে দেড় শতাধিক কবি,সাহিত্যিক,গবেষক,
প্রাবন্ধিক,সাহিত্য ও সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের উপস্থিতিতে সমগ্র অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে মাঙ্গলিক ও নান্দনিক।