পাকিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন আনোয়ারুল হক কাকার। রোববার (১৩ আগস্ট) শপথ নেবেন তিনি।আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা যায়।
চলতি বছরের অক্টোবরে ২৩ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার দেশ পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালনের জন্য শনিবার (১২ আগস্ট) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে আনোয়ারুল হক কাকারের নাম ঘোষণা করেছে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ এবং বিরোধী দলীয় নেতা রাজা রিয়াজ তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আনোয়ারুলকে নিয়োগের বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। তার নাম ঘোষণার পরই দেশটির বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
পাকিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে আনোয়ারুল হক কাকারের নাম ঘোষণার পরই তাকে নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। কেন তাকেই এই পদে বসানো হলো তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, আঞ্চলিক দল থেকে সিনেট সদস্য নির্বাচিত হলেও পাকিস্তানের মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে আনোয়ারুল হক কাকারের। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবি ছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হতে হবে পাকিস্তানের ছোট কোনো প্রদেশ থেকে। এছাড়া, পাকিস্তানের প্রায় সব দলের কাছেই গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে আনোয়ারুল হক কাকারের। আনোয়ারুল কাকার ২০১৮ সালে বেলুচিস্তান থেকে ছয় বছরের জন্য সিনেটর নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালের মার্চে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। পাশাপাশি তিনি প্রবাসী পাকিস্তানি ও মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সিনেটের স্থায়ী কমিটির চেয়ারপারসন। একই সঙ্গে তিনি ব্যবসায়ী, উপদেষ্টা কমিটি, অর্থ ও রাজস্ব, বৈদেশিক বিষয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক কমিটিরও সদস্য। ২০১৮ সালে গঠিত হয় বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি। তিনি সিনেটে এই দলের সংসদীয় নেতার দায়িত্বও পালন করেন। পাঁচ বছর ধরে তিনি এ দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তারপরও মাত্র পাঁচ মাস আগে দলটি তার স্থলে নতুন নেতৃত্ব বেছে নেয়। আনোয়ারুল বরাবরই বেশ সক্রিয় রাজনীতিবিদ। উচ্চ কক্ষে নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হামিদ মীর জিও নিউজকে বলেন, রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও আনোয়ারুলকে দেশের একজন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী হিসেবে গণ্য করা হয়। বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টির এই আইনপ্রণেতা পশতুন জাতিগোষ্ঠীর হওয়ায় পশতুন ও বেলুচ উভয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন।
২০০৮ সালে জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে কোয়েটা থেকে পিএমএল–কিউ–এর হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি। রাজনীতিবিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানে ডিগ্রিধারী আনোয়ারুল বেলুচিস্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৭১ সালে বেলুচিস্তানের কিল্লা সাইফুল্লাহ জেলার মুসলিমবাগ এলাকায় জন্ম নেয়া আনোয়ারুল নিজ শহরে স্কুলে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন।
জাতীয় এবং ধর্মীয় বিভিন্ন ইস্যুতে মধ্যপন্থী এবং বাস্তববাদী হিসেবে পরিচিত কাকার ।পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি এবং জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংলাপ ও সমন্বয়ের বিষয়ে তিনি বরাবরই আওয়াজ তুলে আসছেন। এছাড়া বেলুচিস্তান প্রদেশে বৃহত্তর উন্নয়ন প্রকল্প এবং বিনিয়োগের বিষয়ে তিনি নিয়মিত দাবি জানিয়ে আসছেন। প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও পাকিস্তানের সবচেয়ে গরিব এবং অবহেলিত প্রদেশ এখনো বেলুচিস্তান।