রকিবুল ইসলাম রুবেল,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ  ১২ বছর আগে চীন হতে আনা ইউরিয়া সার জমাট বেঁধে নষ্ট হয়ে পড়ে ছিল মহেন্দ্র নগর বাফার গোডাউনে । সেই পরিত্যাক্ত সার অতি গোপনে মেশিনে গুড়া করে বিসিআইসির নতুন বস্তায় রিপ্যাকিং করে মাঠ পর্যায়ে কৃষকের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে।

জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের মেয়াদে প্রায় ২৩ লাখ মেঃটনঃ ইউরিয়া সার জরুরি ভিত্তিতে চীন হতে আমদানি করা হয়। সেই সময়ের প্রায় ৭ হাজার মেঃটঃ ইউরিয়া সার প্রায় ১২/১৫ বছর ধরে মহেন্দ্র নগর সরকারি বাফার গোডাউনে রহস্যজনক কারণে অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে ছিল। মেয়াদ উত্তীর্ণ সারের বস্তা গোপনে বাফারের ভিতরে নতুন বস্তায় ভরে রিপ্যাকিং করে কৃষকের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। কৃষক বুঝতেই পারে না।

 এতে কৃষককে প্রতারিত করা হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে কৃষি উৎপাদনে। সার মনিটরিং ব্যবস্থায় কোন নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। মহেন্দ্র নগর বাফার গোডাউনে জমাট বাঁধা ইউরিয়া সার শক্ত হয়ে পাথর হয়ে গেছে। বড়বড় হাতুডি পিটিয়ে ভেঙ্গে মেশিনে পাউড়ার করে বস্তায় ভরা হচ্ছে। সাদা রং পরিবর্তন হয়ে কালচে কালো রং ধরেছে। সারের গুণগত মান নষ্ট হয়ে গেছে। নিম্নমানের ইউরিয়া সার বাফার গোডাউনের ভিতরে শ্রমিকরা বিদ্যুৎ চালিত ধান ভঙ্গানো হলার মেশিনে গুড়া করছে। পুনরায় বিসিআইসির নতুন বস্তায় রিপ্যাকিং করে সার ডিলারদের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে কৃষকের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে।

ডিলার গণ নিম্নমানের রিপ্যাকিং করার সার নিতে অনিহা প্রকাশ করে আসছে সব সময় কিন্তু কোন কাজে আসছে না। বিসিআইসি ডিলার ও সার ডিলার সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ আব্দুল হাকিম জানান, জমাটবদ্ধ নিম্নমানের সার মাঠ পর্যায়ে কৃষক নিতে চায় না। সারের বস্তা পাউডারে হয় যায়। কৃষক জমিতে প্রয়োগে হারবেষ্ট কম হয় বলে কৃষক অভিযোগ করে আসছে।

মহেন্দ্র নগর বাফার গোডাউন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৮ হাজার মেঃ টন ইউরিয়া সারের মজুদ অবিক্রীত অবস্থায় ছিল।এক যুগের বেশী সময় ইউরিয়া সার পড়ে থাকায় জমাট বেঁধে পাথর মত শক্ত হয়ে যায়। বিবর্ণ রং হয়ে যায়। এখন মজুদ কমে ৪/৫ শতে এসে দাঁড়িয়েছে। সব জমাট বাঁধা সার গুড়া করে নতুন ব্যাগে ভরে বিক্রি করা হয়েছে জানান, বাফার গোডাউন ইনচার্জ এফএমএ তাহের। এই জমাটবাধা সারের মজুদ প্রায় ৭ হাজার টন ছিল বলে জানান।

সূত্রে জানা গেছে, দেশের ২৪ টি বাফার গোডাউনের কোটি কোটি টাকা মূল্যের সার লোপাট হয়েছে।

২০১৫ সালে বিসিআইসির অতিরিক্ত প্রধান ব্যবস্থাপক (বিপনন) মঞ্জুর রেজার কে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত টিম হয়। সারের বাস্তব মজুদ ও ওজন পরিমাপ করতে। সেই সময় মহেন্দ্র নগর বাফার গোডাউনে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে ৪ সদস্যের দন্ত টিম করা হয়ে ছিল কিন্তু রহস্যজনক কারণে সারের মজুদ , ওজন পরিমাপ ও মেয়াদ উত্তীর্ণের ঘটনাটি চাপা থাকে যায়। সেই কমিটির রিপোর্ট আজও সূর্যের আলো মুখ দেখেনি।

বিসিআইসি সূত্রে জানা গেছে, এই সার লুটের বিষয়টি নিয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ খুবই সোচ্চার ছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর সারা দেশের ২৪ টি বাফার গুদামের জন্য পৃথক পৃথক তদন্ত টিম করে দেয়। প্রধান ছিলেন একজন নিবার্হী ম্যাজিষ্ট্রেট। সদস্য ছিল ৪ জন। বর্তমানে দেশে বেড়ে বাফার গোডাউন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ টি। দেশে পর্যাপ্ত পরিমান উরিয়া সার মজুদ থাকলেও প্রতি বস্তা ইউরিয়া সারের এক/ দুই শত টাকা বেশী দামে কৃষককে কিনতে হচ্ছে। এরপর ভারতে ৫০ কেজি ইউরিয়া সারের দাম বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশী। এই সুযোগে বৈদেশিক মুদ্রায় কেনা সার চোরাই পথে ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ মাসের ভারতে পাচারে সময় সদর উপজেলার কুলাঘাট হতে একশত বস্তা ইউরিয়া সার সহ দুই জনকে আটক করে এনএসআইয়ের নেতৃত্বে পুলিশ। মহেন্দ্র নগর বাফার নিয়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত প্রয়োজন। বেড়িয়ে আসবে চাঞ্চল্যকর তথ্য ও থলের বিড়াল। ২০১৪ সালের পর হতে চীনের ইউরিয়া স্যার বাংলাদেশে আমদানি স্থগিত রয়েছে। কারণ এই চীনের সারে গুণগত মান নিম্নমানের।

বাফার নিয়ন্ত্রণে গোডাউন লোড- আনলোডের দ্বন্দ চরমে।

জেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সামীম আশরাফ জানান, কৃষি বিভাগ শুধু সারের চাহিদা দেয়। সারের মাননিয়ন্ত্রন, সরবরাহ, বাজার সরকারে বিভিন্ন দপ্তর পালন করে। পর্যাপ্ত সার মজুদ রয়েছে দাম বাড়ার কেন বাড়বে।লালমনিরহাট জেলার জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর জানান, সার রিপ্যাকিংয়ের বিয়ষটি খোঁজ নিতে লোক পাঠিয়েছি। জেলায় সার সংক্রান্ত মনিটরিং কমিটি রয়েছে। তারা বিষয়টি দেখার কথা। দেশে এই মূহূর্তে পর্যাপ্ত পরিমান ইউরিয়া সার সহ অন্যান্য সার মজুদ রয়েছে।