বসে নেই যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও। এরই মধ্যে বিদেশি কূটনীতিকদের বেশ কয়েকটি দল ঢাকা সফর করেছে। এসব সফরে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সুস্ঠু ও অবাধ করার কথা বলেছে তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নয়াদিল্লির বক্তব্য, ঢাকায় সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হোক সেটা ওয়াশিংটনের মতো ভারতও চায়। কিন্তু যেভাবে শেখ হাসিনা সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে, তা প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসাবে ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য ইতিবাচক নয়। নয়াদিল্লি আরও মনে করে, জামায়াতে ইসলামীকে ‘রাজনৈতিক ছাড়’ দেয়া হলে অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা মৌলবাদের দখলে চলে যাবে। যেটুকু উদার পরিবেশ রয়েছে, তা-ও আর থাকবে না। তিন সপ্তাহ পরই নয়াদিল্লিতে বৈঠকে বসবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগে যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের এই বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়ার পরই এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভারতের উত্তরপূর্ব সীমান্ত অঞ্চলে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তালেবান এখন আফগানিস্তানের ক্ষমতায়। মনে করা হচ্ছে, দেশটির নারী, শিশু ও সংখ্যালঘুদের কথা বিবেচনা না করেই ওয়াশিংটন আফগানিস্তান নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে চুক্তি সেরেছিল, এখন যার ফল ভুগতে হচ্ছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করছে, কাবুলের পাশাপাশি ভারতের অন্য প্রতিবেশীদের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিও নয়াদিল্লির জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে অস্বস্তি বাড়াচ্ছে। ভারতের সঙ্গে দীর্ঘতম স্থলসীমান্ত রয়েছে বাংলাদেশের। ফলে দেশটির যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি ভারতেও প্রভাব ফেলে।
কূটনৈতিক সূত্রের মতে, নয়াদিল্লি এ কথাই জো বাইডেন প্রশাসনকে জানিয়েছে যে, জামায়াতকে আস্কারা দিলে একদিকে যেমন ভারতের আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস বাড়তে পারে, তেমনই চীনের প্রভাব বাংলাদেশে অনেকটাই বেড়ে যাবে; যা ওয়াশিংটনেরও কাঙ্ক্ষিত নয়।
মনে করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র জামায়াতকে বরাবর রাজনৈতিক ইসলামিক সংগঠন হিসেবেই দেখানোর চেষ্টা করে। মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে তাকে তুলনা করে মার্কিন প্রশাসন। কিন্তু বাস্তবে জামায়াত যে উগ্র-মৌলবাদী সংগঠন এবং পাকিস্তানের হাতে তামাক খায়, এ বিষয়ে নিশ্চিত নয়াদিল্লি।
চলতি বছরের মে মাসে শুধুমাত্র বাংলাদেশের জন্য পৃথক একটি ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে জো বাইডেন প্রশাসন। কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ভিসা নীতিকে উচিত বলে মনে করছে না নয়াদিল্লি। এই নতুন ভিসা নীতির ফলে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন যারা বানচাল করার চেষ্টা করবে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অধিকার পাবে না।
কূটনৈতিকরা মনে করছেন, মার্কিন প্রশাসন সরাসরি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলাতেই নিজের দেশের আইন প্রয়োগ করে দেশটির জন্য পৃথক ভিসা নীতি গ্রহণ করেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নয়াদিল্লি সফর করে। সফরে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব তথা কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে তারাও বার্তা দিয়েছেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রশ্নে বিএনপি-জামায়াত জোট বিপজ্জনক।
প্রতিনিধি দলের নেতা বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে একটি ইতিবাচক বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের ঠিক পরই তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতকে এটাই বলেছি যে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা উভয় রাষ্ট্রের জন্যই জরুরি। শেখ হাসিনা সরকার এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে বাংলাদেশের মাটিকে ভারত-বিরোধী কার্যকলাপে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।’