গত বছরের মে মাসের পর রাশিয়া প্রায় ৬ মাস উল্লেখযোগ্য কোনো অভিযান পরিচালনা করেনি ইউক্রেনে। ফ্রন্টলাইন স্থির রাখাই ছিল রুশ সেনাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। তবে সেই সুযোগের দারুণ ব্যবহার করেছে ইউক্রেন। খারকভ এবং খেরসন অঞ্চলের বহু এলাকা রাশিয়ার কাছ থেকে তারা ছিনিয়ে নিয়েছে। শোনা যাচ্ছিল, শীত বাড়লেই কেবল রাশিয়া আবারও আক্রমণ শুরু করবে। এবার মনে হচ্ছে, রাশিয়ার সেই উইন্টার অফেন্সিভ পুরোদমে শুরু হয়েছে।২০২৩ শুরু হতেই ইউক্রেনের কাছ থেকে সোলেদার শহর দখল করে নিয়েছে রুশ বাহিনী। দনেতস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইন সবথেকে শক্তিশালী এই সোলেদার-বাখমুত এলাকায়। সোলেদারের পর এবার বাখমুতকে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে রুশরা। ইউক্রেনীয় সেনাদের পালানোর জন্য এখনও একটি রাস্তা খোলা আছে, সেটি দখলেই লড়াই চলছে এখন। ওই রাস্তাটি রাশিয়ার দখলে চলে গেলে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে বাখমুত।বাখমুতের পতন মানে দনেতস্কে ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইন ভেঙে পড়া। রাশিয়ার জন্য দনেতস্কের বাকি এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়া সহজ হয়ে যাবে।
কিন্তু সকলের চোখ যখন বাখমুতে তখন হঠাৎ করেই জাপোরিঝিয়া ফ্রন্টকে সচল করেছে মস্কো। গত ছয় মাসে এই ফ্রন্টে কোনো পরিবর্তন আসেনি। না ইউক্রেন এগিয়েছে, না রাশিয়া। তবে এবার দ্রুত কয়েকটি সেটেলমেন্ট দখলে নিয়েছে রুশ বাহিনী। তাদের টার্গেট এখন এই অঞ্চলের দুটি প্রধান শহর দখলে নেয়া। জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকাই রাশিয়ার অধীনে। তবে বেশ কয়েকটি বড় শহর এখনও ইউক্রেনের অধীনে রয়ে গেছে।
অঞ্চলটির এক কর্মকর্তা ভ্লাদিমির রোগভ জানান, রুশ বাহিনী এখন ওরিখিভ এবং হুলিয়াপোল শহর দখলে এগিয়ে যাচ্ছে। ওরিখিভ হচ্ছে জাপোরিঝিয়ার রাজধানী শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে। রাজধানী এখনও ইউক্রেনের অধীনেই রয়েছে। রোগভের ভাষায়, ফ্রন্ট এখন সচল। যুদ্ধ চলছে, সবকিছু আমাদের (রাশিয়ার) হাতে রয়েছে। এদিকে রাশিয়ার সেনাবাহিনীও দাবি করেছে, জাপোরিঝিয়াতে অফেন্সিভ শুরুর পর তারা সুবিধাজনক লাইনগুলো দখল করেছে। এছাড়া এ অঞ্চলের ইউক্রেনীয় অবস্থানেও সমানে গোলা ছুঁড়ছে মস্কো। রোববার ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, জাপোরিঝিয়ায় মোট ১৫টি সেটেলমেন্ট আক্রান্ত হয়েছে।
এই সপ্তাহের প্রথমে ওরিখিভ দখলে আক্রমণ শুরুর ঘোষণা দেয়া হয় । এরপরই দনিপার নদীর তীরবর্তী লোবকোভ গ্রাম দখল করে রাশিয়া। এটিই ছিল মাসের পর মাস বসে থাকার পর এ অঞ্চলে প্রথম রুশ অগ্রসর। দিন যত যাচ্ছে যুদ্ধ তীব্র হচ্ছে সেখানে। অথচ এতদিন এই ফ্রন্ট ছিল সবথেকে শান্ত। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এক বিতর্কিত গণভোটের মধ্য দিয়ে জাপোরিঝিয়াসহ চার অঞ্চলকে নিজের সঙ্গে যুক্ত করে রাশিয়া। তবে এখনও এই অঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা ইউক্রেনের দখলে রয়ে গেছে।
এদিকে দনেতস্ক ও জাপোরঝিয়ায় রাশিয়ার অগ্রসর নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে ইউক্রেন। দেশটি বারবার বলছে, রাশিয়াকে থামানোর জন্য যথেষ্ট অস্ত্র নেই তাদের কাছে। এ জন্য দরকার পশ্চিমা ট্যাংক ও আধুনিক সমরাস্ত্র। কিন্তু জার্মানি এতদিন ইউক্রেনকে ট্যাংক দেয়া আটকে রেখেছিল। তবে দেশটি এখন বলছে, নিজেরা ট্যাংক দিতে না পারলেও পোল্যান্ড যদি ইউক্রেনকে ট্যাঙ্ক দেয় তাহলে জার্মানি তাদের আটকাবে না। ইউক্রেন বহুদিন ধরেই জার্মানির তৈরি লিওপার্ড-২ ট্যাঙ্ক চাইছে। কিন্তু জার্মানি নিজেতো ট্যাংক দিচ্ছেই না, অন্য যাদের কাছে লিওপার্ড বিক্রি করেছিল সেগুলোও ইউক্রেনে পাঠানো আটকে রেখেছিল। তবে এবার আর অন্য দেশগুলোর সামনে বাধা থাকলো না। রোববার জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেন, পোল্যান্ড যদি ট্যাংক পাঠাতে চায় তাহলে জার্মানি তাতে নাক গলাবে না। পোল্যান্ড যা করবে, জার্মানি তা মেনে নেবে। কারণ মানুষের জীবন আগে। ইউক্রেনের মানুষকে বাঁচানোই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় কর্তব্য।