শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১০ অপরাহ্ন
নোটিশ
যে সব জেলা, উপজেলায় প্রতিনিধি নেই সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। বায়োডাটা সহ নিউজ পাঠান। Email: newssonarbangla@gmail.com

মহাসংকটে ব্রিটিশ অর্থনীতি

Reporter Name
Update : সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২২, ১২:১৭ অপরাহ্ন

অপুষ্টি, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, অর্থনৈতিক সংকটের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই যে কারও মাথায় আসতে পারে সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান কিংবা আফ্রিকার সংকটবিধ্বস্ত দেশগুলোর নাম। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে বদলে যাওয়া বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে এ তালিকায় যোগ হচ্ছে তথাকথিত উন্নত অনেক দেশও। ইতোমধ্যে আলোচনায় উঠে আসছে যুক্তরাজ্যের নাম।

বিভিন্ন প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ৪০ লাখের বেশি শিশুসহ ব্রিটেনের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ অপুষ্টির শিকার। কারণ প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকেই, কেউ কেউ আবার না খেয়েই দিন পার করছেন। গেল ১৮ অক্টোবর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে শুধু গত মাসেই প্রতি চারটি পরিবারের মধ্যে একটি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়েছে। কেবল অস্বচ্ছলরাই নন, দেশের অর্থনৈতিক সংকট প্রভাবিত করছে মধ্যবিত্ত ব্রিটিশদেরও।

খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা 

যুক্তরাজ্যে খাদ্য নিরাপত্তা নেই নতুন অভিবাসীদেরও। কারণ তাদের বেশিরভাগকেই রাষ্ট্রীয় কল্যাণমূলক সুবিধার অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। যদিও ২০১০ সাল থেকেই তথাকথিত ‘মিতব্যয়ী’ ব্যবস্থার অধীনে নাগরিকদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা কমাতে শুরু করে ব্রিটিশ সরকার।

এর ফলে পরিবারের জন্য খাবার জোগাড় করতে বেসরকারি দাতব্য সংস্থাগুলোর দিকে ঝুঁকেছেন অনেকে। সম্প্রতি দুই হাজারের বেশি ব্রিটিশ ফুড ব্যাংকের এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জরুরি খাদ্য সহায়তার চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। যুক্তরাজ্যের অন্যতম বড় দাতব্য সংস্থা ট্রসেল ট্রাস্টের তথ্য বলছে, ২০০৮ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বিতরণ করা জরুরি খাবার পার্সেলের হার বেড়েছে ৫ হাজার ১৪৬ শতাংশ।
সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন, পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে স্কুল থেকে একবেলা পাওয়া বিনামূল্যের খাবারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে অনেক শিশু শিক্ষার্থী।

মহাসংকটে পশ্চিমা অর্থনীতি 

করোনা মহামারি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, যার প্রভাব পড়েছে বিশ্বজুড়ে। কিন্তু শক্তিশালী বা স্থিতিশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচিত যুক্তরাজ্যের পরিস্থিতি এতটা টালমাটাল হলো কীভাবে? মাত্রাতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল নিয়ে দুর্ভোগ ও আবাসন সংকটে থাকা নিম্ন-আয়ের গোষ্ঠীর জন্য কেন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না ব্রিটিশ সরকার?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ব্রিটেন নয়, গোটা ইউরোপ ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে; যার জন্য তারা প্রস্তুত ছিল না। এমনকি সংকট রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রেও।

যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন উইনস্টন চার্চিল। ১৯৪১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে প্রবেশ চার্চিলকে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। তার সুকৌশলী যুদ্ধনীতি ও মিত্রপক্ষের সম্মিলিত জোটের কাছে জার্মান বাহিনী পরাজিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে সামাজিক সংস্কারের পরিকল্পনা করেন চার্চিল। কিন্তু জনসাধারণকে তা বোঝাতে না পারায় ১৯৪৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে পরাজিত হন তিনি। এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতা চলে যায় সর্বহারা শ্রেণির নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে।

এরপর সব ইউটিলিটি এবং পরিষেবা হয় রাষ্ট্র মালিকানাধীন। প্রতিটি কাজের জায়গায় করা হয় ইউনিয়ন, মজুরি বৃদ্ধির জন্য বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা শুরু হয় সরকারের। একপর্যায়ে রাজ শাসনের অবসান হলেও, মন্দার মুখে পড়ে বাণিজ্যিক বিভিন্ন শহর-বন্দর।

পরিস্থিতির অবনতি 

পেছন ফিরে তাকালে দেখা যায়, সমাজতন্ত্রের নির্মিত কাঠামো যুদ্ধের পর দরিদ্র ব্রিটিশ নাগরিকদের তিন দশকের কর্তৃত্ব দিয়েছিল।

কিন্তু দেশটির বর্তমান পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে। ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যের জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৩.৩ শতাংশ, ২০২৩ সালে ০.২ শতাংশ এবং ২০২৪ সালে ১ শতাংশ। এছাড়া শুধু ২০২২ সালেই মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে দাঁড়াবে ১৩ শতাংশ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশটির মুদ্রাস্ফীতির হার বিগত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এর ফলে ব্রিটেনজুড়ে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েই চলেছে, ব্রিটিশ পাউন্ডের দাম কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কনজারভেটিভদের ব্যর্থতার সুযোগে আগাম জাতীয় নির্বাচনের দাবি তুলেছে প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার পার্টি। বিভিন্ন জরিপের তথ্য বলছে, লেবার পার্টির জনপ্রিয়তাও আগের চেয়ে বেড়েছে। এছাড়া যুক্তরাজ্য ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে গণভোটের কথা বলছে স্কটল্যান্ড। উত্তর আয়ারল্যান্ডও ইউরোপীয় ইউনিয়নে ফিরে যেতে আগ্রহী।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্রিটেনের জন্য সামনে হয়তো আরও কঠিন পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। 

দীর্ঘমেয়াদী সংকটে নিম্ন-আয়ের ব্রিটিশরা 

খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি যুক্তরাজ্যে বেশ আগে থেকেই উপেক্ষিত। ইউরোপে ২০০৬ সালের শেষের দিকে বাড়তে শুরু করে ‘খাদ্য মূল্যস্ফীতি’, ২০০৮ সালের বৈশ্বিক মন্দার পর যা আরও খারাপ হয়। মূলত সেখান থেকেই নিম্ন-আয়ের ব্রিটিশদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সমস্যায় রূপ নেয় খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি।

থিংক ট্যাংক ফুড ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুসারে, ২০১৪ সালে প্রায় প্রতিদিনই ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন পার করতেন যুক্তরাজ্যের ৮৪ লাখের বেশি মানুষ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By Uttoron Host