সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:২৮ অপরাহ্ন
নোটিশ
যে সব জেলা, উপজেলায় প্রতিনিধি নেই সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। বায়োডাটা সহ নিউজ পাঠান। Email: newssonarbangla@gmail.com

রাষ্ট্রদূত সহিদুল বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফিরিয়ে আনতে তৎপর ছিলেন না

Reporter Name
Update : শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২২, ১০:১০ পূর্বাহ্ন

বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহিদুল ইসলামকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। এরআগে এই পদে তিনি থাকতে চাচ্ছেন না বলে আবেদন করেছিলেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে এমন তথ্যই দেয়া হয়েছে।

গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে তিনি নিয়োগ পান বছর দুয়েক আগে। তখন তিনি বিমসটেকের মহাসচিব ছিলেন। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। এরআগে তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের উপমিশনপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।


র‌্যাব ও সংস্থাটির সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর ওয়াশিংটনে চুক্তিতে থাকা সহিদুলকে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। তখন দিল্লিতে নিযুক্ত হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরানকে ওয়াশিংটনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারের দায়িত্ব পান।

তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এরইমধ্যে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অ্যাগ্রিমো (তাকে গ্রহণে আপত্তি নেই মর্মে পত্র) পাঠানো হয়েছে।

সহিদুলকে ফিরিয়ে আনার খবর আসে গেল মে মাসের শেষদিকে। এরপর বছরের পাঁচ মাস চলে যায়। কিন্তু তাকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছিল না। বরং তিনি যখন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের পদে থাকতে অনিচ্ছার কথা জানিয়ে আবেদন করেন, তখনই তাকে ফেরত আনা হয়েছে।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পররাষ্ট্র ক্যাডার হিসেবে ১৯৮৫ সাল থেকে সহিদুলের ক্যারিয়ার শুরু। তিনি ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করেছেন। দক্ষিণ কোরিয়া ও ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন সহিদুল। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত কলকাতায় বাংলাদেশ মিশনেও ছিলেন তিনি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমেরিকাস, প্যাসিফিক অ্যান্ড কাউন্টার-টেরোরিজম অ্যান্ড ইউরো উইংয়ের মহাপরিচালক ছিলেন সহিদুল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে মাস্টার্স করেন এই কূটনীতিক।


সাবেক ছাত্রদল নেতা সহিদুল
সহিদুল ইসলাম একজন ক্যারিয়ার ডিপ্লোম্যাট হিসেবে পরিচিত হলেও, তিনি আওয়ামী লীগবিরোধী পরিবারের সদস্য। তার পরিবারের সদস্যরাও আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনীতিতে যুক্ত রয়েছেন। জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। এমনকি ছাত্রদল থেকে হল সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

ছাত্রশিবিরে সক্রিয় ছিল তার ছোট ভাই কামরুল ইসলাম। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ১৯৮৯ সালে তিনি এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। পরের বছর ১৯৯০ সালের ইকসু নির্বাচনে তিনি জিএস পদে দাঁড়ান। তার বড় ভাই জাহিদুল ইসলাম ব্যবসায়ী। তিনি আওয়ামীবিরোধী ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। সহিদুলের বাড়ি গোপালগঞ্জে হলেও, তারা আওয়ামীবিরোধী রাজনীতিতে সক্রিয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তার শ্বশুরবাড়িতে একই রকম চর্চা হয়ে আসছে।

এ রকম একজন ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব দেয়া নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল। এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়।

বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা বৃদ্ধি
খবরে বলা হয়, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই মার্কিন প্রশাসনে বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা প্রবল হয়ে ওঠে।

তার আগে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন। ২০১৪ সালের জুন থেকে তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে তার মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়। জিয়াউদ্দিন যখন দায়িত্বে ছিলেন, তখন মার্কিন প্রশাসনে যেভাবে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সহিদুল ইসলামকে তেমন কিছু করতে দেখা যায়নি।

জিয়াউদ্দিনের সময়ে মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এবং কার্যক্রম যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল, সহিদুলের তৎপরতা তার ধারেকাছেও ছিল না। বরং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে রুটিন কাজের মধ্যে সীমিত ছিল তার তৎপরতা।

তার সময়ে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ পায়নি বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের দূতাবাস তখন কী করেছে, অনেকের মধ্যেই সেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল।

র‌্যাব ও সংস্থাটির সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগ নিষেধাজ্ঞা দিলেও তার আগে-পরে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মানুষের মন থেকে সেই রহস্য এখনো কাটেনি।

এরইমধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে নতুন নীতিমালা ঘোষণা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন। বাংলাদেশকে চাপে রাখতে সেই কৌশল ব্যবহার করা হবে বলে বিভিন্ন মহল থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ মিশনের কোনো উল্লেখযোগ্য তৎপরতা দেখা যায়নি।


এটিকে অনেকেই সর্ষের মধ্যে ভূত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কোটি কোটি টাকা খরচ করে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করছে জামায়াত-বিএনপি। বাংলাদেশবিরোধী কার্যক্রমগুলো মার্কিন প্রশাসনের কাছে তুলে ধরতেই তারা এসব করছে। যুক্তরাষ্ট্র যাতে বাংলাদেশবিরোধী পদক্ষেপ নেয়, বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দেয়—সে জন্যই এসব লবিস্ট নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।

বিপরীতে দূতাবাসের কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বরং বিএনপি-জামায়াতের লবিস্টের কারণে মার্কিন প্রশাসনে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক অবস্থান পরিষ্কার হয়ে উঠেছে।

সহিদুলের মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের কোনো সফলতা নেই। এটা কি তাদের অযোগ্যতা, নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত; তা নিয়ে আলোচনা ছিল কূটনৈতিক পাড়ায়। ধারণা করা হচ্ছে, বিএনপি-জামায়াতপন্থি পরিবারের সদস্য হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে তৎপর হতে তার মধ্যে অনীহা কাজ করছিল।

বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনা যায়নি
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের আত্মস্বীকৃত খুনিদের একজন রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। অবস্থান জানা থাকলেও তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। তাকে ফিরিয়ে দিতে ২০১৯ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সংক্রান্ত একটি ফাইল ট্রাম্পের হাতে নিজেই পৌঁছে দেন তিনি।
২০২০ সালের জুনে মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয়সংক্রান্ত মামলার নথি তলব করেছিল। এতে সরকার তাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আশাবাদী হয়। মামলাটি ফের সচল হলে রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দুই বছর মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান সহিদুল ইসলাম। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসেন জো বাইডেন। যে কারণে সেই প্রক্রিয়া অনেকটা থেকে যায়। কিন্তু রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনতে রাষ্ট্রদূত সহিদুল তৎপর ছিলেন না।

ট্রাম্পের সময়ে খুনি রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের মামলা পুনর্বিবেচনার নোটিশ দিয়েছিলেন তখনকার অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার। কিন্তু এরপর আর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। যে কারণে খুনি রাশেদ চৌধুরী এখনো যুক্তরাষ্ট্রে বহাল তবিয়তে অবস্থান করছে।

বাইডেন প্রশাসনে মঈন খানের ভাগনি
মার্কিন কৃষি বিভাগের অধীন পল্লী উন্নয়ন আন্ডার সেক্রেটারির কার্যালয়ে চিফ অব স্টাফ পদে আছেন ফারাহ আহমেদ। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খানের ভাগনি বলে জানা গেছে। বারাক ওবামার প্রশাসনেও গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন ফারাহ। দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়েও কাজ করেছেন তিনি।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কনজ্যুমার এডুকেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এবং কনজ্যুমার ফাইন্যান্সিয়াল প্রটেকশন ব্যুরোর চিফ অপারেটিং অফিসারের সিনিয়র অ্যাডভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মঈন খানের ভাগনি।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লবিস্ট নিয়োগ করেছে বিএনপি। এমন এক পরিপ্রেক্ষিতে বাইডেন প্রশাসনে ফারাহর নিয়োগে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By Uttoron Host