সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:১৫ অপরাহ্ন
নোটিশ
যে সব জেলা, উপজেলায় প্রতিনিধি নেই সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। বায়োডাটা সহ নিউজ পাঠান। Email: newssonarbangla@gmail.com

চীনকে ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র কি বাংলাদেশকে ঝুঁকিতে ফেলতে চায়?

Reporter Name
Update : সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০২২, ১০:২৭ পূর্বাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মধ্যে ২০০৭ সালে অনানুষ্ঠানিক কৌশলগত সামরিক জোট গঠিত হয়। এই জোটকে অভিহিত করা হয় দ্য কোয়াড্রিলেটারাল সিকিউরিটি ডায়ালগ নামে। সংক্ষেপে কিউএসডি বা কোয়াড। মূলত, ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় চীনের প্রভাব রুখতে কোয়াডের আবির্ভাব। সম্প্রতি বাংলাদেশেও ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে কোয়াড ইস্যুটি।

কোয়াড গঠনের শুরুতেই ভারতের উদ্যোগে বঙ্গোপসাগরে আয়োজিত ‘মালাবার নৌমহড়ায়’ যোগ দেয় জোটের চার দেশ। দুই মহাসাগর বেষ্টিত এই বিশাল সমুদ্র অঞ্চলে অবাধ ও মুক্ত নৌচলাচল নিশ্চিত করতে নিয়মিত মহড়া চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় তারা। এসব কারণে শুরু থেকেই চীন এই জোটের ব্যাপারে বেশ উদ্বিগ্ন ও ক্ষিপ্ত।

গেল বছরের ১০ মে ডিপ্লোমেটিক করসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ডিক্যাব) সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং কোয়াডে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের বিষয়ে সতর্ক করেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ যদি কোয়াডে যুক্ত হয়, তাহলে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হবে। চীনের রাষ্ট্রদূতের এ বক্তব্যের পরই বিষয়টি দেশীয় গণমাধ্যমের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়।

স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ কোনো সামরিক জোটে যুক্ত হয়নি। কোয়াডে যোগ দেয়ার ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশ এ মুহূর্তে কোয়াডে যোগ দেয়ার কথা ভাবছে না। এমনকি কোয়াডের অন্য সদস্যদের থেকে সেখানে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ বা প্রস্তাবও আসেনি। তবে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ পছন্দমতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ ব্যাপারে অন্য কোনো দেশ কিছু বলার বা বাধা দেয়ার অধিকার রাখে না।

চীনের প্রায় সম্পূর্ণ সমুদ্রমুখী অংশকে ঘিরে রেখেছে এই জোট। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, উভয় প্রশাসনই কোয়াডকে ধাপে ধাপে চীনবিরোধী ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক জোটে রূপান্তর করে। চীন বরাবরই দাবি করে আসছে, কোয়াড মূলত ‘এশীয় ন্যাটো’ গঠনের প্রচেষ্টার অংশ।

ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যান্য দেশকে এই জোটে অন্তর্ভুক্ত করতে ‘কোয়াড প্লাস’ গঠনের আলাপ-আলোচনাও চলছে। ‘কোয়াড প্লাস’ শীর্ষক একটি বর্ধিত সম্মেলনও করেছে জোটটি। যে সভায় অংশ নিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। ভবিষ্যতে জোট সম্প্রসারণ বা অংশীদারত্বের ভিত্তি তৈরিতে কোয়াড প্লাসের রূপরেখা অনুসরণ করতে পারে জোটটি। কোয়াড প্লাস হলে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র আরও অনেক দেশেরই সেখানে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সংবিধান অনুযায়ী, যেকোনো দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্কে বিশ্বাসী বাংলাদেশ।

কোয়াড প্রসঙ্গে চীনের কড়া অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে এ অঞ্চলে বাণিজ্যিক সম্পর্কের আড়ালে এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক নামে নতুন এক অর্থনৈতিক জোট গঠন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই জোটে বাংলাদেশকে চায় তারা। এ জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে। বাইডেন প্রশাসন প্রথম পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্র্রেলিয়ার সমন্বয়ে অর্থনৈতিক বলয়ের যাত্রা শুরু করতে চাইছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশকে ফ্রেমওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাবও দিয়ে রেখেছে। তবে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত এ নিয়ে আগ্রহ কিংবা অনাগ্রহ কোনোটিই দেখায়নি।

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সুশাসন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সরব হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কূটনীতিকরা মনে করেন, নানা কারণেই বাংলাদেশকে চাপে রাখতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিক জোটে যোগদানে রাজি করানো। মূলত এই জোটে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কোয়াডে অথবা কোয়াড প্লাসে যোগ দেয়ার পথ খুলে যাবে। আর এ জন্য বাংলাদেশ যেন ইন্দো-প্যাসিফিক জোটে যোগদান করে, সে জন্য তৎপরতা বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের মানবাধিকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা বেশ চোখে পড়ার মতো।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে যখন ব্যর্থ হয়, তখনই মানবাধিকার ও সুশাসনের বুলি আওড়ানো শুরু করে। অর্থাৎ, একটি দেশকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র‌্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের পাশাপাশি র‌্যাবের সদ্য সাবেক পরিচালক ও নতুন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের নামও সেই তালিকায় রয়েছে।

এ ছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার ‘গণতন্ত্র সম্মেলনে’ বাংলাদেশকে ডাকেননি। গত এপ্রিলে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী নিপীড়ন ও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি ভোগ করে আসছে। প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় থাকার সময়সীমায় বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের দাবি করা হয়েছে।

৬ অক্টোবর র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে সমস্যা থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র সময়-সময় আমাদের ওপর নানা নিষেধাজ্ঞা ও একসময় জিএসপি বাদ দিল। অনেক সময় নানা ঘটনা ঘটায়। দুর্ভাগ্যজনক হলো, আমার দেশেরই কিছু লোক, তারা যেসব অঙ্গরাজ্যে থাকেন, সেখানকার সিনেটর-কংগ্রেসম্যানের কাছে নানা মিথ্যা তথ্য দেন। যারা এগুলো করে, তারা অপকর্ম করেই দেশ ছাড়ে। কোনো না কোনো অপরাধে তারা অপরাধী অথবা চাকরিচ্যুত।’

শেখ হাসিনার মতে, র‌্যাব সৃষ্টি হয়েছে আমেরিকার পরামর্শে। আমেরিকাই তাদের ট্রেনিং দেয়। অস্ত্রশস্ত্র, হেলিকপ্টার এমনকি ডিজিটাল সিস্টেম, আইসিটি সিস্টেম সবই আমেরিকার দেয়া। আমেরিকা যেমন ট্রেনিং দিয়েছে, র‌্যাব তেমন কাজ করেছে।

অন্য দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সোচ্চার হলেও নিজ ভূখণ্ডে প্রতিবছর হাজারেরও বেশি মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে গুলি করে হত্যা করে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। সংবাদমাধ্যম ইউএসএ টুডের দেয়া তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে নাগরিকদের মৃত্যুর ঘটনার অর্ধেকই ওঠে না সরকারি রেকর্ডে। ১৯৮০-২০১৮ সালের মধ্যে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর ৫৫ শতাংশ ঘটনার রেকর্ড নেই সরকারি নথিপত্রে।

যুক্তরাষ্ট্রে হত্যার বিচার হয় না উল্লেখ করে হাসিনা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী র‌্যাব কিংবা পুলিশ হোক, অপরাধ করলে বাংলাদেশে বিচার হয়। কিন্তু মার্কিন পুলিশ ইচ্ছেমতো গুলি করে মারলেও বিচার হয় না। পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার হাত থেকে শিশুরাও রক্ষা পায় না। বিচারও হয় না।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমেরিকার জনগোষ্ঠীর মাত্র ১৩ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ। তবে পুলিশের গুলিতে তাদের মৃত্যুর হার শ্বেতাঙ্গদের থেকে দ্বিগুণেরও বেশি। প্রতি মিলিয়ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে পুলিশের গুলিতে কৃষ্ণাঙ্গদের মৃত্যুর হার ৪১ জন। অপরদিকে শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই হার প্রতি মিলিয়নে মাত্র ১৬ জন।

কোয়াড গঠনের শুরুতেই ভারতের উদ্যোগে বঙ্গোপসাগরে আয়োজিত ‘মালাবার নৌমহড়ায়’ যোগ দেয় জোটের চার দেশ। দুই মহাসাগর বেষ্টিত এই বিশাল সমুদ্র অঞ্চলে অবাধ ও মুক্ত নৌচলাচল নিশ্চিত করতে নিয়মিত মহড়া চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় তারা। এসব কারণে শুরু থেকেই চীন এই জোটের ব্যাপারে বেশ উদ্বিগ্ন ও ক্ষিপ্ত।

গেল বছরের ১০ মে ডিপ্লোমেটিক করসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ডিক্যাব) সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং কোয়াডে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের বিষয়ে সতর্ক করেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ যদি কোয়াডে যুক্ত হয়, তাহলে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হবে। চীনের রাষ্ট্রদূতের এ বক্তব্যের পরই বিষয়টি দেশীয় গণমাধ্যমের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়।

স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ কোনো সামরিক জোটে যুক্ত হয়নি। কোয়াডে যোগ দেয়ার ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশ এ মুহূর্তে কোয়াডে যোগ দেয়ার কথা ভাবছে না। এমনকি কোয়াডের অন্য সদস্যদের থেকে সেখানে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ বা প্রস্তাবও আসেনি। তবে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ পছন্দমতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ ব্যাপারে অন্য কোনো দেশ কিছু বলার বা বাধা দেয়ার অধিকার রাখে না।

চীনের প্রায় সম্পূর্ণ সমুদ্রমুখী অংশকে ঘিরে রেখেছে এই জোট। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, উভয় প্রশাসনই কোয়াডকে ধাপে ধাপে চীনবিরোধী ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক জোটে রূপান্তর করে। চীন বরাবরই দাবি করে আসছে, কোয়াড মূলত ‘এশীয় ন্যাটো’ গঠনের প্রচেষ্টার অংশ।

ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যান্য দেশকে এই জোটে অন্তর্ভুক্ত করতে ‘কোয়াড প্লাস’ গঠনের আলাপ-আলোচনাও চলছে। ‘কোয়াড প্লাস’ শীর্ষক একটি বর্ধিত সম্মেলনও করেছে জোটটি। যে সভায় অংশ নিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। ভবিষ্যতে জোট সম্প্রসারণ বা অংশীদারত্বের ভিত্তি তৈরিতে কোয়াড প্লাসের রূপরেখা অনুসরণ করতে পারে জোটটি। কোয়াড প্লাস হলে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র আরও অনেক দেশেরই সেখানে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সংবিধান অনুযায়ী, যেকোনো দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্কে বিশ্বাসী বাংলাদেশ।

কোয়াড প্রসঙ্গে চীনের কড়া অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে এ অঞ্চলে বাণিজ্যিক সম্পর্কের আড়ালে এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক নামে নতুন এক অর্থনৈতিক জোট গঠন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই জোটে বাংলাদেশকে চায় তারা। এ জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে। বাইডেন প্রশাসন প্রথম পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্র্রেলিয়ার সমন্বয়ে অর্থনৈতিক বলয়ের যাত্রা শুরু করতে চাইছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশকে ফ্রেমওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাবও দিয়ে রেখেছে। তবে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত এ নিয়ে আগ্রহ কিংবা অনাগ্রহ কোনোটিই দেখায়নি।

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সুশাসন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সরব হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কূটনীতিকরা মনে করেন, নানা কারণেই বাংলাদেশকে চাপে রাখতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিক জোটে যোগদানে রাজি করানো। মূলত এই জোটে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কোয়াডে অথবা কোয়াড প্লাসে যোগ দেয়ার পথ খুলে যাবে। আর এ জন্য বাংলাদেশ যেন ইন্দো-প্যাসিফিক জোটে যোগদান করে, সে জন্য তৎপরতা বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের মানবাধিকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা বেশ চোখে পড়ার মতো।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে যখন ব্যর্থ হয়, তখনই মানবাধিকার ও সুশাসনের বুলি আওড়ানো শুরু করে। অর্থাৎ, একটি দেশকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র‌্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের পাশাপাশি র‌্যাবের সদ্য সাবেক পরিচালক ও নতুন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের নামও সেই তালিকায় রয়েছে।

এ ছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার ‘গণতন্ত্র সম্মেলনে’ বাংলাদেশকে ডাকেননি। গত এপ্রিলে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী নিপীড়ন ও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি ভোগ করে আসছে। প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় থাকার সময়সীমায় বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের দাবি করা হয়েছে।

৬ অক্টোবর র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে সমস্যা থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র সময়-সময় আমাদের ওপর নানা নিষেধাজ্ঞা ও একসময় জিএসপি বাদ দিল। অনেক সময় নানা ঘটনা ঘটায়। দুর্ভাগ্যজনক হলো, আমার দেশেরই কিছু লোক, তারা যেসব অঙ্গরাজ্যে থাকেন, সেখানকার সিনেটর-কংগ্রেসম্যানের কাছে নানা মিথ্যা তথ্য দেন। যারা এগুলো করে, তারা অপকর্ম করেই দেশ ছাড়ে। কোনো না কোনো অপরাধে তারা অপরাধী অথবা চাকরিচ্যুত।’

শেখ হাসিনার মতে, র‌্যাব সৃষ্টি হয়েছে আমেরিকার পরামর্শে। আমেরিকাই তাদের ট্রেনিং দেয়। অস্ত্রশস্ত্র, হেলিকপ্টার এমনকি ডিজিটাল সিস্টেম, আইসিটি সিস্টেম সবই আমেরিকার দেয়া। আমেরিকা যেমন ট্রেনিং দিয়েছে, র‌্যাব তেমন কাজ করেছে।

অন্য দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সোচ্চার হলেও নিজ ভূখণ্ডে প্রতিবছর হাজারেরও বেশি মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে গুলি করে হত্যা করে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। সংবাদমাধ্যম ইউএসএ টুডের দেয়া তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে নাগরিকদের মৃত্যুর ঘটনার অর্ধেকই ওঠে না সরকারি রেকর্ডে। ১৯৮০-২০১৮ সালের মধ্যে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর ৫৫ শতাংশ ঘটনার রেকর্ড নেই সরকারি নথিপত্রে।

যুক্তরাষ্ট্রে হত্যার বিচার হয় না উল্লেখ করে হাসিনা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী র‌্যাব কিংবা পুলিশ হোক, অপরাধ করলে বাংলাদেশে বিচার হয়। কিন্তু মার্কিন পুলিশ ইচ্ছেমতো গুলি করে মারলেও বিচার হয় না। পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার হাত থেকে শিশুরাও রক্ষা পায় না। বিচারও হয় না।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমেরিকার জনগোষ্ঠীর মাত্র ১৩ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ। তবে পুলিশের গুলিতে তাদের মৃত্যুর হার শ্বেতাঙ্গদের থেকে দ্বিগুণেরও বেশি। প্রতি মিলিয়ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে পুলিশের গুলিতে কৃষ্ণাঙ্গদের মৃত্যুর হার ৪১ জন। অপরদিকে শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই হার প্রতি মিলিয়নে মাত্র ১৬ জন।সূত্র: সময়


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By Uttoron Host