সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৩৮ অপরাহ্ন
নোটিশ
যে সব জেলা, উপজেলায় প্রতিনিধি নেই সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। বায়োডাটা সহ নিউজ পাঠান। Email: newssonarbangla@gmail.com

বিনা দোষে এক প্রতিবন্ধীর ২ বছর ৯ মাস কারাবাস

মোঃ শাহানুর আলম, স্টাফ রিপোর্টার
Update : বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০২২, ৭:০৩ অপরাহ্ন

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্পষ্ট করে কথা বলতে পারেন না। দেখতে রোহিঙ্গাদের মতো। বয়স আনুমানিক ৪৫ বছর। পুলিশ তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে একটি জিডির আলোকে রাস্তা থেকে আটক করে। তাকে পাঠানো হয় কারাগারে। কেটে যায় দুই বছর নয় মাস। কেউ তার খোঁজ নিতে আসে না। পরিচয়ও মেলেনি। তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল কারা কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন গণ মাধ্যমে খবরটি প্রকাশ পাওয়ায় অবশেষে পরিচয় মিলেছে। সোমবার (২২ আগস্ট) বিকেলে তাকে ঝিনাইদহ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
এ সময় জেল সুপার মো. আনোয়ার হোসেন, জেলার মো. রফিকুল ইসলাম, ডেপুটি জেলার মো. সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, নীলফামারী সদর উপজেলার দক্ষিণ চাওড়া গ্রামের যতিন্দ্র নাথ রায়ের বড় ছেলে মিনাল চন্দ্র রায়। জন্ম থেকে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী তিনি। বয়স বাড়ার সঙ্গে তার শরীরের গঠনের পরিবর্তন হতে থাকে। হয়ে ওঠেন তরতাজা যুবক। কথা বলতে পারেন না। মা মারা যান ২০০৭ সালে। বাবা আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র ঘর বেঁধেছেন। মিনালের ছোট ভাই ভবেশ চন্দ্র রায়। সেও প্রতবন্ধী। মামার কাছে আশ্রয় হয়েছিল তাদের। ৮ বছর আগে হঠাৎ একদিন বাড়ি থেকে হারিয়ে যান মিনাল। সন্ধান করার কেউ থাকে না তার। ভবঘুরে হয়ে এখানে সেখানে ঘুরতে থাকেন।
তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগরবাথান এলাকা থেকে রোহিঙ্গা সন্দেহে পরিচয়হীন হিসেবে মিনালকে আটক করে পুলিশ। এরপর ঝিনাইদহ সদর থানার একটি জিডির সূত্র ধরে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয় তাকে। কিছুতেই পরিচয় মিলছিল না তার। অবশেষে এ নিয়ে ঢাকা টাইমসসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে পরিচয় মিলে তার।
আনোয়ার হোসেন জানান, কারা কর্তৃপক্ষ মানবিক বিষয়টি ঝিনাইদহের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বৈজয়ন্ত বিশ্বাসের নজরে আনে। বিচারক নিজ উদ্যোগে মিনালের আসল ঠিকানা খুঁজে বের করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। বিষয়টি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। গত ৩১ জুলাই অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট টেকনাফ, কক্সবাজার, উখিয়া ভাসানচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছবি পাঠানোর নির্দেশ জারি করেন। একই আদেশে আটক লোকের সঠিক ঠিকানা খুঁজে পেতে নোয়াখালী, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার ও এপিবিএন কমান্ডারদের নির্দেশ দেন তিনি। এর আগে মানসিক ভারসাম্যহীন কিনা, তা পরীক্ষা করাতে খুলনা মেডিকেলেও নেওয়া হয়েছে মিনালকে। জেলা নির্বাচন অফিসে নিয়ে তার হাতের ছাপ গ্রহণ করে বাংলাদেশের নাগরিক কিনা, তাও যাচাই করা হয়। এমনকি বিচারকের উপস্থিতিতে ভিডিও কলের মাধ্যমে টেকনাফ থানা পুলিশের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা দোভাষীর সঙ্গে কথা বলানো হয়। কিন্তু দোভাষীও মিনালের কথা বুঝতে পারেন না।
এতে জেল সুপারসহ সবাই হতাশ হয়ে পড়েন এবং আইনি জটিলতায় মিনালকে সারা জীবন কারাগারেই থাকতে হবে বলে ধরে নেন তারা। তবে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বৈজয়ন্ত বিশ্বাস হাল ছাড়েননি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রচারের উদ্যোগ নেন। গণমাধ্যমের কল্যাণে পরিচয় মিলে যায় তার। পরিবারের দেওয়া তথ্য মতে মানসিক প্রতিবন্ধী মিনালের জন্ম (নিবন্ধন সূত্রে) ১৯৮১ সালের ১১ আগস্ট। পরিচয় পাওয়ার পর মিনালকে তার মামা শ্রী চিরেন্দ্র নাথ রায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাকে কাছে পেয়ে খুশি এলাকার মানুষ। তারাও এসেছিলেন ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে।
মিনালের প্রতিবেশী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, মিনালকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আদালত, গণমাধ্যম এবং কারাকর্তৃপক্ষের ভূমিকার কথা মনে রাখবে।
সোমবার বিকেলে কারারক্ষীরা অশ্রুসিক্ত চোখে বিদায় জানান মিনালকে। স্পষ্টভাবে কথা বলতে না পারলেও মাথা নেড়ে হাসি দিয়ে ভালোবাসার জবাব দিয়েছেন মিনাল।
বাড়ি ফেরার পথে মিনালের মামা শ্রী চিরেন্দ্র নাথ রায় গণমাধ্য কর্মীদের বলেন সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিবেশীদের মাধ্যমে বিষয়টি তাদের নজরে আসে। তখন তারা জানতে পারেন মিনাল ঝিনাইদহ কারাগারে বন্দী আছে।
তিনি বলেন, সাংবাদিকদের কারণে আজ মিনালকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে পেরেছি। মিনালের খবরটি প্রকাশ না হলে হয়তো তাকে আর ফিরে পেতাম না। কারা কর্তৃপক্ষ এবং ঝিনাইদহ অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বৈজয়ন্ত বিশ্বাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন চিরেন্দ্র্র নাথ রায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By Uttoron Host