রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন
নোটিশ
যে সব জেলা, উপজেলায় প্রতিনিধি নেই সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। বায়োডাটা সহ নিউজ পাঠান। Email: newssonarbangla@gmail.com

পুলিশ কনস্টেবলের বিসিএসে উত্তীর্ণের গল্পটাই ভুয়া

Reporter Name
Update : বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২২, ৫:২১ অপরাহ্ন

সম্প্রতি এক পুলিশ কনস্টেবলের বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার গল্প ফলাও করে প্রচার করা হয় দেশের অনেক শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে। কনস্টেবলের চাকরির পাশাপাশি তুমুল প্রস্তুতি নিয়ে বিসিএসের পুলিশ ক্যাডারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় তার এই সংবাদ ভাইরাল হয় ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে। অভিনন্দনের বন্যায় ভাসেন তিনি।

তবে সপ্তাহ না যেতেই উল্টে গেল দাবার দান। জানা গেল, ওই কনস্টেবল ডাহা মিথ্যাচার করেছেন। প্রচার করেছেন বানানো গালগল্প। অবাক করা বিষয়, পুলিশ ক্যাডারে চাকরি হয়েছে দাবি করলেও আদৌতে তিনি বিসিএস পরীক্ষায় বসেননি।

এর আগে (১ এপ্রিল) পুলিশ কনস্টেবল আব্দুল হাকিম সময় নিউজকে জানান, তিনি বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এ সময় কাজের চাপ সামলে রাত জেগে বিসিএসের প্রস্তুতির অমানবিক পরিশ্রমের গল্পও শুনিয়েছিলেন তিনি। এমন খবরে রাতারাতি হিরো বনে যান কনস্টেবল আব্দুল হাকিম।

তবে জানা গেল, তার ছড়ানো এসব তথ্যের সবটাই মিথ্যা। তিনি নিজেকে ৪০তম বিসিএসের রেজাল্টে পুলিশ ক্যাডার মেধাতালিকায় ৬৭তম হিসেবে জায়গা করে নেওয়ার দাবি করেছিলেন। অথচ ৪০তম বিসিএস রেজাল্টে মেধাতালিকায় ৬৭তম স্থান লাভ করা ব্যক্তি হলেন সিলেট অঞ্চল থেকে আবেদন করা সঞ্জীব দেব। তার রোল নম্বর ১৬০০৪৩৯১। অন্যদিকে আব্দুল হাকিম হলেন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের সায়দাবাদ গ্রামের বাসিন্দা। যিনি নিজেকে পুলিশ ক্যাডার দাবি করলেও আদতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণও করেননি তিনি।
গত ২৮ মার্চ ৪০তম বিসিএস ক্যাডার (সুপারিশপ্রাপ্ত) রেজাল্ট বের হয়। এরপর নিজেকে পুলিশ ক্যাডারে মেধাতালিকায় ৬৭তম হিসেবে দাবি করেন হাকিম। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে ওই পুলিশ কনস্টেবলের এএসপি হওয়ার ভুয়া গল্প।

এদিকে বিসিএসে যার রোল নম্বর ও মেধাক্রম নিজের বলে আব্দুল হাকিম প্রচার করেছেন তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১২-১৩ সেশনের শিক্ষার্থী সঞ্জীব দেব। প্রথম বিসিএসেই পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। সঞ্জীবের রোল, আইডি ও মেধাক্রম নিজের বলে প্রচার করেছিলেন ওই পুলিশ কনস্টেবল।

অন্যদিকে সংবাদমাধ্যমকে সঞ্জীব জানিয়েছেন, তিনি পুলিশ ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার পজিশন ৬৭তম। তার দাবির সত্যতা মেলে তার প্রবেশপত্রেও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সালে সায়দাবাদ উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন হাকিম উদ্দিন। তারপর রায়পুরা কলেজ থেকে ২০১২ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত নরসিংদী সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ২০১২-১৩ সেশনে ভর্তি হন। ভর্তির কিছুদিন পরই পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি হয় তার।

প্রথম এক বছর গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশে কাজ করে বদলি হন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) বিভাগে। সেখানে থাকাবস্থায় নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে ২০১৬ সালে অনার্স শেষ করেন। তারপর আর মাস্টার্স করেননি তিনি।

এর আগে সময় নিউজের কাছে আব্দুল হাকিম দাবি করেছিলেন, ২০১৮ সালে ৪০তম বিসিএস-এর আবেদন করেন এবং প্রথমবারের মতো বিসিএস প্রিলিমিনারি টেস্ট দেন। সেখানে কৃতকার্য হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে রিটেন ও ভাইভায় অংশ নেন। সবশেষ চলতি বছরের ৩০ মার্চ ৪০তম বিসিএসের রেজাল্টে পুলিশ ক্যাডার মেধাতালিকায় ৬৭তম হিসেবে জায়গা করে নেন তিনি।

‘ডিএমপি (ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ)-তে কাজের চাপ প্রচুর। সারা দিন কাজ করে বিশ্রামের সময় বিশ্রামের পাশাপাশি পড়াশোনা করতাম। যখন অনার্স চতুর্থ বর্ষ শেষদিকে, তখন মাথায় ভালো মানের একটা চাকরির পোকা ঢোকে। ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণির একটা চাকরির চাহিদা ছিল। এই চিন্তা থেকেই পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা করতে থাকি ভালো একটা চাকরির আশায়।’

সে সময় তিনি আরও বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাকে সাহায্য করেছেন। প্রস্তুতি ভালো না থাকায় ৪০তম-এর আগে আবেদন করিনি। যখন আমার মনে হয়েছে আমি প্রতিযোগিতা করতে পারব, তখন আবেদন করি। ৪০তম-তে প্রথমবারের মতো বিসিএস পরীক্ষা দিই এবং সেখানে পুলিশ ক্যাডারে ৬৭তম অবস্থান গ্রহণ করি।’

এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) ডিএমপিতে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল আব্দুল হাকিমের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By Uttoron Host