বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০৩ পূর্বাহ্ন
নোটিশ
যে সব জেলা, উপজেলায় প্রতিনিধি নেই সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। বায়োডাটা সহ নিউজ পাঠান। Email: newssonarbangla@gmail.com

মিল্কী হত্যার প্রতিশোধ নিতেই টিপুকে হত্যা

Reporter Name
Update : শনিবার, ২ এপ্রিল, ২০২২, ১:৫৭ অপরাহ্ন

আজ দুপুরে কাওরানবাজারের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেপ্তারকৃত চারজন হলেন- অন্যতম পরিকল্পনাকারী ওমর ফারুক, আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ (৩৮), মো. নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির (৩৮) ও মো. মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশ (৫১)।
টিপু হত্যার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, মিল্কী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে টিপুর সম্পৃক্ততার অভিযোগ করে গ্রেপ্তারকৃত ওমর ফারুক, পলাশসহ একটি পক্ষ মানববন্ধন, আলোচনা সভা করে। এছাড়া বাদীর মাধ্যমে চার্জশিটের নারাজি প্রদানের মাধ্যমে চেষ্টা চালায়। তবুও জাহিদুল ইসলাম টিপু মামলা থেকে অব্যাহতি পায়। পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃত ওমর ফারুক ও অন্যান্য সহযোগীরা স্বার্থগত দ্বন্দ্বের কারণে টিপুর অন্যতম সহযোগী রিজভী হাসানকে ২০১৬ সালে হত্যা করে।

বর্তমানে রিজভী হাসান হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের মাধ্যমে বিচার কার্য শুরু হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, তাদের ধারণা প্রতিপক্ষ টিপুর কারণেই রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়েছে। ইতিমধ্যে মামলার বাদী রিজভী হাসান বাবুর পিতা আবুল কালামের সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত ওমর ফারুক ও তার সহযোগীরা ৫০ লাখ টাকায় দফারফা করার চেষ্টা করে। তবুও জাহিদুল ইসলাম টিপুর কারণে কালাম মীমাংসায় আসেনি। টিপু কালামকে নিয়ে সার্বক্ষণিক চলাচল করতে থাকে। তারা এক পর্যায়ে কালামকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে, কিন্তু জাহিদুল ইসলাম টিপুর সাথে চলাচল করার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

অতঃপর তারা যখন দেখল কালামের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়ে যায় তখন তারা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করে যাতে মামলা পরিচালনা ধীরগতি করা যায়। তাদের ধারণা বাদী কালাম একা মামলাটি সঠিকভাবে চালাতে পারবে না। এরই প্রেক্ষিতে প্রায় ৩ মাস আগে সাক্ষ্য শেষে আদালত চত্ত্বর এলাকায় হত্যাকান্ডের সংগঠনের প্রাথমিক আলোচনা করে।

কমান্ডার আল মঈন বলেন, বোচা বাবু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী গ্রেপ্তারকৃত কাইল্লা পলাশকে তারা অর্থের বিনিময়ে সাক্ষ্য প্রদানে বিরত থাকতে বলে। সে রাজি থাকা সত্ত্বেও টিপুর চাপে সে সাক্ষ্য দেয়। পলাশ পরবর্তীতে রিজভী হাসান হত্যাকান্ডের গ্রেফতারকৃত আসামিদের সাথে যুক্ত হয়ে জাহিদুল ইসলাম টিপুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে অংশ নেয়। মোরশেদুল আলম হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য ফারুক ও মুসাকে ফোনে কয়েকজন আন্ডার ওয়ার্ল্ড এর সন্ত্রাসীদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সমন্বয়ের জন্য মুসা গত ১২ই মার্চ দুবাই চলে যান। সেখানেই হত্যাকাণ্ড সংঘটনের চূড়ান্ত সমন্বয় করা হয়।

তিনি আরও বলেন, হত্যাকান্ডটি দেশে সংঘটিত হলেও নিয়ন্ত্রণ করা হয় দুবাই হতে। দেশ থেকে কিলার নাছির, কাইল্লা পলাশসহ আরোও কয়েকজন টিপুর অবস্থান সম্পর্কে বেশ কয়েকদিন যাবত মুসার কাছে তথ্য পাঠাতো। ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর নাছির আনুমানিক চারবার টিপুর অবস্থান সম্পর্কে মুসাকে অবহিত করে। পরবর্তীতে টিপুর গ্রান্ড সুলতান রেস্টুরেন্ট হতে বের হওয়ার সময় কাইল্লা পলাশ তাকে নজরদারিতে রাখে এবং তার অবস্থান সম্পর্কে সে ফ্রিডম মানিককে অবহিত করে। বর্ণিত অবস্থান সম্পর্কে জানানোর প্রেক্ষিতে আনুমানিক রাত ১০টা ২৪ মিনিটের দিকে টিপুকে হত্যা করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ওমর ফারুকের সঙ্গে টিপু হত্যার জন্য ১৫ লাখ টাকার চুক্তি হয়। ওই টাকা রিজভী হাসান হত্যাকাণ্ডের আসামিদের মধ্যে ওমর ফারুক ৯ লাখ; অবশিষ্ট অর্থ কিলার নাছির, শুটার সালেহ এবং মুসা প্রদান করে। দুবাই যাওয়ার সময় মুসা ৫ লাখ টাকা নিয়ে যায় এবং হুন্ডির মাধ্যমে মুসাকে আরও ৪ লাখ টাকা প্রেরণ করা হয়। অবশিষ্ট ৬ লাখ টাকা দেশে হস্তান্তর করার চুক্তি হয়।

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুক টিপু হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী। হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা, আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন ও হত্যাকাণ্ড সংগঠনের জন্য তত্ত্বাবধান ও অর্থ লেনদেন করেন তিনি। ওমর ফারুক ২০১৬ সালে রিজভী হাসান হত্যার চার্জশিটভুক্ত ৪নং আসামি এবং ওই মামলায় তিনি ইতোপূর্বে কারাভোগ করেন।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত কিলার নাছির টিপুকে নজরদারি ও হত্যাকাণ্ডের জন্য অর্থ প্রদান করেছে। ঘটনাস্থলের সন্নিকটে তাকে সাদা শার্ট, জিন্স প্যান্ট ও কেডস্/জুতা পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। ঘটনা পরবর্তীতে সে তার মোবাইল ফ্লাশ করে বিক্রি করে দেয় ও সিমকার্ড ভেঙে ফেলে। র‌্যাব পরবর্তীতে ওই মোবাইলফোন ও সীমকার্ড উদ্ধার করে। এছাড়া ঘটনার আগেরদিন সে সীমান্তবর্তী চৌদ্দগ্রাম এলাকায় একদিন অবস্থান করেছিল। সে রিজভী হাসান বাবু হত্যাকাণ্ডের ১নং চার্জশিটভুক্ত আসামি।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মোরশেদুল আলম @ কাইল্লা পলাশ ঘটনার দিন টিপুকে নজরদারি ও আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সাথে সমন্বয় করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে। ইতোপূর্বে সে মতিঝিল থানায় অস্ত্র আইনের একটি মামলায় কারাভোগ করেছে।
আর গ্রেপ্তারকৃত শুটার সালেহ ঘটনার পরিকল্পনা ও অর্থ প্রদানের সাথে জড়িত। সে রিজভী হাসান বাবু হত্যাকান্ডের ২নং চার্জশিটভুক্ত আসামি। তার নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য অপরাধে ১২টি মামলা রয়েছে এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর শাহজাহানপুরে ইসলামী ব্যাংকের পাশে বাটার শো-রুমের সামনে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসময় গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা কলেজ ছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি (১৯)ও নিহত হন। এছাড়া টিপুর গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর ওইদিন রাতেই শাহজাহানপুর থানায় নিহত টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By Uttoron Host