রেজাউল হক নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: এ পৃথিবী যেমন আছে তেমনই ঠিক রবে”” এই কাল জয়ী গানের জনক তিনি। কবিয়াল বিজয়কৃষ্ণ সরকার (জন্মঃ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯০৩-মৃত্যুঃ৪ ডিসেম্বর ১৯৮৫) একজন লোককবি কবিয়াল, কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার, সুরকার ও চারণ কবি।জন্ম নড়াইলের ডুমদী গ্রামে ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯০৩ সালে। তার আসল নাম বিজয় কৃষ্ণ অধিকারী। কবি তার ভক্ত ও স্থানীয়দের কাছে ‘পাগল বিজয়’ হিসেবে সমধিক পরিচিত।তার বহু জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে এ পৃথিবী যেমন আছে, তেমনই ঠিক রবে / সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে, পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী একদিন ভাবি নাই মনে, তুমি জানো না রে প্রিয়/ তুমি মোর জীবনের সাধনা, আষাঢ়ের কোন ভেজা পথে প্রভৃতি অন্যতম।
তার পিতার নাম নবকৃষ্ণ বৈরাগী ও মাতার নাম হিমালয়া কুমারী। পিতামহের নাম গোপালচন্দ্র বৈরাগী। তিনি স্থানীয় টাবরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে নেপাল বিশ্বাস নামক একজন শিক্ষকের কাছে যাত্রাগানের উপযোগি নাচ, গান ও অভিনয় শেখেন। সিংগাশোলপুর কেপি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহ মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য তিনি বেশ কয়েকটি স্কুল পাল্টান। প্রায় সবখানেই তিনি এমন এক বা একাধিক শিক্ষক পান, যাদের কাছে তিনি গান শেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। অল্প বয়সে পিতামাতা হারানোয় তার লেখাপড়া বেশিদূর এগোয়নি। দশম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি লেখাপড়া করেন।তিনি স্থানীয় স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতার কাজ করেন। কিছুদিন করেন নায়েবের কাজ। পাশাপাশি তিনি নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের লোক ও আধুনিক গান চর্চা করতেন। ১৯২৫ সালে তিনি গোপালগঞ্জের কবিয়াল মনোহর সরকারের কাছে কবিগান শেখেন। কিছুদিন পর তিনি রাজেন্দ্রনাথ সরকারের সংস্পর্শে আসেন এবং তার কাছেও কবিগানের তালিম নেন।১৯২৯ সালে বিজয় সরকার নিজের একটি গানের দল করেন এবং কবিয়াল হিসেবে পরিচিতি এবং জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তিনি গানের কথা এবং সুর করতেন। ভাটিয়ালী সুরের উপর ভিত্তি করে তার ধুয়া গানের জন্য তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা পান। তিনি রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ইসলাম, কবি জসিমউদ্দিন, আব্বাসউদ্দিন আহমদ প্রমুখের সান্নিধ্যে এসেছিলেন।বিজয় সরকার প্রায় ৪০০ সখি সংবাদ এবং ধুয়া গান রচনা করেন। এর মধ্যে কিছু কাজ বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত হয়। তিনি বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, এবং বেতার-টেলিভিশনেও কবিগান পরিবেশন করেন।
বাংলাদেশ ও ভারতে তিনি আনুমানিক ৪০০০ আসরে কবি গান পারিবেশন করেন। ফরিদপুরে এক কবি গানের আসরে পল্লি কবি জসিম উদ্দিনের সাথে ওনার কথা বলার পর নকশিকাঁথার মাঠ কাব্য গ্রন্থের উপর গান গেয়ে জসিমউদদীন কে তাক লালিয়ে দেন। তিনি মন্তব্য করেন “” কবি তুমি আমার সারা জীবনের অর্জন ৫ মিনিটে বর্ননা করলে””। এছাড়া তিনি রামায়ণ গানও পরিবেশন করতেন।
বিজয় সরকারের পারিবারিক উপাধি ছিল বৈরাগী। তিনি নিজে বৈরাগী উপাধি ত্যাগ করে অধিকারী উপাধি গ্রহণ করেন। কবিয়াল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করার পর তিনি অবশ্য বিজয় সরকার নামে পরিচিত হয়ে পড়েন।২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে। ৪ঠা ডিসেম্বর ১৯৮৫ সালে আবহমান বাংলার প্রতিভাধর এই চারণ কবি লোকান্তরিত হন।