নিউজ ডেস্ক: মাথাভর্তি সাদা ব্যান্ডেজ। তাতে ডাক্তার লিখে দিয়েছেন ‘হাড় নেই, চাপ দিবেন না।’ মাথার একপাশে এঁকে দেওয়া হয়েছে ‘বিপদজনক চিহ্নও’। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই চোখও। যে কারণে সাদা ব্যান্ডেজে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। আর অস্ত্রপচার করে মাথার খুলির অংশ তার পেটের চামড়ার নিচে সংরক্ষণ করে রেখেছেন চিকিৎসকরা।
জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা এই শিক্ষার্থীর নাম মাহাদি আকিব হোসেন তনয়। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়তে এসে নিজের সহপাঠীদের হামলায় তার স্থান হয়েছে এখন চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে।
সহপাঠিরা হামলা চালিয়ে থেঁতলে দিয়েছে তার মাথার খুলি। এতে ভেঙে গেছে মাথার হাড়। মস্তিষ্কে হয়েছে প্রচুর রক্তক্ষরণ। এমন অবস্থায় ঝুঁকিমুক্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ৪৮ ঘণ্টায় রাখা হয়েছে অবজারভেশনে।
গত শনিবার সকাল ৯টার দিকে চমেকের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে মাত্র ৫০ সেকেন্ডেই ৮-১০জন যুবক তার ওপর হামলা চালায়। এরপর থেকে আইসিইউতে নিথর পড়ে আছেন আকিব।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, কলেজের সামনের ফুটপাতে সাদা অ্যাপ্রন পরা আকিব দৌড়াচ্ছেন। পেছনে কয়েকজন ধাওয়া করছে তাকে। প্রতিপক্ষের হামলা থেকে বাঁচতে দৌঁড়াচ্ছেন তিনি। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে একপর্যায়ে পড়ে যান। আবার উঠে দৌঁড় দেয়ার আগেই অ্যাপ্রন পরা একদল যুবক পেছন থেকে তাকে ধরে ফেলে। এরপর শুরু করে মারধর, শুরু হয় খুর দিয়ে একের পর কোপ। তাদের থামাতে চেষ্টা করেও পারেননি আকিব। ৫০ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে আকিবের মাথা থেঁতলে দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে আকিবের কয়েকজন সহপাঠি এসে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় হাসপাতালে।
চমেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান এসএম নোমান খালেদ চৌধুরী বলেন, আকিবকে যখন আমরা পাই তখন তার মাথা পুরোপুরি থেঁতলানো ছিল। হামলায় তার মাথার হাড় ভেঙে গেছে, মস্কিষ্কেও রক্তক্ষরণ হয়েছে প্রচুর। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ব্রেইন। অপারেশন করে মাথার কিছু অংশ তার শরীরের মধ্যে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। এখনো ঝুঁকিমুক্ত না হলেও আগের চেয়ে তার শারীরিক অবস্থা ভালোর দিকে। তাকে ৪৮ ঘণ্টার অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। আমরা আশাবাদী আকিব সুস্থ হয়ে উঠবে।
সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহফুজুল কাদের বলেন, তার মাথার আঘাত খুব প্রকট ছিল। মাথার হাড়ের একটা অংশ খুলে আপাতত তার পেটের চামড়ার নিচে রাখা হয়েছে। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে সেটি আবার আগের জায়গায় প্রতিস্থাপন করা হবে।
চমেকের ৫৮তম ব্যাচের খোরশেদ ইসলাম রবিন বলেন, আকিবের অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা ভালো। এরপরও বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা বলা হয়েছে। রোববার সকালে একদল চিকিৎসক তার চিকিৎসা নিয়ে বোর্ড বসান। তার ওপর এমন হামলা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।
এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা ৫৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌফিকুর রহমান বলেন, পরিকল্পিত ও অতর্কিতভাবে আকিবের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। রামদা দিয়ে কোপানো হয় মাথায়। খুর ও হকিস্টিক দিয়ে মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়েছে। এমন হামলা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে না গেলে সেখানেই হয়তো তার মৃত্যু হতো। এদিকে আকিবের ওপর হামলাকারী দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আকিব কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার বাদুরতলা এলাকার বাসিন্দা। তিনি চমেকের এমবিবিএস ৬২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।