সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০২ অপরাহ্ন
নোটিশ
যে সব জেলা, উপজেলায় প্রতিনিধি নেই সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। বায়োডাটা সহ নিউজ পাঠান। Email: newssonarbangla@gmail.com

ঝিনাইদহ-২ আসন দখলে মরিয়া দুই দল অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দু’দলেই একাধিক প্রার্থী

মোঃ শাহানুর আলম, স্টাফ রিপোর্টার
Update : সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৩:৪৩ অপরাহ্ন

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ আওয়ামী লীগ, বিএনপি বড় দুটি দলেই অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকট অনেক ক্ষেত্রে এক সাথে রাজনৈতিক কোন কর্মসূচী পালন করেন না। আলাদা আলাদা ভাবে তাদের কর্মসূচী পালন করেন। দলীয় নেতারা এ কোন্দলের কথা অবশ্য স্বীকার করতে চান না। তারা এ কোন্দলকে রাজনৈতিক ‘নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা’ নামে আখ্যায়িত করেন। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দুটি দল থেকেই অনেক ডাকসাইটে স্থানীয় একাধিক নেতা নির্বাচন করার জন্য মুখিয়ে আছেন। তারা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে চালাচ্ছেন জনসংযোগ। গ্রুপিং থাকায় দুই দলের প্রায় ডজন খানেক প্রার্থী এরই মধ্যে মাঠে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। কোনো উপলক্ষ পেলেই পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে যাচ্ছে এলাকা।
একসময়ের বিএনপি ও জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও গত ৩টি নির্বাচনে এই আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। বিএনপি চাচ্ছে হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। আর আওয়ামী লীগের প্রত্যাশা-আসনটি ধরে রাখা। সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এবং হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে আসনটি গঠিত। ১৯৯১, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী ১১দিনে সংসদ এছাড়া ১৯৯৬ সালের ১২জুন ও ২০০১ সালে টানা চার বার এ আসনের এমপি হন বিএনপির মসিউর রহমান। সে কারণে বলা যায়, একসময় আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সে ঘাঁটিতে হানা দিলেও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের অপর স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হারাতে হয় আসনটি। ২০১৮ সালে আসনটি ফিরে পায় আওয়ামী লীগ।
ইতিমধ্যেই নির্বাচনি হাওয়া বইতে শুরু করেছে এ সংসদীয় আসন এলাকায়। পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানগুলো এখন সরগরম। নেতারা ইউনিয়ন পর্যায়ে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে বাজারে কিংবা গ্রামে পথসভাসহ শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন।
আওয়ামী লীগের ক্ষমতা গ্রহণের শুরু থেকে পৌর, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদসহ যেকোনো নির্বাচনেই দলের দুটি গ্রুপ থেকেই আলাদা আলাদা প্রার্থী অংশ নেওয়ায় লবিং, গ্রুপিং এখন প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৪৫৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১১ হাজার ১০৪ জন। এবং নারী ভোটার ২ লাখ ১২ হাজার ৩৫১ জন।
এ আসনের বর্তমান এমপি জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা নূর-ই-আলম সিদ্দিকীর ছেলে তাহজীব আলম সিদ্দিকী।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমির নিকট পরাজিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সফিকুল ইসলাম অপু। এরপর ২০১৮সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে তাহজীব আলম সিদ্দিকী পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এর আগে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. সফিকুল ইসলাম অপুর নিকট ৪ বার নির্বাচিত বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী মসিউর রহমান ধরাশায়ী হন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি’র নিকট তিনি ধরাশায়ী হয়েছিলেন।
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে লড়বেন অন্তত ৫ জন। তারা হলেন-বর্তমান সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সফিকুল ইসলাম অপু মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অন্যতম। গত দুই বার পর পর নির্বাচিত হওয়ায় বর্তমান সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি দলীয় মনোনয়ন পেতে মরিয়া, তিনি শতভাগ আশাবাদী নেত্রী তাকেই মনোনয়ন দিবে। সে লক্ষ্যে তিনি সুযোগ পেলেই দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে গ্রামে, পাড়া মহল্লায় পথসভা ও গণসংযোগ করে বেড়াচ্ছেন।
অপর দিকে শফিকুল ইসলাম অপু বলেন, দল আমাকে দুই বার মনোনয়ন দিয়েছে। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার মনোনয়ন পাই। সেবার বিএনপি থেকে চারবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য মসিউর রহমানকে প্রথমবারের মতো পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই। ইতিমধ্যে আমার দুই মেয়ে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে দেখা করেছি। নেত্রী আমাকে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন, আমি সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মুখে বারবার যার নাম উচ্চারিত হয় তিনি হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঝিনাইদহ পৌরসভার সাবেক মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু। করোনার সময় তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন সবসময়। এর মধ্যে তার নেতৃত্বে অধিকাংশ ইউনিয়ন ও পৌরসভার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করতে চাই। তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা পূরণে দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইব। তবে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই মেনে নেব।
এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এলকায় দানবীর হিসেবে খ্যাত শিল্পপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে । তিনি সদর ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে তার জাহেদী ফাউন্ডেশনে মাধ্যমে মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করে চলেছেন, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল কলেজ নির্মাণে সহযোগীতা করছেন। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাসও মনোনয়নের আশা করছেন। দলীয় নেতা কর্মীদের কাছে তার একটা স্বচ্ছ ইমেজ রয়েছে। জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দেয় তার সাথে একমত থাকবেন বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে এ আসনে বিএনপি থেকে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন-তিনজন। তারা হলেন জেলা বিএনপির সভাপতি এমএ মজিদ, সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মসিউর রহমানের ছেলে ডাঃ ইব্রাহীম রহমান বাবু এবং জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ বিশ্বাস।
দ্বাদশ নির্বাচন নিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন হলে দল যদি নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেয় তা হলে নির্বাচনের জন্য আমি প্রস্তুত আছি।
সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রয়াত মসিউর রহমানের ছেলে ডাঃ ইব্রাহীম রহমান বাবু বলেন, গত নির্বাচন পরবর্তী রাজনীতিতে আমি সক্রিয়ভাবে ছিলাম, আমার পিতা মসিউর রহমান সারা জীবন ঝিনাইদহের মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। আমি তার সন্তান হিসেবে মানুষের সেবায় কাজ করে যেতে চাই। দল নির্বাচনে এলে আমি অবশ্যই মনোনয়ন চাইব। নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেলে ঝিনাইদহ-২ আসনটি আবারও দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে উপহার দিতে পারব বলে আশা করি।
অপর দিকে জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে কাজ করতে শুরু করেছেন। ঝিনাইদহ-২ আসনে একাধিকবার তাদের প্রার্থী জয়ের রেকর্ড রয়েছে দলকে আবার সংগঠিত করে নির্বাচনে নামতে চান জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি রাশেদ মাজমাদার। জাতীয় পাটির অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা জাতীয় পাটির সিনিয়র সহ সভাপতি (অবঃ) মেজর মাহফুজুর রহমান হরিণাকুণ্ডু এবং ঝিনাইদহের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে পাটির নেতা কর্মীদের সাথে গণসংযোগ শুরু করছেন। এই আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একক প্রার্থী হলেন ডা.এইচ এম মোমতাজুল করিম। আসনটিতে জামায়াতের একটা ভোট ব্যাংক রয়েছে তবে এখনো তাদের এবং বাম দলের কোন নির্বাচনি প্রস্তুতি চোখে পড়ে নি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By Uttoron Host