এনএসবি ডেস্ক: বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার পথ সুগমে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।রোহিঙ্গা সংকট সমাধান না হওয়া এবং বাংলাদেশে তাদের দীর্ঘ উপস্থিতি আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। প্রত্যাবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক হতাশার জন্ম দিয়েছে। এই পরিস্থিতি সম্ভাব্য মৌলবাদকে ইন্ধন দিতে পারে। এই অবস্থা চলমান থাকলে এটি আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে।’
রোহিঙ্গাদের সম্পূর্ণ মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাস্তুচূত রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায় এবং সেখানে তারা শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে আগ্রহী। আসুন আমরা এই নিঃস্ব মানুষের জন্য তাদের নিজের দেশে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করি।’এ সময় বিশ্বব্যাপী বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ এবং তৎসংশ্লিষ্ট হুমকি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, “আমরা এ বিষয়ে চিন্তিত; যা প্রতিনিয়ত তথ্যের অপব্যবহার এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুনভাবে আবির্ভূত হচ্ছে। আমার সরকার চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি গ্রহণ করেছে। আমরা কখনো সন্ত্রাসবাদ কার্যক্রম সংঘটনে বা অন্যের ক্ষতি সাধনে আমাদের ভূমি ব্যবহৃত হতে দেই না।”
ভাষণে কুরআন পোড়ানোর মতো ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে অস্থিরতা, বিদ্বেষমূলক এবং উগ্রপন্থী বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। সাম্প্রতিককালে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর মতো জঘন্য অপরাধ আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এ ধরনের জঘন্য অপরাধ শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিকেই আঘাত করে না, এটি অস্থিরতাকে উসকে দেয় এবং বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসের মানুষের মধ্যে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।’এছাড়া শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়তে যুদ্ধ ও সংঘাতের পথ পরিহার করতেও বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বিশ্বনেতাদের প্রতি আবেদন, যুদ্ধ, স্যাংশান ও সংঘাতের পথ পরিহার করুন। আমাদের জনগণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য স্থায়ী শান্তি, মানবজাতির কল্যাণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য কাজ করুন।’
যুদ্ধ ও সংঘাত মানুষের জীবনের কষ্ট বাড়ায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি নিজে নিপীড়িত এবং যুদ্ধ ও হত্যার নৃশংসতার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে যুদ্ধ, হত্যা, অভ্যত্থান ও সংঘাতের ভয়াবহতার জন্য মানুষ যে বেদনা ও যন্ত্রণা সহ্য করে তা অনুভব করতে পারি। ভাষণে ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থন থাকবে বলেও জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনের ওপর বিপর্যয় নিয়ে আসা ‘নাকবা’র ৭০ বছর পূর্ণ হয়েছে। ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ অধিকার অর্জনের পথ এখনও আশার মুখ দেখতে ব্যর্থ হয়েছে। ফিলিস্তিনের জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের পাশে থাকবে।”