বাংলাদেশের ইতিহাসে ২১ আগস্ট এক নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন। সেদিন আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ গ্রেনেড হামলায় রূপ নেয় মৃত্যুপুরীতে। সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ দেখে স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা দেশ। রক্তাক্ত সেই বিভীষিকাময় ২১ আগস্টের পরিকল্পনা হয় হাওয়া ভবন, আর গ্রেনেড এসেছিল মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি পাকিস্তান থেকে।২১ আগস্ট ২০০৪। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যে ট্রাকে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন সেই ট্রাক চালক রফিকুল ইসলাম তার চোখের সামনে রক্তের ভয়াবহ খেলা, লাশের মিছিল আর আহতদের আহাজারি দেখে বাকরুদ্ধ হয়েছিলেন। সেদিনের ভয়াল স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে আজও আঁতকে ওঠেন তিনি।রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার গায়ে একটা সাদা শার্ট ছিল। পুরো শার্ট রক্ত দিয়ে লাল হয়ে গেছে। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আমার হাতে, মুখে, কোমরে ও পায়ে স্প্লিন্টার পড়েছিল।’
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় আয়োজিত সমাবেশে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। হামলার পরপরই শেখ হাসিনাকে কর্ডন করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তার তৎকালীন বাসভবন ধানমন্ডির সুধা সদনে। ২১ আগস্টের রক্তাক্ত হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। পরে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ মোট ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারান। রক্তাক্ত-বীভৎস ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমান ছাড়াও সেদিন নিহত হন ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, হাসিনা মমতাজ রিনা, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসির উদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের সঙ্গে লড়াই করে ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফসহ আরও কয়েকজন পরাজিত হন।