ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে আবারও বড় ধরনের মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এ হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে পুরোপুরি ধ্বংসের কথা অস্বীকার করে জানানো হয়েছে যে, রুশ হামলায় প্যাট্রিয়ট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কিন্তু ক্ষতির মাত্রা কেমন তা প্রকাশ করা হয়নি। এদিকে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা রাশিয়ার এই হামলাকে ‘নজিরবিহীন’ বলে বর্ণনা করেছেন। তারা বলছেন রাজধানী কিয়েভের ওপর এতো ঘন ঘন মিসাইল আক্রমণের ঘটনা এর আগে ঘটেনি।বিবিসির খবরে জানানো হয়েছে, রাশিয়া মঙ্গলবার কিয়েভের ওপর ১৮টি মিসাইল হামলা চালায়। ইউক্রেনের দাবি, তারা সবগুলো রুশ মিসাইল আকাশে ধ্বংস করে দিয়েছে। এমনকি এরমধ্যে ছিল রাশিয়ার অত্যাধুনিক হাইপারসনিক মিসাইলও। রাশিয়ার এই কিনঝাল মিসাইল শব্দের ১০ গুণ গতিতে ছুটতে পারে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও এখনও হাইপারসনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সফল হয়নি।রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দাবি, হাইপারসনিক মিসাইল ঠেকানোর ক্ষমতা নেই কারও। তবে ইউক্রেন দাবি করেছে যে, তারা অন্তত ছয়টি কিনঝাল ধ্বংস করেছে।

তবে রাশিয়ার হামলার পরই সিএনএন খবর দেয় যে, কিয়েভে থাকা একটি প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও এক বিবৃতিতে জানানো হয় যে, কিয়েভে থাকা একটি প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ধ্বংস করে দিয়েছে রাশিয়া। এটাই প্রথম ইউক্রেনে কোনো প্যাট্রিয়ট ধ্বংসের ঘটনা। একটি প্যাট্রিয়টের দাম প্রায় ১.১ বিলিয়ন ডলার। ইউক্রেনের কাছে মোট দুইটি অত্যন্ত দামি এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ছিল। সিএনএন জানিয়েছে, এরমধ্যে একটি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আর অপরটি জার্মানি ও নেদারল্যান্ড যৌথভাবে দিয়েছে। রাশিয়ার হামলায় কোনটি ধ্বংস হয়েছে তা জানানো হয়নি। যদিও ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ওইদিনই দাবি করে যে, তারা রাশিয়ার ছোঁড়া সব মিসাইল ধ্বংস করে দিয়েছে। তবে রাশিয়া বলছে, তাদের ছোঁড়া মিসাইলগুলি সফলভাবে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের অবস্থান এবং পশ্চিমা দেশগুলি থেকে সরবরাহ করা অস্ত্র এবং সামরিক হার্ডওয়্যার সংরক্ষণের স্থানগুলোতে আঘাত হেনেছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে বৃটেনের দেয়া স্টর্ম শ্যাডো ক্রুজ মিসাইলের একটি চালানও ধ্বংস করেছে রাশিয়া। এদিকে রুশ হাইপারসনিক মিসাইল ধ্বংসের ইউক্রেনীয় দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু। তিনি বলেন, ইউক্রেন নিয়মিতভাবে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে অতিরঞ্জিত দাবি করে। কিন্তু এর আগেও আমরা বলেছি আর এখনও বলছি যে, তারা যতগুলো কিনঝাল ধ্বংসের দাবি করেছে, ততগুলো কিনঝাল আমরা ছুঁড়িইনি! আমরা যে কয়েকটি কিনঝাল ছুঁড়েছি, তারা তার তিনগুন ধ্বংসের দাবি করছে। রয়টার্স বলছে, রাশিয়ার হামলা মোকাবিলায় ইউক্রেনকে পশ্চিমাদের সরবরাহ করা অত্যাধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে প্যাট্রিয়ট সিস্টেম। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্য করে রাশিয়ার বিমান হামলা প্রতিরোধে এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনকে সহায়তা করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মার্কিন কর্মকর্তা প্রাথমিক তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ওয়াশিংটন এবং কিয়েভ ইতোমধ্যেই অত্যাধুনিক এই আকাশ প্রতিরক্ষা সিস্টেমটি মেরামত করার সর্বোত্তম উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আগামী দিনগুলোতে এই বিষয়ে আরও ভালো বুঝতে পারবে এবং আর তাই সময়ের সাথে সাথে তথ্য পরিবর্তনও হতে পারে।রয়টার্স বলছে, প্যাট্রিয়ট সিস্টেমকে বিমান, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ এই ধরনের অস্ত্রের বিরুদ্ধে সবচেয়ে উন্নত মার্কিন বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এতে সাধারণত রাডার এবং অন্যান্য সহায়তা যানসহ লঞ্চার অন্তর্ভুক্ত থাকে। এর আগেও রাশিয়া তাদের কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনে আক্রমণ চালিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া বিমান প্রতিরোধী ব্যবস্থা প্যাট্রিয়ট দিয়ে সেই হামলা প্রতিহত করা হয় বলে দাবি করেছিল ইউক্রেন। যুক্তরাষ্ট্র গত এপ্রিল মাসে ইউক্রেনের কাছে প্যাট্রিয়ট সরবরাহ করেছে। এর এক মাসের মাথায়ই এটি আক্রান্ত হলো।
মঙ্গলবার মিসাইলের পাশাপাশি ড্রোনও ব্যবহার করে রাশিয়া। রুশ বাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ চালানোর ইউক্রেনীয় পরিকল্পনার মধ্যেই রাশিয়া সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তাদের হামলা জোরদার করেছে। রাশিয়ার হামলার পর শহরের কেন্দ্রে প্রচুর সংখ্যক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো বলেছেন শহরের চিড়িয়াখানাসহ কিয়েভের মাঝখানে মিসাইলের ধ্বংসাবশেষ পড়েছে। কিয়েভের একজন বাসিন্দা কেসেনিয়া বিবিসিকে বলেছেন তারা যখন একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। হামলার তীব্রতাকে তিনি স্টার ওয়ার্স সিনেমা অথবা অ্যাকশনধর্মী ভিডিও গেমের সাথে তুলনা করেন।আরেকজন বাসিন্দা ইয়েভেন পেত্রোভ বলে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম তাদের বাড়ি রুশ আক্রমণের তীব্রতায় কেঁপে ওঠেছে। বলা হচ্ছে, সবচেয়ে বেশি হামলা চালানো হয় কিয়েভের সলোমায়ানস্কি এলাকায় যেখানে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অবস্থিত। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ভালেরি জালুঝনি বলেছেন, রাশিয়া রাজধানী কিয়েভের উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব দিক থেকে শহরের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে এবং এসব হামলায় আকাশ, নৌ এবং স্থলভিত্তিক মিসাইল ব্যবহার করা হয়েছে। কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান শেরি পপকো বলছেন, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক মিসাইল হামলা চালানো হয়েছে।