ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডতে ফেসবুকে পরিচয়, বিয়ে, অবশেষে যৌতুকের দাবিতে চুল কেটে নির্যাতন করে স্ত্রীকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে । এ বিষয়ে হরিণাকুণ্ড থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী নারী।
মামলা সূত্রে জানা যায়, প্রথমে ফেসবুকে পরিচয়, কিছুদিন যেতে না যেতেই প্রেমে আশক্ত হয়ে ২৭ (ডিসেম্বর) ২০২১ ইং তারিখে বিয়ের মাধ্যমে শেষ হয় তাদের পরিনয়। জানা যায়, শৈলকূপা উপজেলার নিত্যানন্দপুর গ্রামের মৃত শাখাওয়াৎ হোসেনের মেয়ে রুমানা শারমীনের সাথে প্রথমে ফেসবুকে পরিচয় পরে ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে বিয়ে করেন পার্শ্ববর্তী হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হরিশপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে সাজেদুর রহমান রনি। রনি জোড়াদহ ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি। রুমানা রনির দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর সাথে তার সম্পর্ক ভালো নেই এই বলে প্রতারণার মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাকে বিয়ে করে। এক পর্যায়ে সবকিছু মেনে নিয়ে বাধ্য হয় রনির সাথে সংসার করতে।
প্রথমত সংসার জীবনে প্রথম স্ত্রী ও দ্বিতীয় স্ত্রী সাথে সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলো। এরপর সংসারের সুখের প্রলোভন দেখিয়ে ৫ লক্ষ টাকার যৌতুক দাবি করে রনি। রুমানা সুখের কথা চিন্তা করে নিজের জমানো সঞ্চয়ের টাকা ও জমি বিক্রয় করে স্বামীর পাঁচ লক্ষ টাকার দাবি পুরণ করে। এরপর বেশ কিছুদিন ভালোই কাটছিলো তাদের সুখের সংসার। এসময় তাদের কোল জুড়ে আসে এক ফুটফুটে কন্যা সন্তান, যার বয়স এক বছর পূর্ণ হয়েছে। যৌতুক লোভী স্বামী রনি কিছুদিন পর আবারও যৌতুকের দাবিতে রুমানার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকে। নির্যাতনের মাত্রা আর সইতে না পেরে তিন জনকে আসামী করে হরিণাকুণ্ডু থানাতে মামলা করেন রুমানা। এ প্রসঙ্গে রুমানা শারমীন জানায়, আমি সংসারের সুখের জন্য আমার সবকিছু বিলিন করে দিয়েছি। আমার সঞ্চয়ের টাকা ও জমি বিক্রয় করে ৫ লক্ষ টাকা রনি-কে দিয়েছি। তারপরও আমার স্বামী ও তার বাড়ির লোকজন আমাকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন এবং প্রাণনাশের হুমকী দিলে আমি হরিণাকুণ্ড থানায় ১২/১২/২০২২ ইং তারিখে একটি অভিযোগ দিই। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে বেশ কয়েক বার মিমাংশা করেও কোনও ফল আসেনি। কিছু দিন যেতে না যেতেই আবার যৌতুক চেয়ে পৈশাচিক নির্যাতন ভাবে মারপিট করে আমার স্বামী। এরপর টাকার জন্য আমার বাবার বাড়ি যায়। টাকা না পেয়ে গত ২৬ (ডিসেম্বর) ২০২২ ইং তারিখে আমার স্বামীর বাড়িতে ফিরে আসলে আমাকে ও আমার ১৩ মাস বয়সী কন্যা সন্তানকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আনুমানিক মধ্যরাত ১ঃ৩০ মিনিটের দিকে স্থানীয় মেম্বারের সহায়তায় প্রাথমিকভাবে সমাধান হলেও ২৭/১২/২০২২ ইং তারিখে সন্ধ্যারাতে আবারও ২ লক্ষ টাকা চাইলে আমি দিতে রাজি না হলে আমাকে তালাকের হুমকী এবং মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করে। ওরা সবাই মিলে যুক্তি করে আমার মাথার চুল কেটে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছেন। আমার চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে আশেপাশের লোকজন এসে আমাকে ও আমার শিশু সন্তানকে রক্তাক্ত জখম দেখে তারা দ্রুত চিকিৎসার জন্য হরিণাকুণ্ডু হাসপাতালে ভর্তি করে। নির্যাতন আর সইতে না পেরে অবশেষে গত বৃহস্পতিবার ২৯ডিসেম্বর বিকালে থানায় একটি মামলা করে। ভুক্তভোগী গৃহবধু রুমানা তার স্বামীসহ দোষীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানান।
এঘটনায় সাজেদুল ইসলাম রনির সাথে মুঠোফোন যোগাযোগ করলে তিনি জানান, স্ত্রী রুমানা আমাকে ব্লাকমেইল করে বিয়ে করতে বাধ্য করেছিলো। পরবর্তীতে তার অস্বাভাবিক আব্দার এবং বিলাশ বহুল চলাফেরার কারনে আমি তাকে তালাক দিয়েছিলাম। তালাকের কথা শুনে সে আমার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে এসব মিথ্যা কথা বলে বেড়াচ্ছে।
জোড়াদাহ ইউনিয়নের সদস্য শরিফুল ইসলাম জানান, রনির দ্বিতীয় স্ত্রী রুমানা শারমিন ও তার কন্যা সন্তানের মারধরের অবস্থা দেখে আমিসহ আরো কয়েকজন মিলে তাকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য হরিণাকুণ্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে বিষয়টা আমার কাছে দুঃখ জনক মনে হয়েছে।
হরিণাকুণ্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ইতিপূর্বে একটি অভিযোগ করেন। আবার পরবর্তীতে নারী নির্যাতনের একটি মামলাও করেছেন। মামলাটি নথীভূক্ত হয়েছে। আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অপরাধী যেই হোক মামলাটি সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।