সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:২৮ পূর্বাহ্ন
নোটিশ
যে সব জেলা, উপজেলায় প্রতিনিধি নেই সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। বায়োডাটা সহ নিউজ পাঠান। Email: newssonarbangla@gmail.com

রাষ্ট্রদূতের শাহীনবাগে যাওয়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের শামিল: রাশিয়া

Reporter Name
Update : রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:০৮ অপরাহ্ন

ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের শাহীনবাগে যাওয়াকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের চেষ্টা মনে করে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা গত ২২ শে ডিসেম্বরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এই মন্তব্য করেন। রুশ ভাষার ওই ব্রিফিংয়ের ইংরেজি ট্রান্সক্রিপ্ট রোববার ঢাকার গণমাধ্যমে সরবরাহ করে রুশ দূতাবাস। অবশ্য বিবৃতিটি রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও রয়েছে। শাহীনবাগে বিরোধী দলের নেতার স্বজনদের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাতের বিরোধিতাকারীরা রাষ্ট্রদূতকে ঘিরে ধরার যে চেষ্টা করেছেন তাকে ‘প্রত্যাশিত’ বলে অভিহিত করেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষার কথা বলে ক্রমাগত অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
“বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা” উপ-শিরোনামে প্রচারিত ব্রিফিংয়ের ইংরেজি ট্রান্সক্রিপ্টে বলা হয়, ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ঘটে যাওয়া বহুল প্রচারিত ঘটনাটি রাশিয়া নোটে নিয়েছে। মূখপাত্র বলেন, সেখানে স্থানীয় একটি সংগঠনের বাধার মুখে পড়েছিলেন রাষ্ট্রদুত, যা তার জন্য নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করেছিল। ২০১৩ সাল থেকে নিখোঁজ বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওই সমর্থকের পরিবারের  সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাতের বিরোধিতায় সেখানে জড়ো হয়েছিলেন ওই সংগঠনের কর্মীরা। রাশিয়া মনে করে ঘটনাটি আমেরিকান কূটনীতিকের তৎপরতার একটি প্রত্যাশিত ফলাফল। বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকারের প্রতি যত্নবান হওয়ার অজুহাতে ক্রমাগতভাবে এ দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি যুক্তরাষ্ট্র প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে এমন অভিযোগ করে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন,  বাংলাদেশে বৃটিশ ও জার্মান কূটনৈতিক মিশনের তার (আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের) সহকর্মীরা একই ধরনের কাজ করছেন।

তারা বাংলাদেশে আগামী সংসদ নির্বাচন স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে প্রকাশ্যে সুপারিশ করছেন।
মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‌আমরা বিশ্বাস করি, সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের মৌলিক নীতিগুলো লঙ্ঘন করে এমন পদক্ষেপ অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, যদি কেউ প্রশ্ন করতে চান- ‘কূটনীতিক, দায়মুক্তি, দূতাবাস, নিরাপত্তা’ শব্দগুলো কেমন হবে? আমরা সব সময় আন্তর্জাতিক আইন এবং কূটনৈতিক ও কনস্যুলার সম্পর্কিত ভিয়েনা কনভেনশন অনুসারে এই বিষয়গুলো দেখার আহ্বান জানাই। এগুলোই মৌলিক নীতি।
মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্য দেশগুলোকে শুধু তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই যত্নবান এবং মন্তব্য না করে বরং  আন্তর্জাতিক সংস্থা, দেশগুলো এবং তাদের প্রতিনিধিরা যখন তাদের দূতাবাসের নিরাপত্তা ও কনস্যুলার সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে, তখন তাদের সমর্থন করার জন্য আমরা আহ্বান জানাই। মারিয়া জাখারোভা বলেন, অন্য দূতাবাস, কনস্যুলেট জেনারেল, সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে যখন সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে বা তারা হুমকি পাচ্ছেন তখন বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্র দেখতে চায় না বা এ কথা শুনতে চায় না। তারা এ বিষয়ে কোনো খেয়ালই করে না। সর্বোপরি, তারা নীরব থাকে এবং সবচেয়ে খারাপভাবে বলতে গেলে, এর মাধ্যমে তারা হামলাকে ন্যায্যতা বা বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করে। রাশিয়ার মূখপাত্র বলেন, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীরা সিরিয়ায় আমাদের দূতাবাসে একের পর এক হামলা চালায়, তখন আমরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে আমেরিকানদের এর জবাব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলাম। সব কিছু স্পষ্ট ছিল। তবুও জনসমক্ষে অবস্থান নিতে এবং নিরাপত্তা পরিষদের সাধারণ কণ্ঠস্বর ব্যবহার করতে তাদের অনিচ্ছার কোনো রাজনৈতিক যুক্তি থাকতে পারে না।  মুখপাত্র বলেন, কূটনীতিকদের সুরক্ষা এবং দূতাবাস ও কূটনীতিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানানোর বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আমাদের প্রস্তাবকে ওয়াশিংটন সমর্থন করেনি। নিরাপত্তা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিমুখী অবস্থান নয়, বরং আমরা মনে করি সবার সমন্বিত অবস্থান প্রয়োজন। 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের রাজনীতি, মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং আসন্ন নির্বাচন প্রশ্নে পশ্চিমা বন্ধুরা বারাবরই সরব। ২০১৪ এবং ১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পূনরাবৃত্তি রোধে তারা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কাছে বিভিন্ন রকম সুপারিশ তুলে ধরছেন। এটাকে চাপ মনে করে প্রায়শই বিরক্তি প্রকাশ করা হচ্ছে সরকারের তরফে। পশ্চিমাদের এমন কর্মকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘হস্তক্ষেপ’ আখ্য দিয়ে গত গত সপ্তাহে স্বপ্রনোদিত বিবৃতি দিয়েছে ঢাকাস্থ রাশিয়ান দূতাবাস। এবার মস্কোর প্রতিনিধি প্রেস ব্রিফিং করে ঢাকায় মার্কিন দূতের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটকে সামনে এনে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাঁড়লেন। স্মরণ করা যায়, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গত ১৪ ডিসেম্বর সকালে রাজধানীর শাহীনবাগে প্রায় এক দশক ধরে নিখোঁজ বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলামের বাসায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সময় বাসার প্রবেশদ্বরে অনাহুত একদল লোক তাঁকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করেন। তার গাড়ির গতিও রোধ করেন। নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় নিরাপদে শাহীনবাগ ত্যাগ করে সরাসরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান মার্কিন রাষ্ট্রদূত। মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে জরুরি সাক্ষাৎ করে ঘটনার বিস্তারিত অবহিত করেন। পরদিন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানকে ডাকা হয় স্টেট ডিপার্টমেন্টে। সেখানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানান মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। এ ঘটনায় ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে নতুন করে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে।সূত্র:মানবজমিন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By Uttoron Host