মোঃ গোলাপ মিয়া লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাট জেলায় তামাক চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, এখন থেকে তামাক চাষের চারা রোপণের আইন প্রয়োগ করে নিয়ন্ত্রণে না নেওয়া হলে প্রতিনিয়ত দিন দিন তামাক চাষ বৃদ্ধি হবে। এই জেলায় তামাক চাষের উপর আইন প্রয়োগ করা না হলে তামাক চাষ বন্ধ করা সম্ভব হবে না এমনটাই বলছে সচেতন মহল। এই জেলায় কৃষক বিকল্প লাভজনক ফসল না থাকায় অধিক মুনাফার আশায় নিজের ও পরিবারে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর জেনেও লাভের আশায় বিষবৃক্ষ তামাকের চারা বুনছেন,উত্তরবঙ্গের মধ্যে লালমনিরহাট জেলার কৃষকগণ গত ৫ বছর পূর্বে কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ছিল।জানা যায় লালমনিরহাট জেলা কে কৃষিপণ্য ভুট্টা আলু ও কাঁচামাল উৎপাদনের সার ওষুধের অধিক মুল্যে কিনতে হচ্ছে, এদিকে এই জেলার ব্র্যান্ডিং ঘোষণা করে ভুট্টাকে বিক্রি মূল্য নির্ধারণ না করা ও ভুট্টাজাত শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা না করায় লাভের আশায় তামাক চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা।এছাড়াও ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠেছে তামাক কোম্পানিগুলো সরজমিনে আদিতমারী উপজেলা ও কালীগঞ্জ উপজেলা দেখাযায় এক ডজন কম্পানি নিজস্ব জমি ক্রয় করে কোম্পানি গোডাউন নির্মাণ করে গত পাঁচ বছর ধরে ব্যাপক হারে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে লোভনীয় অফারে। ঋণ ও বিনামূল্যে বীজ, সার-কীটনাশনক সরবরাহসহ কোম্পানির কর্মীরা নিয়মিত চাষিদের মাঠ পরিদর্শন করে পরামর্শ দিচ্ছেন তামাক চাষ করলে তিনগুণ লাভ ।তামাক উঠে এলে নির্ধারিত মূল্যে তামাক বিক্রয়ের নিশ্চয়তা রয়েছে এমন কি আগ্রীম মুল্যে দিয়ে স্থানীয় তামাক ব্যবসায়ীগণ ক্রয় করে।প্রতিটি কোম্পানির রয়েছে নিজস্ব চাষি সেই সাথে লোভনীয় অফার। কিছু কিছু তামাক কোম্পানি চাষিদের জমি দেখে কার্ড করে দেন। তৈরি করেন চাষিদের ব্যাংক হিসাব নম্বর। তামাক পাতা বিক্রির সময় যদি কোন চাষি ঋণ নিয়ে থাকে তাদের টাকা কেটে নিয়ে চাষিদের নিজস্ব ব্যাংক হিসাব নাম্বরে চলে যায় তামাকের টাকা। ফলে বিক্রির নিশ্চয়তা পেয়ে তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা।চাষিরা জানান, তামাক চাষ করলে তামাক কোম্পানি বীজ সার কীটনাশক ও চাষাবাদ খরচ হিসেবে নগদ অর্থও ঋণ হিসেবে আগাম দিয়ে থাকেন। ফলে তামাক চাষে কম পুঁজি বিনিয়োগ করেই ফসল ঘরে তোলা যায়। তামাক বিক্রিতেও ঝামেলা নেই। কোম্পানি তাদের নির্ধারিত মূল্যে ক্রয় করেন। কার্ড দিলেই চাষিদের উৎপাদিত তামাক ক্রয় করতে বাধ্য কোম্পানি, অন্য ফসলের তুলনায় মুনাফা অনেক বেশি। পরিবারের সকল সদস্য মিলে তামাক ক্ষেতে পরিচর্যা করা যায়। বাড়ির শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকলেই তামাকের কাজ করতে পারেন। বর্তমানে তামাকের চারা তৈরিতে ব্যস্ত চাষিরা।তামাক ক্ষেতে ও তামাক পাতা সংগ্রহের কারণে তামাক পাতার গন্ধে কিছুদিন বাড়িতে থাকা কিছুটা কষ্ট হয়। তামাকের কাজ করলে সর্দ্দি কাশিতে আক্রান্ত হলেও লাভের আশায় তামাক চাষে ঝুঁকছে চাষিরা। তামাকের পাতা সংগ্রহের সময় ঘর বাড়ি, উঠানসহ রাস্তার দুইধারেও শুকানো হয় তামাক পাতা। ফলে শিশু ও বৃদ্ধসহ পরিবারের অধুমপায়ীরাও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েন। ভোগেন নানা ধরনের রোগে তামাক ক্ষেতে কাজ করলে শরীরের নানা রোগ বাসা বাধে। এসব জেনেও অধিক মুনাফার আশায় তামাক চাষ বাড়ছে।সরকারিভাবে তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা মাঠে দেখা যায় না। উল্টো অন্য ফসলের প্রণোদনা এবং প্রদর্শনীও বরাদ্দও পাচ্ছেন তামাক চাষিরা। ফলে সরকারি বরাদ্দের সার ও অর্থে চাষাবাদ হচ্ছে তামাকে। কৃষি বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা তামাক কোম্পানির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে তামাক চাষিদের এমন সুযোগ দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। যারা তামাক চাষ ছেড়ে অন্য ফসলে ধাবিত হচ্ছে তাদের প্রণোদনা দিয়ে উৎসাহ দিলে তামাক চাষ কমে আসবে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।চাষিরা জানান, একই জমিতে দীর্ঘদিন তামাক চাষের ফলে বার্লি জাত তামাকের বড় বড় শিকড় জমির উর্বর শক্তি নষ্ট করে। ফলে তামাকের জমিতে অন্য ফসলের উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন একই জমিতে তামাক চাষ করায় এক সময় ওই জমিতে তামাকের ফলনও কমে আসে। লালমনিরহাটে বার্লি জাত তামাক চাষের শুরুতে যে পরিমাণ ফলন হতো, বর্তমানে ভাজিনা জাতের তামাক দ্বিগুণ ফলন হয় ফলে এ জেলায় তামাক চাষের জন্য লালমনির হাট জেলার তিস্তা চরম অঞ্চল মোগলহাট সীমান্ত সহ আদিতমারী উপজেলা ভাদাই ইউনিয়ন, সারপুকুর ইউনিয়ন ,মহিষখোচা ইউনিয়ন, দুর্গাপুর ইউনিয়ন, সাপ্টিবাড়ী ইউনিয়ন, কমলা বাড়ী ইউনিয়নের কিছু অংশ পলাশী ইউনিয়ন, কালীগঞ্জ উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নে তামাক চাষে আগের চেয়ে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে । তামাক কোম্পানিগুলো চাষিদের সঙ্গে অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক রাখেন এবং কৌশল প্রয়োগ করে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধকরণ করছে। সরকারের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখলেও তামাক কোম্পানির লোকজন নিয়মিত চাষিদের খোঁজ খবর নেন। তামাকবিরোধী কোনো সংগঠন বা গণমাধ্যমকর্মীরা এলাকায় এলে তাদের সঙ্গে কথা বলার নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছেন জাপান টোব্যাকো লিমিটেডের কর্মকর্তা সহ অন্যান্য কোম্পানিগুলো । তামাক চাষের কুফল চাষিদের নজরে না আসে সেই কৌশল প্রয়োগ করে চাষিদের অন্ধকারে ডুবে রাখে। তামাক চাষিরা জানান তামাক চাষে শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর,কিন্তু তামাকে যেমন টাকা আসে অন্য ফসলে তেমন টাকা আসে না। ভুট্টা ও সবজিসহ অন্য ফসলের সরকার নির্ধারিত কোনো মূল্য ধরা নেই,যা তামাকে আছে। ফলে অধিক পরিশ্রম ও বিনিয়োগ করেও অন্য ফসলে প্রায় সময় লোকসান গুনতে হয়। কিন্তু তামাকের বাজার মূল্য নির্ধারিত ও বিক্রির নিশ্চয়তা রয়েছে। লাভবান ফসল ও তার বিক্রির নিশ্চয়তা পেলে তামাক চাষ ছেড়ে দিবেন বলেও জানান চাষিরা।জাপান, আকিজ, নাসির, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোসহ বেশ কিছু তামাক কোম্পানিগুলো লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলায় নিজস্ব বড় বড় ক্রয় কেন্দ্র ও গোডাউন করেছেন। গত বছর ১০ হাজার টাকা খরচ করে ৪৫ হাজার টাকার তামাক পাতা বিক্রি করেছে। এমনও কৃষক রয়েছে এক বিঘা জমিতে তামাক চাষ করে মেয়ে বিয়ে দিয়েছে,গরীব চাষিদের যেখানে লাভ বেশি সেটাই চাষ করে বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের সাথে কথা বললে তারা বলেন আদিতমারী উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর কর্মকর্তাগণ ও তৃণমূল পর্যায়ে কৃষকদের সরকারী সহযোগিতা হতে বঞ্চিত করায় ক্ষিপ্ত হয়ে অনেকেই তামাক চাষে উদ্বুদ্ধকরণ হচ্ছে। ৫ টি উপজেলা কৃষি অফিসের দায়িত্বরত ইউনিয়ন সুপারভাইজার ( বি,এস) এর বাড়ী নিজ ইউনিয়নে হওয়ার সুযোগে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি করে আসছে বলে অনেকে অভিযোগ করেন, এই ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি ।