ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় সাম্প্রদায়িক উস্কানী মূলক প্রশ্ন তৈরী করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কলেজ শিক্ষক প্রশান্ত কুমার। মঙ্গলবার বিষয়টি জানাজানি হলে প্রশান্ত কুমার গা ঢাকা দিয়েছেন।
প্রশান্ত কুমার মহেশপুর উপজেলার মান্দারবাড়িয়া ইউনিয়নের কাঠগড়া ডাঃ সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক এবং তিনি যশোরের চৌগাছা উপজেলার হাজরা খানা গ্রামের মৃত দুলাল চন্দ্রপালের ছেলে।

কলেজের অধ্যক্ষ বলায় চন্দ্র পাল খবরের সত্যতা নিশ্চত করে জানান, গত রবিবার বারে বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রশ্নপত্র ভাইরাল হয় এবং সমালোচনার ঝড় উঠে। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে এব্যাপারে তোলপাড় সৃষ্টির পর তিনি ঘটনাটি জানতে পারেন। এরপর দেশের নানা প্রান্ত থেকে একের পর এক তার কাছে ফোন আসতে থাকে।
অধ্যক্ষ বলেন, মঙ্গলবার সকালে শিক্ষক প্রশান্ত কুমার সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন তৈরীর জন্য ক্ষমা ও দুঃখ প্রকাশ করে আমাকে ফোন করেন। তিনি জানিয়েছেন, ঢাকা বোর্ডে তিনি একটি সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরী করে পাঠিয়েছিলেন। সেটি মনোনীত হয়ে প্রশ্নের ১১ নং ক্রমিকে স্থান পেয়েছে। তার করা প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক ও সাম্প্রদায়িক উস্কানী তৈরী হওয়ায় তিনি মর্মাহত হয়েছেন। এরপর থেকে তার মুঠোফান বন্ধ রয়েছে, এমনকি তাকে বাড়িতেও পাওয়া যাচ্ছে না। অধ্যক্ষ বলায় চন্দ্র পাল বলেন, এখন শিক্ষা বোর্ড বা মন্ত্রনালয় যে শাস্তির নির্দেশনা প্রদান করবেন, সেই মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উল্লেখ্য, গত রবিবারে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বাংলা প্রথম পত্র সৃজনশীল ১১ নম্বর প্রশ্নে নাটক সিরাজউদ্দৌলা অংশে ধর্মকে সামনাসামনি করে উদ্দীপকে এ কথা বলা হয়। অভিযোগ উঠেছে প্রণীত প্রশ্নপত্র ধর্মীয় সংবেদনশীলতাকে ক্ষুন্ন করা হয়েছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে যে প্রশ্ন নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে তা ছিলো ‘নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। অনেক সালিশ-বিচার করেও কেউ তাদের বিরোধ মেটাতে পারেনি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এখন জমির ভাগ বণ্টন নিয়ে মামলা চলছে আদালতে। ছোট ভাই নেপাল বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আব্দুল নামে এক মুসলমানের কাছে ভিটের জমির এক অংশ বিক্রি করে। আব্দুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কোরবানির ঈদে সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কোরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙ্গে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে জমি-জায়গা ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে।’ এই উদ্দীপকের আলোকে প্রশ্ন করা হয়েছে-“(ক) মিরজাফর কোন দেশ হতে ভারত আসেন ? (খ) ঘরের লোক অবিশ্বাসী হলে বাইরের লোকের পক্ষে সবই সম্ভব। ব্যাখ্যা কর। (গ) উদ্দীপকের ‘নেপাল’ চরিত্রের সঙ্গে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ‘মিরজাফর’ চরিত্রের তুলনা কর। (ঘ) ‘খাল কেটে কুমির আনা’ প্রবাদটি উদ্দীপক ও ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটক উভয় ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য। উক্তিটির সার্থকতা নিরূপণ কর।” সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তরের জন্য উদ্দীপকে অনেক প্রাসঙ্গিক উদাহরণ টানা যেত। কিন্তু তা না করে এখানে সাম্প্রদায়িক উস্কানী দিয়ে প্রশ্ন প্রণয়ন করা হয়েছে।
বিষয়টি জানতে কাঠগড়া কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বিষয়টি নিয়ে যশোর শিক্ষাবেডর্রে চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আহসান হাবীব বলেন, এ জাতীয় প্রশ্ন যারা বা জিনি করেছেন তারা জঘন্য কাজ করেছেন এতে কারো দ্বিমত থাকার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, প্রশান্ত কুমার একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক। তার ২২ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এছাড়া তার লেখা বেশ কিছু বইও আছে। সেকারণে তিনি হয়তো জৈষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। প্রফেসর ড. আহসান হাবীব বলেন, যে মডারেটর প্রশ্ন করেন, সেই প্রশ্ন আমাদের দেখার কোন সুযোগ নেই। কোন ভুল ভ্রান্তি থাকলে তারাই আবার সংশোধন করে সিলগালাসহ বিজি প্রেসে পাঠিয়ে দেন। ফলে দায়ভার বোর্ডের নয়।
এ ব্যাপারে শিক্ষাবিদদের মন্তব্য, পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ধর্মকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। মুসলমানের কাছে জমি বিক্রি করে দেশ ত্যাগ করছে এমন তথ্য সমাজে ধর্মীয় ও সামাজিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে। শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবতাবোধ বাড়ানো। ধর্মে-ধর্মে সহিষ্ণুতা বাড়াতে কাজ করা।’ প্রশ্ন তৈরী করার ক্ষেত্রে অনেক চিন্তা করা প্রয়োজন ছিল বলে অনেকে মনে করেন।