রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর। মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) শুরু হচ্ছে তার এ সফর। দুইদিনের সফরে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে নজর দেবেন তিনি। দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধও গুরুত্ব পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। খবর রয়টার্স ও ভয়েস অব আমেরিকার।
পিটিআই’র প্রতিবেদন মতে, গত মাসের শেষের দিকে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মস্কো সফরের বিষয়টি জানায় রাশিয়া। এরপর গত বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ও রুশ উপপ্রধানমন্ত্রী এবং বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী ডেনিস মান্তুরোভের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি জানান, সামগ্রিকভাবে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক নিয়েই এই বৈঠকে আলোচনা করা হবে। সেই সঙ্গে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলি নিয়েও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবে দুই দেশ। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বরাবরের মতোই আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে অনুরোধ করবে ভারত।
এদিকে সফর শুরু হওয়ার আগের দিন সোমবার (৭ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাশিয়া ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আর্কটিক শেল্ফ ও রুশ দূর প্রাচ্যে সম্ভাব্য কিছু জ্বালানি প্রকল্প গুরুত্ব পাবে।
সর্বশেষ গত বছরের জুলাই মাসে রাশিয়া সফর করেছিলেন জয়শংকর। প্রায় ১০ পর চলতি বছরের এপ্রিলে ভারত সফর করেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ। ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন সংঘাত শুরু হওয়ার পর জয়শংকর ও ল্যাভরভ মোট চারবার সাক্ষাৎ করেছেন।
রাশিয়া-ভারত সম্পর্ক বেশ পুরনো। কূটনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি দেশ দুটির মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্কও বেশ উষ্ণ। গত চার দশকে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্য পাঁচ গুণ বেড়েছে। মস্কো ভারতে বিপুল তেল সরবরাহ করে; বিনিময়ে প্রচুর পরিমাণে কৃষিপণ্য, পোশাক ও ওষুধ কেনে।
বিশ্বের তেল আমদানিকারী দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় ভারত। সাধারণত রাশিয়া থেকে তেল কেনে না দেশটি। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় কম দামে তেল বিক্রি শুরু করে মস্কো। পশ্চিমাদের চোখরাঙানি সত্ত্বেও এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাশিয়া থেকে কম দামে তেল কিনছে ভারত।
গত এপ্রিলের পর রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানি ৫০ গুণেরও বেশি বেড়েছে। বর্তমানে ভারতের আমদানি করা অশোধিত তেলের ১০ শতাংশই আসে রাশিয়া থেকে। অথচ ইউক্রেন যুদ্ধের আগে এই হার ছিল মাত্র ০.২ শতাংশ।
যুদ্ধ ঘোষণা হওয়ার পর অনেক দেশ রাশিয়ার বিরোধিতা করলেও তেমন বিরোধিতা করেনি নয়াদিল্লি। মনে করা হয়, রাশিয়ার সঙ্গে ভারত একটা কৌশলী সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। তবে অধিকৃত ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ার সঙ্গে একীভূতকরণ নিয়ে জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা একটি নিন্দা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় নয়াদিল্লি।