ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াকে চাপ দিতে চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলজ। শুক্রবার (৪ নভেম্বর) সংক্ষিপ্ত চীন সফরকালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে এক বৈঠকে এ আহ্বান জানান তিনি। এক বিবৃতিতে বিষয়টি তিনি নিজেই জানিয়েছেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এরপর প্রায় নয় মাস ধরে অব্যাহত রয়েছে ওই অভিযান। কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে এখন পর্যন্ত একাধিক শীর্ষ বৈঠক হলেও সংঘাত বন্ধ হয়নি। উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনাও বন্ধ রয়েছে।
সম্প্রতি চীন ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের আরও উন্নতি হয়েছে। ইউক্রেন হামলার কয়েকদিন আগেই বেইজিং ও মস্কো নিজেদের সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্বাক্ষর করে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে রাশিয়া চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে।
শুক্রবার (৪ নভেম্বর) সকালে ব্যবসায়ী নেতাদের একটি প্রতিনিধি দলসহ এক দিনের ঝটিকা সফরে চীনের বেইজিংয়ে পৌঁছান জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলজ। করোনা মহামারির পর গত তিন বছরের মধ্যে প্রথম কোনো জি-৭ নেতা হিসেবে চীন সফর করলেন তিনি। পৌঁছার পর শলজসহ পুরো প্রতিনিধিদলকে করোনা পরীক্ষা করা হয়।
কয়েকদিন আগেই তৃতীয় মেয়াদে চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন জিনপিং। এমন একটা সময়ে জার্মান চ্যান্সেলরের এই সফর চীনা নেতৃত্বকে স্বাগত জানানোর জন্য হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সফরকালে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেন জার্মান চ্যান্সেলর। বৈঠকে নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক কাঠামো রক্ষার ওপর জোর দেন ওলাফ শলৎস। অন্যদিকে জার্মানির সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার ওপর জোর দেন জিনপিং।
বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে শলজ বলেন, জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চীনের প্রভাব কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট জিনপিংকে বলেছি, রাশিয়ার প্রতি প্রভাব খাটানো চীনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাশিয়ার উচিৎ এখনই ইউক্রেন সংঘাত বন্ধ করা। কারণ এতে বেসামরিক মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।’
জিনপিং বলেন, ‘পরিবর্তন ও অশান্তি’র এই সময়ে চীন ও জার্মানির মধ্যে আরও বেশি সহযোগিতার প্রয়োজন। প্রভাবশালী দুই দেশ হিসেবে বিশ্ব শান্তির স্বার্থে এমন সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে মতপার্থক্য সরিয়ে রেখে সহযোগিতার ক্ষেত্র চিহ্নিত করা উচিত বলে মনে করেন চীনা প্রেসিডেন্ট।
খবরে বলা হয়, বৈঠকে ইউরোপ-চীন সম্পর্ক, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও চীন-জার্মানি অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিকাশের মতো বিষয়গুলোও তুলে ধরেন শলজ। তাইওয়ান পরিস্থিতি ও শিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুর সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়নের মতো বিষয়গুলো নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে চীনের অস্বস্তি রয়েছে।
গত তিন বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো জি-৭ নেতা চীন সফরে গেলেন। ওলাফ শলজের চীন সফর নিয়ে কিছুটা বিতর্কও দেখা যাচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে চীনের দূরত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর মধ্যেই জার্মান চ্যান্সেলর বেইজিং সফরে গেলেন।
কড়া করোনা বিধির কারণে শলৎস ও তার প্রতিনিধিদলের সফরসূচি অত্যন্ত সীমিত করেছে চীন। শুক্রবার সকালে তাদের বিমান বেইজিংয়ে নামার পর বিমানের মধ্যেই চীনা চিকিৎসাকর্মীরা সব যাত্রীর করোনা পরীক্ষা করেন। অবশ্য এরপর তাদেরকে লাল গালিচা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাতে ভোলেনি চীন।