বিস্ময়কর বড় রকমের পালাবদল ঘটছে কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নাতে (সিপিসি)। বর্তমান ক্ষমতায় থাকা এ দলটির সর্বোচ্চ সাতজন নেতার মধ্যে চারজনকেই অবসরে যেতে হচ্ছে। এর মধ্যে আছেন প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং এবং চতুর্থ র্যাংকে থাকা ওয়াং ইয়াং। এই চারজনকে পদ থেকে সরিয়ে দিলে তাতে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আরও শক্তিশালী হবেন। তিনি পরিবেষ্টিত থাকবেন মিত্রদের দ্বারা। দ্য স্ট্রেইটস টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছেন তান ডন উই। তিনি পত্রিকাটির চায়না ব্যুরো প্রধান। তিনি লিখেছেন, কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না সিপিসির ২০তম সেন্ট্রাল কমিটি নতুন নির্বাচিতদের একটি তালিকা করেছে। তাতে লি কেকিয়াং অথবা ওয়াং ইয়াং- এ দুই বড় নেতার একজনের নামও দৃশ্যমান নয়। এই সম্মেলনে ২০৫ জন পূর্ণাঙ্গ এবং ১৭১ জন বিকল্প সদস্য নতুনভাবে বাছাই করা হয়েছে। এসব নাম এসেছে দল, সেনাবাহিনী এবং সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পর পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির ২ নম্বর পদে থাকা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং এবং অন্য নেতা ওয়াং ইয়াং দু’জনের কারো অবসরের বয়স হয়নি। তাদের দু’জনেরই বয়স ৬৭ বছর। দলে তিন নম্বর পদে থাকা ৭২ বছর বয়সী লি ঝানশু, সপ্তম অবস্থানে থাকা ৬৯ বছর বয়সী হ্যান ঝেং- তারাও নবগঠিত সেন্ট্রাল কমিটির বাইরে আছেন। এর অর্থ তারা পুরোপুরি অবসরে চলে যাবেন। ধারণা করা হচ্ছিল তারা পদত্যাগ করবেন।
অনানুষ্ঠানিকভাবে অবসরের নিয়ম ‘সেভেন আপ, এইট ডাউন’ হিসেবেই বেশি পরিচিত। এই নিয়মের অধীনে পুরনোদের জন্য ৬৭ বছর বয়স এবং স্ট্যান্ডিং কমিটিতে নতুন সদস্যদের জন্য বয়সসীমা নির্ধারণ করেছে। পলিটব্যুরোতেও নতুন মেয়াদ শুরুতে এই বয়স ধরা হয়েছে। যেসব রাজনীতিকের বয়স ৬৮ বছর বা তারও বেশি তারা অযোগ্য হবেন। এমন অবস্থায় লি কেকিয়াংয়ের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার কথা ছিল ওয়াং ইয়াংয়ের। বয়সের জ্যেষ্ঠতার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পরবর্তী দাবিদার তারই হওয়ার কথা ছিল। প্রচলিত রীতি বলে যে, যারা উপপ্রধানমন্ত্রী আছেন এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা রক্ষায় সক্ষম তাদেরকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হয়। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন ওয়াং ইয়াং। অন্য সব বিষয়ের সঙ্গে তিনি বাণিজ্যও দেখাশোনা করতেন।
সিপিসির কেন্দ্রীয় কমিটি বা সেন্ট্রাল কমিটির সদস্যরা দলের নতুন জেনারেল সেক্রেটারি, দলের পলিটব্যুরো এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যদের নির্বাচিত করেন। একই সঙ্গে তারা সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের সদস্য নির্বাচন করে। সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশন হলো চীনের সামরিক বিভাগের হাই কমান্ড। নবগঠিত সেন্ট্রাল কমিটির প্রথম প্লিনারি অধিবেশন হবে রোববার। সেখানেই এই কমান্ড নির্বাচন করা হবে। সেন্ট্রাল কমিটির সদস্যদেরকে ভোটের মাধ্যমে শনিবার নির্বাচিত করার কথা। এতে ২৩০০ ডেলিগেট-এর ভোট দেয়ার কথা। তারাই সিপিসির ৯ কোটি ৬০ লাখ সদস্যের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলের দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা সেন্ট্রাল কমিশন ফর ডিসিপ্লিন ইন্সপেকশনের সদস্যদেরকেও নির্বাচিত করেন ডেলিগেটরা। নব নির্বাচিত সদস্যদের তালিকার ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, দলের গুয়াংডংয়ের প্রধান লি শি দুর্নীতি বিরোধী এই সংস্থার প্রধান হতে পারেন। তিনি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের খুব কাছের। এই পদে বিজয়ীর নাম রোববার নতুন সেন্ট্রাল কমিটির মিটিংয়ে প্রকাশ করা হবে।