জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে একমাত্র ছেলেকে প্রশিক্ষণ নিতে দুর্গম পাহাড়ে পাঠান এক মা। কথিত হিজরতে পাঠিয়ে কোনো খোঁজ না পেয়ে ছেলেকে ফিরে পেতে দ্বারস্থ হন র্যাবের। এমন রোমহর্ষক তথ্য দিয়েছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। বুধবার (৯ নভেম্বর) সকালে কাওরানবাজারে মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান তিনি।
এদিকে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ২ অর্থদাতাসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।
র্যাব জানায়, আম্বিয়া সুলতানা এমিলি প্রায় চার বছর কর্মরত ছিলেন বিভিন্ন এয়ার লাইন্সে। স্বামী এবং ১৫ বছর বয়সী ছেলে আবু বক্কর রিয়াসাদ রাইয়ানকে (১৫) নিয়ে তারা থাকতেন নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায়। ২০২১ সালের শুরুর দিকে গৃহশিক্ষক আল-আমিনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন রাইয়ান ও তার মা এমিলি। যোগ দেন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে উগ্রবাদী সংগঠনে।
সবশেষ গত মার্চ মাসে ছেলেকে গৃহশিক্ষক আল আমিনের সঙ্গে কথিত হিজরতে পাঠান মা এমিলি। কিন্তু তার সন্তান এরপর থেকে আর যোগাযোগ না করায় জঙ্গিবাদ নিয়ে ভুল ভাঙে তার। ছেলেকে ফিরে পেতে যোগাযোগ করেন র্যাবের সঙ্গে। পরে এমিলিকে চারদিন ধরে ডি রেডিকালারইজড করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে র্যাব।
এরই মধ্যে পাহাড়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতে নিরুদ্দেশ আছেন রাইয়ান। অথচ এমিলি নিজেই ছেলেকে জঙ্গিবাদের পথে ঠেলে দিয়েছিলেন। পাহাড়ে গিয়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। নিরুদ্দেশ হয়ে বর্তমানে পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত ৫৫ জনের একজন এ রাইয়ান। তাকে ধরতে র্যাবের অভিযান চলছে বলেও জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।
গণমাধ্যমের সামনে সন্তানকে বিপথে পাঠানোর অনুশোচনায় ভেঙে পড়েন মা এমিলি।
তিনি বলেন, আমি একসময় এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রু ছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার ছেলেকে উদ্ধারের জন্য সহায়তা চাই। আমার ছেলের মতো যেন আর কোনো সন্তান এভাবে জঙ্গিবাদে না জড়ায়।
র্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, সারাদেশ থেকে নিরুদ্দেশ হওয়াদের তালিকায় তার ছেলের নাম রয়েছে। তাকেসহ নিখোঁজদের উদ্ধারে চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, উগ্রবাদী সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায় অর্থ সরবরাহকারীসহ তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়া ঠেকাতে সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছেন তারা।
র্যাব জানিয়েছে, গত মার্চে নারায়ণগঞ্জ থেকে আবু বক্কর রিয়াসাদ রাইয়ান নামের এক তরুণ নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় তার বাবা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। কিন্তু তখনো তিনি স্ত্রী-সন্তানের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি জানতেন না। পরে র্যাব নিরুদ্দেশ ৫৫ জনের তালিকা প্রকাশ করলে রাইয়ানের নাম প্রকাশ্যে আসে।
গত ৩ নভেম্বর র্যাব নতুন জঙ্গি সংগঠনটির মহিলা শাখা সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায়। এসময় পুলিশের এই এলিট ফোর্স জানতে পারে, একজন মা উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছে এবং তার সন্তানকে প্রশিক্ষণের উদ্দেশে হিজরতে (পাহাড়ে) পাঠিয়েছেন। গত ৫ নভেম্বর এমিলিকে উদ্ধার করার পর চারদিন ডি-রেডিকালাইজেশনের মাধ্যমে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ায় রাখা হয়।
উদ্ধারের পর এমিলি র্যাবকে জানান, তিনি ও তার ছেলে গৃহশিক্ষক আল আমিনের মাধ্যমে ২০২১ সালের শুরুর দিকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন এবং নতুন জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে রাইয়ান ২০২২ সালের মার্চে শিক্ষক আল আমিনের নির্দেশনায় প্রশিক্ষণের উদ্দেশে তথাকথিত হিজরতের নামে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর আর বাড়িতে ফিরেননি। গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি আল আমিনের নির্দেশনায় র্যাবের হাতে গ্রেফতার রনি মিয়া পাহাড়ে প্রশিক্ষণের জন্য রাইয়ানকে বান্দরবানে দিয়ে আসেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে র্যাব সদরফতর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১১ এর অভিযানে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠনটির অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী আব্দুল হাদি সুমন ওরফে জন, আবু সাঈদ শের মোহাম্মদ এবং রনি মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে তিনটি উগ্রবাদী বই, নয়টি লিফলেট এবং দুটি ব্যাগ।