আজ ১৫ নভেম্বর ২০২১ রাত ন’টার কিছু পরে রাজশাহী মহানগরীর নিজ বাসভবনে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। হাসান আজিজুল হক বাংলাদেশের ছোট গল্পকার এবং কথাসাহিত্যিক। ষাটের দশকে আবির্ভূত এই কথাসাহিত্যিক তার সুঠাম গদ্য এবং মর্মস্পর্শী বর্ণনাভঙ্গির জন্য প্রসিদ্ধ।জীবন সংগ্রামে লিপ্ত মানুষের কথকতা তার গল্প-উপন্যাসের প্রধানতম অনুষঙ্গ। রাঢ়বঙ্গ তার অনেক গল্পের পটভূমি। তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন ১৯৭০ সালে।১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে। এ ছাড়া ২০১২ সালে তিনি অসম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সন্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি পান।হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে এক সম্ভ্রান্ত এবং একান্নবর্তী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।বাবা মোহাম্মদ দোয়া বখশ, মা জোহরা খাতুন, স্ত্রী শামসুন নাহার বেগম। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজশাহীতে কাটিয়েছেন।১৯৫৮ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।১৯৬০ সালে একই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬০ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত তিনি রাজশাহী সিটি কলেজ, সিরাজগঞ্জ কলেজ, খুলনা গার্লস কলেজ এবং দৌলতপুর ব্রজলাল কলেজে অধ্যাপনা করেছেন।১৯৭৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত এক নাগাড়ে ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন।রাজশাহী কলেজে পড়ার সময় কলেজের উদ্যমী তরুণ মিসবাহুল আজিমের সম্পাদনায় প্রকাশিত ভাঁজপত্র ‘চারপাতা’য় হাসানের প্রথম লেখা ছাপা হয়। লেখাটির বিষয় ছিল রাজশাহীর আমের মাহাত্ম্য।খুলনায় এসে তার সাহিত্যসৃষ্টির উৎসমুখ খুলে গেল প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সন্দীপন’ কে কেন্দ্র করে।
ষাটের দশকের প্রথম দিকে নাজিম মাহমুদ, মুস্তাফিজুর রহমান, জহরলাল রায়, সাধন সরকার, খালেদ রশিদ প্রমুখ সংগ্রামী কয়েকজন তরুণের চেষ্টায় গঠিত হয়েছিল ‘সন্দীপন গোষ্ঠী’। ততদিনে অবশ্য হাসান আজিজুল হক রীতিমতো বিখ্যাত।
প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য’ এর প্রথম গল্প ‘শকুন’ এ সুদখোর মহাজন তথা গ্রামের সমাজের তলদেশ উন্মোচিত করেছিলেন তিনি। প্রায় অর্ধশতাব্দীর গল্পচর্চায় বিষয়, চরিত্র ও নির্মাণকুশলতায় উল্লেখ করার মতো গল্প হাসান আজিজুল হকের অনেক।
এ সবের মধ্যে রয়েছে ‘শকুন’, ‘তৃষ্ণা’, ‘উত্তরবসন্তে’, ‘বিমর্ষ রাত্রি, প্রথম প্রহর’, ‘পরবাসী’, ‘আমৃত্যু’ ‘আজীবন’, ‘জীবন ঘষে আগুন’, ‘খাঁচা’, ‘ভূষণের একদিন’, ‘ফেরা’, ‘মন তার শঙ্খিনী’, ‘মাটির তলার মাটি’, ‘শোণিত সেতু’, ‘ঘরগেরস্থি’, ‘সরল হিংসা’, ‘খনন’, ‘সমুখে শান্তির পারাবার’, ‘অচিন পাখি’, ‘মা-মেয়ের সংসার’, ‘বিধবাদের কথা’ ‘সারা দুপুর’ ‘কেউ আসেনি’।
‘আগুনপাখি’ নামে একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালে যা বর্ষসেরা উপন্যাসের স্বীকৃতি লাভ করে।