আজ ১৫ জুন; বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালী দিনের কিংবদন্তী অভিনেত্রী শাবানার জন্মদিন। ১৯৫২ সালের এ দিনে চট্টগ্রামের রাউজানের ডাবুয়া গ্রামে ফয়েজ চৌধুরী ও ফজিলাতুন্নেসা দম্পতির ঘর আলোকিত করেন জন্ম হয় তার। তার পূর্ণ নাম আফরোজা সুলতানা রত্না। কিন্তু চলচ্চিত্রে পা রেখেই শাবানা নামেই খ্যাতি অর্জন করেন এ কিংবদন্তী অভিনেত্রী।
শিক্ষাজীবনে শাবানা ছিলেন অমনোযোগী। গেন্ডারিয়া হাই স্কুলে ভর্তি হলেও তার পড়ালেখা ভালো লাগত না। শাবানা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ইতি ঘটে মাত্র নয় বছর বয়সে। শাবানার বাবার খালাতো ভাই ছিলেন চলচ্চিত্রকার এহতেশাম। তার মাধ্যমেই শাবানার চলচ্চিত্রে আগমন।
১৯৬২ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে ‘নতুন সুর’ চলচ্চিত্রে তার চলচ্চিত্রে আবির্ভাব ঘটে। পরে ১৯৬৭ সালে ‘চকোরী’ চলচ্চিত্রে চিত্রনায়ক নাদিমের বিপরীতে প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেন।
তিনি তার ৩৬ বছরের কর্মজীবনে ২৯৯ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। যার মধ্যে ১৩০ চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে ছিলেন আলমগীর। ষাট থেকে নব্বই দশকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন এ অভিনেত্রী।
দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি অভিনয়ের জন্য নয়বার ও প্রযোজক হিসেবে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এবং ২০১৭ সালে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন।
শিশুশিল্পী হিসেবে তিনি ইবনে মিজান পরিচালিত ‘আবার বনবাসে রূপবান’ এবং পার্শ্বচরিত্রে মুস্তাফিজ পরিচালিত ‘ডাক বাবু’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
পরের বছর ১৯৬৭ সালে এহতেশাম পরিচালিত উর্দু চলচ্চিত্র ‘চকোরী’-তে কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। এ চলচ্চিত্রে পরিচালক এহতেশামই তার ‘রত্না’ নাম বদলে শাবানা রাখেন।
সোশ্যাল ড্রামা থেকে অ্যাকশন, ফোক নানা ঘরানার সিনেমায় অভিনয় করেছেন শাবানা। তার উল্লেখযোগ্য কিছু সিনেমা হচ্ছে চকোরি, মধু মিলন, অবুঝ মন, চান্দ সুরজ, একই অঙ্গে এত রূপ, ছদ্মবেশী, ছন্দ হারিয়ে গেল, চৌধুরী বাড়ি, সমাধান, স্বীকৃতি, ওরা ১১ জন, অতিথি, ঝড়ের পাখি, জননী, মাটির ঘর, সখী তুমি কার, শেষ উত্তর, ছুটির ঘণ্টা, নাজমা, ভাত দে, দুই পয়সার আলতা, রজনীগন্ধা, লালু ভুলু, মা ও ছেলে, লাল কাজল, নালিশ, ঘরের বউ, সখিনার যুদ্ধ, নতুন পৃথিবী, হিম্মতওয়ালী, বাসেরা, হালচাল, চাঁপা ডাঙ্গার বউ, অশান্তি, বিরোধ, স্বামী স্ত্রী, অপেক্ষা, রাজলহ্মী শ্রীকান্ত, লালু মাস্তান, সারেন্ডার, রাঙা ভাবী, ব্যাথার দান, সত্য মিথ্যা, মরণের পরে, পিতা মাতা সন্তান, সান্ত্বনা, স্ত্রীর পাওনা, আন্ধি, অন্ধ বিশ্বাস, লহ্মীর সংসার, ঘাতক, ঘরের শত্রু, স্নেহ, কন্যাদান, সত্যের মৃত্যু নাই, স্বামী কেন আসামী, পালাবি কোথায় প্রভৃতি।
১৯৯৭ সালেহঠাৎ করেই অভিনয়ের ইতি টানেন শাবানা। তার অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র আজিজুর রহমান পরিচালিত ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’ ১৯৯৭ সালে মুক্তি পায়। এরপর তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে তার পরিবারের কাছে চলে যান এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
শাবানা ১৯৭৩ সালে ওয়াহিদ সাদিকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ওয়াহিদ সাদিক একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন।
২০০০ সালে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান শাবানা-সাদিক। শাবানা-সাদিক দম্পতির দুই মেয়ে সুমি ও ঊর্মি এবং এক ছেলে নাহিন।