শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৪ অপরাহ্ন
নোটিশ
যে সব জেলা, উপজেলায় প্রতিনিধি নেই সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। বায়োডাটা সহ নিউজ পাঠান। Email: newssonarbangla@gmail.com

বাজারে মৌসুমি সবজি শাপলা ফুল

সনতচক্রবর্ত্তী, ফরিদপুর
Update : বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৩, ৫:৪০ অপরাহ্ন

সনতচক্রবর্ত্তীঃ বর্ষা মৌসুম আসলেই  (মৌসুমি সবজি) শাপলার চাহিদা বেড়ে যায় মানুষের মাঝে। যার কান্ড বা ডগা সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। এটি পুষ্টিকর সবজি এবং বেশ সুস্বাদু। শাপলা  কয়েক রকমের হয়ে থাকে। তবে সাদা,নীল  ও লাল শাপলাই চোখে পড়ে বেশি। শহরে এটা তেমন দেখা না গেলেও গ্রামাঞ্চলের বিল-ঝিলে বেশি চোখে পড়ে।আলাদাভাবে এটা চাষ করা লাগে না। এমনিতেই জলাশয়, বিল বা ঝিলের পানিতে জন্মে- ফুল ফোটে। গ্রামের বাজারগুলোতে প্রতি আঁটি (৪/৫টা দিয়ে বাঁধা) শাপলা ৫/১০ টাকা করে বিক্রি হয়ে থাকে।
শাপলা ফুল শুধু গ্রামেই নয়, শহরেও তরকারি হিসেবে শাপলার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশের প্রায় সবখানে খাল, বিল, পুকুর, ডোবায় শাপলা পাওয়া যায়। বিলের একদল নিবেদিত প্রাণ এ শাপলায় সবজির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কাটাচ্ছেন নিজের সংসারের দৈন্যদশাও।
শাপলা সাধারণত স্রোতবিহীন জলাশয়ে জন্মে।
এটি দিনে ফোটে। এর মূল জলাশয়ের নিচে কাদার মধ্যে ডুবে থাকে। জলাশয়ের পানি বাড়লে এর ডাঁটাও বাড়তে থাকে। এর পাতা গোলাকৃতি ও আকারে থালার চেয়েও অনেক বড় হয়। এর সঙ্গেই লম্বা ডাঁটাসহ বিভিন্ন রঙের শাপলা ফুটে।
ফুলগুলো দেখতে তারার মতো মনে হয়। কুঁড়ি অবস্থায় শাপলা অনেকটা কলার মোচার মতো হয়ে থাকে। কুঁড়িটি আস্তে আস্তে ফুটে দু-এক দিনের মধ্যেই পূর্ণতা পায়।
শাপলা ফুল দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি উপকারীও বটে। শাপলার ডাঁটা গ্রামাঞ্চলে, এমনকি শহরেও অনেকে সবজি হিসেবে খায়। লাল রঙের শাপলা ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গ্রামবাংলার ছেলে-মেয়েরা এ ফুল দিয়ে মালা গাঁথে।বিভিন্ন এলাকায়  মঞ্চসজ্জার কাজেও এ ফুল ব্যবহৃত হয়। শাপলার ফুল থেকে আলুর মতো বড় বড় ফল হয়। এ ফল থেকে খই ও মোয়া তৈরি করা হয়।
শাপলা ফুলের বিভিন্ন নাম রয়েছে বাংলা নাম শাপলা ফুল, ইংরেজি নাম লিলি, মনিপুরী ভাষায় থরো, আংগৌরা, তামিল ভাষায় ভেলাম্বাল, সংস্কৃত ভাষায় কুমুডা, আসাম ভাষায় শাপলা ফুলকে নাল বলা হয়। শুধু বাংলাদেশ নয় শ্রীলংকায়ও জাতীয় ফুল এই শাপলা। শ্রীলংকায় শাপলাকে বলে নীল-মাহানেল। গ্রিক দার্শনিক প্লেটো ও এরিস্টটল এর এক শিষ্য থিউফ্রাস্টাস বলেছেন, এটা একটি জলজ উদ্ভিদ যা প্রায় ৩০০ খ্রিস্টপূর্ব পুরোনো।
গ্রাম অঞ্চলে একসময় শাপলা গাছের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন রোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতো। এর শুকনো ফুলের গুঁড়ো ঠাণ্ড ও কষায় উপকার করে। কলেরা, জ্বর ও যকৃতের অসুখ সারাতে শাপলার ফুল ব্যবহৃত হয়। বীজ বিভিন্ন চর্মরোগ এমনকি কুষ্ঠ রোগের ঔষধ। ডাঁটা বা নাল খেলে পাকস্থলী থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়। তবে সবচেয়ে উপকারী হলো শাপলা মোথা বা মূল। অর্শ, অজীর্ণ, শুক্রতারল্য ইত্যাদি রোগ নিরাময়ে মোথা কাজে লাগে।
ফরিদপুর জেলার  বিভিন্ন বাজারে ঘুরে ঘুরে শাপলা ফুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উজানী  গ্রামের স্বপন বিশ্বাস।
তিনি   জানান, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে প্রায় দুই থেকে তিন মাস খাল- বিলের মধ্যে পানি থাকে। তখন এলাকায় কৃষি কাজ কমে যায়। আর্থিক সংকটের কারনে তাদের শাপলা  বিক্রি করে সংসার  চলতে হয়। শাপলা বিক্রিতে বড় ধরনের কোন মূলধনের প্রয়োজন না হওয়ায় দরিদ্র পরিবারের অনেকেই বর্ষার মৌসুমে শাপলা বিক্রি করছেন।
তিনি আরও বলেন,  এক সময় সবজির দর চড়া থাকার কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চাহিদা  মেটাতো শাপলা ।কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের আজ ধনী -গরীব  সবার কাছে শাপলা তরকারি হিসেবে শাপলার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By Uttoron Host