ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ ছেলেকে কত কষ্ট করে পড়াশোনা করিয়েছি, কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি। ওর মা পাক (রান্না) করত, আমি ঘাড়ত (ঘাড়ে) করিয়া নিয়া ব্যাড়াছি, কবিতা শুনিয়ে ঘুম দিয়েছি, যখন যা খাইতে চাইছে খাওয়াইছি। জীবনের যত সঞ্চয় আনন্দ আছে, সবই সন্তানের জন্য বিলিয়ে দিয়েছি। এখন আমি বৃদ্ধাশ্রমে থাকি। এখনো ছেলের মুখে বাবা ডাক শুনতে মন চায়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের মেহেরুন নেছা বৃদ্ধাশ্রমের মোজাম্মেল হক (৭০) নামে এক অসহায় বাবা।বাবা দিবসে সঙ্গে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, যে ছেলের জন্য জীবনের সমস্থ রং ফ্যাকাশে হয়েছে, রক্ত পানি করেছি, সেই ছেলে আজ আমাকে ভুলে গেছে। এর চেয়ে কষ্ট আর কী হতে পারে।
মেহেরুন নেছা বৃদ্ধাশ্রমটিতে ১১ জন বাবা আর ১৯ জন মা রয়েছেন। তাদের মধ্যে দু-একজন ছাড়া সবারই ছেলে-মেয়ে আছে। শেষ বয়সে মা-বাবাকে বোঝা মনে করায় সবারই আশ্রয়স্থল হয়েছে এখানে।
সম্পূর্ণ মানুষের দানে চলা বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালক আপেল মাহমুদ। ৩০ জন মা-বাবার জন্য নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছেন তিনি। প্রতিনিয়ত তাদের খোঁজখবর নিয়ে থাকেন। নিজের মা-বাবার মতোই তাদেরও সেবা করেন।আপেল মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১৭ সালে বৃদ্ধাশ্রমটি প্রতিষ্ঠা করি। এরপর থেকে বিভিন্ন দান ও মানুষের সহায়তায় বৃদ্ধাশ্রমটি পরিচালিত হয়ে আসছে।
তিনি আরও বলেন, এখানে যে বৃদ্ধরা রয়েছেন, আমি চেষ্টা করি তাদের পাশে থাকার জন্য। তাদের চাহিদা পূরণ করার জন্য। তবে একটি চাহিদা আমি পূরণ করতে পারি না, তা হলো ছেলে-মেয়ের চাহিদা। ছেলে-মেয়ের ডাক শুনতে না পারা যে কত কষ্টের, তা অনুভব করতে পারি, এটা নিয়ে তারা প্রতিনিয়ত দুঃখ প্রকাশ করেন।
তিনি বাবা দিবসে বিশ্ববাসীর কাছে অনুরোধ করে বলেন, বাবারা অনেক কষ্ট করে ছেলে-মেয়েদের মানুষ করেন, নিজে না খেয়ে সন্তানদের খাওয়ান, এই বাবাদের কেউ কষ্ট দেবেন না। বাবা-মাকে যাতে বৃদ্ধাশ্রমে এসে জায়গা নিতে না হয়। ছেলে-মেয়েরা বাবা-মাকে আগলে রাখবেন। তিনি সর্বোপরি দেশের বিত্তবান মানুষদের বৃদ্ধাশ্রমটির পাশে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।