পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে আরও কাছাকাছি হলো চীন ও রাশিয়া। শুক্রবার (১০ জুন) দেশ দুটির মধ্যে একটি দীর্ঘ সড়ক সেতু চালু হয়েছে। চলমান ইউক্রেন অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে মস্কো যখন এশিয়ার দিকে ঝুঁকছে, তখন এশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতির দেশটির সঙ্গে সড়ক সেতুর উদ্বোধন বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্বের বৃহত্তম ১০টি নদীর একটি আমুর। ৪ হাজার ৪৪৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নদীটি রাশিয়া, চীন ও মঙ্গোলিয়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই আমুর নদীর ওপর প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। ১ হাজার ৯০০ কোটি রুবল বা ৩২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে।
রাশিয়ার ব্লাগোভেসচেনস্ক শহরের সঙ্গে চীনের উত্তরাঞ্চলীয় শহর হেইহে সংযুক্ত করেছে সেতুটি। এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেতুটির নির্মাণকাজ দুই বছর আগেই সমাপ্ত হয়েছে। তবে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এর উদ্বোধন স্থগিত রাখা হয়।
শুক্রবার ব্লাগোভেসচেনস্কে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সেতুটি উন্মুক্ত করা হয়। পণ্যবাহী ট্রাকের মাধ্যমে সেতুর উদ্বোধন করা হয়। সেতুটিতে যান চলাচলের জন্য দুটি লেন রয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর শীতল যুদ্ধের সময় বিরোধপূর্ণ অবস্থানে থাকলেও সাম্প্রতিক বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মস্কো ও বেইজিং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়িয়েছে। উভয় দেশই যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক প্রভাব মোকাবিলায় পাল্টা ভারসাম্য সৃষ্টির প্রচেষ্টা হিসেবে এই সহযোগিতাকে বিবেচনা করে থাকে।
রাশিয়া ও চীনের ৪ হাজার ২৫৯ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। ১৯৮০-র দশকের শেষ দিকে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার পর দেশ দুটির বাণিজ্য বেড়েছে। তবে পরিবহন অবকাঠামোর ঘাটতির কারণে বাণিজ্য বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
পশ্চিমের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় মস্কো এশিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ইগর মরগুলভ জানিয়েছেন, চলতি বছর রাশিয়া-চীন বাণিজ্য ২০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।
তাস-এর বরাত দিয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আরটি জানিয়েছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ রাশিয়া ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য লেনদেন ২০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বুধবার (১ জুন) সপ্তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ‘রাশিয়া ও চীন: একটি নতুন যুগে সহযোগিতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মরগুলভ বলেন, ‘স্পষ্টতই আমরা ২০০ বিলিয়ন ডলারের ট্রেড টার্নওভার অর্জন করতে সক্ষম হব, যা আমাদের নেতারা নির্ধারণ করেছিলেন।’
এ সময় তিনি মস্কো ও বেইজিংয়ের মধ্যকার সম্পর্ক ভঙ্গ না হওয়া এবং পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো তাদের বিচ্ছিন্ন করার সবশেষ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার ওপর জোর দেন।
ফেব্রুয়ারিতে একটি ‘নো-লিমিট’ অংশীদারত্বের ঘোষণাসহ বেশ কয়েক বছর ধরে দেশ দুটি সম্পর্ক দৃঢ় করছে। এদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে নিন্দা করতেও অস্বীকার করে বেইজিং। একই সঙ্গে মস্কোর ওপর পশ্চিমাদের বারবার নিষেধাজ্ঞার সমালোচনাও করেছে চীন।
ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার ছিল। ২০২১ সালে ইইউর সঙ্গে রাশিয়ার মোট বৈদেশিক বাণিজ্যিক লেনদেনের পরিমাণ ২৮২ বিলিয়ন ডলার ছিল। এ ছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বার্ষিক গড় বাণিজ্য ছিল ৩১ বিলিয়ন ডলার।
বুধবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ চীনের সঙ্গে তার দেশের কৌশলশত সম্পর্কের ‘অক্ষয় সম্ভাবনা’ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং ‘তথ্যযুদ্ধ’ সত্ত্বেও বেইজিংয়ের সঙ্গে মস্কোর সহযোগিতা বাড়ার পাশাপাশি তীব্রতর হতে থাকে।