নিশ্চয় আমাদের অনেকেরই মনে আছে ছুটির ঘন্টা ছবির সেই বিখ্যাত গানটির কথা “মাষ্টার সাব আমি নাম দস্তখত শিখতে চায়” ইদানিং দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা যাচ্ছে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের সাথে শিক্ষক কিম্বা অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিসহ দেশের অতি অবুঝ (স্ব-শিক্ষিত) মানুষের সাথে স্যার সম্মোধন নিয়ে দুই একটি অশোভনীয় ঘটনার অবতারনা ঘটছে, যেটা আমাদের মত কিছু ব্যক্তির হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে! এই দুই দিন পূর্বে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জন শিক্ষক রংপুরের জেলা প্রশাসক মহোদয়ের দপ্তরে একটা সামাজিক অনুষ্ঠান সংক্রান্ত বিষয়ে আলাপ করতে গিয়েছিলেন,আলাপ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জেলা প্রশাসক মহোদয়কে “আপা” সম্মোধন করে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসতেই জেলা প্রশাসক মহোদয় কিছুটা রাগান্বিত হয়ে ঐ শিক্ষককে প্রশ্ন করেন আপনি স্যার না বলে আপা বললেন কেন? সাথে সাথে আবারও প্রশ্ন আমি ডিসি হিসাবে মহিলা না হয়ে পুরুষ হতাম তাহলে কি বলতেন? (উনি মহিলা) এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষকের সোজা সাফটা উত্তর ভাই বলতাম, এতেই বিপত্তি! বিশ্ব বিদ্যালয়ের ঐ শিক্ষক জেলা প্রশাসকের এমন আচরণে অপমান বোধ করেন, এবং এর প্রতিবাদে তাঁর ছোট্ট অক্ষরকে সাথে নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে প্লেকার্ড হাতে নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রধান ফটকে বসে পড়েন। পরবর্তীতে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা উদ্ভূত পরিস্থিতির সাথে সহমত প্রকাশ করে একাত্মতা ঘোষণা করেন। এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক মহোদয় নিজের ত্রুটি বুঝতে পারেন এবং ভুল স্বীকার করে মিডিয়ার সামনে বেশ হাস্যমুখ নিয়ে কথা বলেন। আমার প্রশ্ন হলো এখানেই কি সব কিছু নিষ্পত্তি হয়ে গেল? আমার তো মনে হয় না এখানেই নিষ্পত্তি হয়ে গেল, কারন এই ঘটনা জানার পর আমার মত হাজারও শিক্ষক এবং সাধারণ মানুষের হৃদয়ে যে রক্ত ক্ষরণ হয়েছে তাঁর কি কোন সমাধান হলো? শুধু শিক্ষক নয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার প্রতিটি নাগরিক চায় এর একটি স্থায়ী সমাধান। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তাঁর এক ভাষণে বলেছিলেন বাংলাদেশ এখন আর বৃটিশ কলোনী নয়, পাকিস্হানীদের শোষিত রাষ্ট্র নয়, স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকদের ট্যাক্সের টাকায় তোমাদের মাইনে হয়, তোমরা জনগনের খাদেম হিসেবে কাজ করবে। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর রক্তের ফসল গনতন্ত্রের অলংকার জননেত্রী শেখ হাসিনার অর্জনকে মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তির অসংযত আচরণের কারনে বিতর্কিত না হয় সে দিকে আমাদের সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে। প্রাইমারী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় সহ সকল শিক্ষকের যথাযথ সম্মান নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের যেমন দায়িত্ব থাকবে ঠিক শিক্ষকগণেরও দায়িত্ব তাদের পেশার মর্যাদার কথা ভেবে সর্বত্র সচেতন ভাবে সদাচারণ করা। শিক্ষা যদি হয় জাতির মেরুদন্ড, তাহলে শিক্ষকগণ হলো একটি সুন্দর শক্তিশালী দক্ষ জাতি গঠনের প্রধান এবং এক মাত্র নিয়ামক শক্তি। নিশ্চয় আশা করতেই পারি ভবিষ্যতে এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনার অবতারনা ঘটবে না। জয় বাংলা
অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম, সভাপতি
স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ (স্বাশিপ) হরিণাকুণ্ডু উপজেলা শাখা, ঝিনাইদহ।