শুক্রবার (২৩ জুলাই) ডেঙ্গু রোগের জীবাণুবাহী এডিস মশার উপস্থিতি নিয়ে নিয়মিত জরিপে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি জানান, দেশে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে শুক্রবার (২৩ জুলাই) থেকে ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। এসময় বন্ধ থাকবে সবকিছু ফলে খোলা জায়গা ও নির্মাণাধীন স্থাপনায় কীটনাশক ছেটানো না হলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।
ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘জুনের শুরুতে আমরা দেখেছি, এডিস মশার ঘনত্ব অনেক বেশি। সেই অনুযায়ী জুলাই মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ার কথা বলা হয়েছিল, বেড়েছেও। এ সংখ্যা আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে আরও বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘লকডাউনে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ না হওয়ায় সেগুলো মশার প্রজননস্থল হিসেবে কাজ করায় আগামী মাসে রোগী আরও বাড়বে। খোলা যায়গা, বাসার ছাদ ও নির্মাণাধীন স্থাপনায় কীটনাশক ছেটানো ও জরুরি পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গু রোগী নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।’
এদিকে, রাজধানীতে অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ, যা সবারই ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত-মৃত্যুর মধ্যেই শঙ্কা বাড়াচ্ছে ডেঙ্গু।
শুক্রবার (২৩ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু সংক্রান্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৮৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের সবাই রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ডেঙ্গুতে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ৩৯০ জন। এদের মধ্যে ৩৮৭ জনই ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অবশিষ্ট তিনজন ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে শুক্রবার (২৩ জুলাই) পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে মোট এক হাজার ৪৭০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক হাজার ৭৭ জন।
তবে চলতি বছর দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, প্রতিবছর বর্ষাকালেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়েছিল। দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩০০ মানুষ প্রাণ হারান। তবে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১৭৯। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, ওই বছর সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে আবাসস্থল নিয়মিত পরিষ্কার রাখার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বলেছে, এডিস মশা যেহেতু অভিজাত এলাকায়, বড় বড়, সুন্দর সুন্দর দালান কোঠায় বসবাস করে ও সেখানে থাকা স্বচ্ছ পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে তাই এসব আবাসস্থল নিয়মিত পরিষ্কার রাখা এ রোগের বিস্তার রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ।
আর মশার আক্রমণ থেকে বাঁচতে ঘরের দরজা ও জানালায় মশারীর নেট লাগানোর উপর জোর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রয়োজনে দিনের বেলায় ঘুমালে অবশ্যই মশারি টাঙ্গিয়ে বা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতে বলেছে।