আজ ভয়াল ২৫ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র নিয়ে নির্মম হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে পাকিস্তানি বাহিনী। গণহত্যার নীলনকশা–অপারেশন সার্চলাইট বাস্তবায়নে সাঁজোয়া যানের সাঁড়াশি অভিযানে নির্বিচারে শহীদ হন অগণিত মানুষ। বাঙালি নিধনযজ্ঞের ৫২ বছর পরও একাত্তরে যে গণহত্যা চলেছে তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া যায়নি। গবেষকরা বলছেন, তা পেতে জোরালো উদ্যোগ নিতে হতে হবে সরকারকে।১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ। মধ্যরাতের ঢাকা। এ এক এমনই রাত, যে রাত, রাতের চেয়েও অন্ধকার। মুক্তিকামী বাঙালির ওপর নেমে আসে জলপাই রঙের ট্যাঙ্কের তাণ্ডব। নিস্তব্ধ আঁধার ভেদ করে শহরজুড়ে বর্বরতার আর্তনাদ। নিধনযজ্ঞে মেতে ওঠে ইয়াহিয়ার দোসররা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল রক্তে রঞ্জিত হয়। শুধু শিক্ষার্থীরাই নন, নির্বিচারে হত্যা করা হয় শিক্ষকদেরও। আক্রান্ত হয় ইপিআর সদর দফতর পিলখানা। পাকিস্তানি সেনারা আক্রমণ চালায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। সামান্য সম্বল নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ইপিআর এবং পুলিশ সদস্যরা।
একদিকে যখন হত্যাযজ্ঞ অন্যদিকে তখন চলছে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের আয়োজন। সেটি বুঝতে পেরে গ্রেফতারের আগেই জাতির পিতা দিয়ে যান স্বাধীনতার ঘোষণা। ২৬ মার্চ ১৯৭১। যুক্তরাষ্ট্রের এবিসি চ্যানেল বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৭টায় জানায়, সেই ঘোষণার খবর। সম্প্রতি গবেষক মেসবাহ কামালের এক বন্ধু যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই ভিডিওটি সংগ্রহ করেন।
জন-ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, ২৬ মার্চ সকাল সাড়ে ৭টা থেকেই এবিসি টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে বিশ্ববাসী জানতে পারে যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন।গবেষকরা বলছেন, ওই এক রাতেই অন্তত অর্ধলক্ষ বাঙালিকে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। ছয় বছর ধরে ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করছে বাংলাদেশ। কিন্তু ১৯৭১ সালে নয় মাসে যে গণহত্যা হয়েছে তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করার দাবি তুলছেন তারা।
এ বিষয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘এই দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির উদ্যোগ নেয়ার কোনো সুযোগ নেই এই জন্য যে, ২০১৫ সালে জাতিসংঘে সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হবে। বাংলাদেশও সেটা অনুমোদন করেছে। তাই এ ক্ষেত্রে বলতে হবে নয় মাসের আন্তর্জাতিক গণহত্যার স্বীকৃতির উদ্যোগ নিতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের সরকার নয় মাসের আন্তর্জাতিক গণহত্যার স্বীকৃতির কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।’
অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় পরিসরে আন্তর্জাতিক মহলে ক্যাম্পেইন চলতে পারে। পাশাপাশি গবেষকদের গবেষণাও চলতে পারে। কিন্তু সেই গবেষণাকে সহযোগিতা করা দরকার।’
২৫ মার্চের সেই রাতের পর অদম্য সাহসে রুখে দাঁড়ায় বাঙালি। এক সাগর রক্ত পেরিয়ে উদিত হয় স্বাধীনতার লাল সূর্য।