নিউজ ডেস্ক: করোনাসময়ে বিগত বছরে রেমিট্যান্স এসেছে রেকর্ড পরিমাণ। গত বছর জুলাইয়ে এক মাসে সর্বোচ্চ ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্সের রেকর্ড হয়। কিন্তু এ বছরে জুলাইয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহের হার কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। সামনের দিনগুলোতেও রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুসারে, এক বছর আগের তুলনায় চলতি বছরের জুলাইয়ে রেমিট্যান্স ২৮ শতাংশ কমে ১৮৭ কোটি ডলার হয়েছে। সাধারণত ঈদ উপলক্ষে প্রবাসীরা দেশে থাকা পরিবার-পরিজনের জন্য কিছু বাড়তি অর্থ পাঠান। কিন্তু, গত জুলাইয়ে ঈদ থাকা সত্ত্বেও আগের মাসের চেয়ে ৩ শতাংশ কমেছে প্রবাসী আয়ের অন্তর্মুখী প্রবাহ।
এনিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ড. মুস্তাফিজুর রহমান জানান, নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশ এ খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখতে পারে। গত অর্থবছরে অনেক প্রবাসী তাদের শেষ সঞ্চয়টুকু দেশে পাঠান, তাই চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) ২৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স অর্জন করা বেশ কঠিন হবে। মহামারির মধ্যে অর্জিত রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে এমন আশা করা উচিত হবে না। প্রবৃদ্ধির পেছনে তখন যে অনুঘটকগুলো কাজ করছিল, এখন সেগুলোর কোনো প্রভাব নেই।
বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাইয়ে এক বছর আগের তুলনায় রেমিট্যান্সের বাংলাদেশমুখী প্রবাহ ৬২.৫ শতাংশ বেড়ে ২৬০ কোটি ডলার হয়। এছাড়াও, ২৪.৭৮ বিলিয়ন ডলারের অর্জন নিয়ে মহামারির মধ্যেই সর্বকালের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায় রেমিট্যান্স।
রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন প্রবাসী আয়ে হঠাৎ চাঙ্গাভাব লক্ষ্য করছিল, আমরা তখনই বলেছিলাম এটা স্বাভাবিক প্রবণতা নয় এবং ধীরে ধীরে আয় প্রবাহ মহামারি পূর্ব সময়ের অবস্থায় ফিরবে।’
তিনি বলেন, ‘মহামারি মধ্যে প্রায় ৫ লাখ প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরে এসেছেন। গত বছর বিদেশে চাকরির বাজারও উল্লেখযোগ্য হারে সংকুচিত হয়। আমরা হয়তো এসব ইস্যুর মিলিত প্রভাবই দেখতে পাচ্ছি। তবে আগামী দিনে রেমিট্যান্স অর্জনের হালচিত্র বুঝে উঠতে হলে- আরও কয়েক মাসের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে হবে।’
গত ডিসেম্বরে রামরু প্রক্ষেপণ করে যে, ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বছরওয়ারি অভিবাসন হার এরমধ্যেই ৭১ শতাংশ কমেছে, তাই বৃদ্ধি পাওয়া রেমিট্যান্স প্রবাহ ২০২১ সালেই হোঁচট খাবে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যসূত্রে প্রকাশ, ২০১৯ সালে নতুন নিয়োগ পাওয়া ৭ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে যান, সে তুলনায় গত বছর গিয়েছেন মাত্র ২.১৭ লাখ কর্মী। এ বছর মে মাস পর্যন্ত ১.৯৫ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য দেশত্যাগ করেছেন।