ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ব্যাংকের এমডি পদে কী ‘মধু’ আছে? সেটা আমি জানি না। এমডি পদে থাকলে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নেয়া যায়, পয়সা মারা যায়। গরিবের রক্ত চুষে খাওয়া যায়।সোমবার (১৩ মার্চ) বিকেলে কাতার সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, একজন ভদ্রলোক একটি ব্যাংকের এমডি, তাকে এমডি পদে বহাল রাখতে; কোনো একটি দেশের অ্যাম্বাসেডর, পাররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের টেলিফোনের ওপর টেলিফোন আসতে থাকে। এমডি পদের কী মধু আছে? সেটা তো আমি জানি না। আইনে আছে ৬০ বছর (চাকরির বয়স), তার হয়ে গেছে ৭০ বছর। তারপরও তাকে এমডি পদে থাকতে হবে। এমডি পদে থাকলে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নেয়া যায়, পয়সা মারা যায়। গরিবের রক্ত চুষে খাওয়া যায়।
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার বিজ্ঞাপন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা ঠিক বিবৃতি না, এটা একটি অ্যাডভার্টাইজমেন্ট- উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে ৪০ জনের নাম ব্যবহার করেছে আমাদের বিশেষ একজন ব্যক্তির পক্ষে, এর উত্তর কী দেব জানি না। আমার একটা প্রশ্ন আছে, প্রশ্নটা হলো যিনি এত নামীদামি নোবেল প্রাইজপ্রাপ্ত তার জন্য ৪০ জনের নাম খয়রাত করে এনে অ্যাডভার্টাইজমেন্ট দিতে হবে কেন? তাও আবার বিদেশি পত্রিকায়। এটাই আমার প্রশ্ন আর কিছু না।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমার দেশে কতগুলো আইন আছে। সেই আইন অনুযায়ী সব চলবে এবং চলে। আমাদের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। আমরা শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণ করি। যারা ট্যাক্স ঠিক মতো দেয়, আলাদা বিভাগ আছে, তারা ট্যাক্স আদায় করে। কেউ যদি এই সব বিষয়ে কোনো রকম আইন ভঙ্গ করে, শ্রমিকদের অধিকার; শ্রম আদালত সেটা দেখে। এখানে তো আমার কিছুই করার নেই, সরকারপ্রধান হিসেবে। সেখানে আমাকে কেনইবা বলা হলো? এর বাইরে আমি কী বলব? পদ্মা সেতু কিন্তু করে ফেলেছি, খালি এটুকু সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিলাম।’
নির্বাচন নিয়ে আন্তার্জাতিক চাপ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কে কী চাপ দিলো না দিলো, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। জনগণের স্বার্থে যেটা করার, আমরা সেটাই করব। আমার শক্তি একমাত্র জনগণ। উপরে আল্লাহ আছে আর বাবার আশীর্বাদের হাত আমার মাথায় আছে।’
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী কাতারে সম্মেলন নিয়ে বলেন, ‘সম্মেলনে কোভিড মহামারি ও চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানি ও আর্থিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য গৃহীত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করার দাবি জানিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, আর্থিক সহায়তা, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ, প্রযুক্তি হস্তান্তর, নিরাপদ অভিবাসন, জলবায়ু অর্থায়ন প্রাপ্তি ইত্যাদি বিষয়ে স্বল্পোন্নত দেশের বিশেষ প্রয়োজনের কথা তুলে ধরি। এ ছাড়া বাংলাদেশসহ উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর উন্নয়ন অর্জনকে গতিশীল রাখতে বর্ধিত সময়ের জন্য এলডিসিদের জন্য প্রযোজ্য অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের উত্তরণযাত্রা ত্বরান্বিত করতে আমাদের সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি উত্তরণমুখী দেশগুলোর পক্ষে পাঁচ দফা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করি।’
তিনি বলেন, ‘এই সম্মেলনে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে এটাই সম্ভবত বাংলাদেশের শেষ অংশগ্রহণ। কারণ ২০২৬ সালে আমরা এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাব।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘সম্মেলনে আমি বাংলাদেশের অভাবনীয় আর্থসামাজিক উন্নয়ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরি। একইসঙ্গে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে মসৃণ ও টেকসই উত্তরণ নিশ্চিত করতে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে আমাদের বিভিন্ন দাবি ও প্রত্যাশার কথা উত্থাপন করি।’
গত বুধবার (৮ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী কাতার সফর শেষে দেশে ফেরেন। ওইদিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট ঢাকায় হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল-থানি ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে এলডিসি সম্মেলনে যোগ দিতে ৪ মার্চ কাতার সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কাতার সফরকালে প্রধানমন্ত্রী এলডিসি-৫-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানসহ বেশ কয়েকটি ইভেন্টে যোগ দেন। ওইসব অনুষ্ঠানে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষে কথা বলেন তিনি।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল-থানির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে কাতার থেকে এলএনজি আমদানি, প্রবাসী শ্রমিকদের ইস্যুসহ দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ বিষয়ে আলাপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সফরে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস, জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট সাবা কোরোসি, কাতার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শেইখা মোজা বিনতে নাসেরের সঙ্গে বৈঠক করেন।