নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহমিদ। করোনাকালে হঠাৎ করেই টাকার প্রয়োজন হয় তার। বন্ধু-বান্ধব কিংবা পরিচিতজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও যোগাড় করতে পারেননি প্রয়োজনীয় অর্থ।
এসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাশম্যান নামের অ্যাপভিত্তিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পান তিনি। প্রতিষ্ঠানটি ৩-৬ মাস মেয়াদে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা ঋণ দিয়ে থাকে। অ্যাপটি ডাউনলোড করে একাউন্ট খুলতে তাহমিদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র, ফোন নম্বর এমনকি পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া হয়।
যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে তিন হাজার টাকার ঋণের আবেদন করেন। আবেদনটি গ্রহণ করা হলেও তাহমিদ পান ২১৯০ টাকা। সার্ভিস চার্জের নামে প্রতিষ্ঠানটি কেটে নেয় ৮১০ টাকা। এখানেই শেষ নয়। ঋণ পরিশোধে তাহমিদকে সময় দেওয়া হয় তিন কিংবা ছয়মাস নয়; মাত্র ৭ দিন। তাও পরিশোধ করতে হবে ৩০১৮ টাকা। অর্থাৎ তিন হাজার টাকায় বাড়তি গুণতে হবে ১৬৩৮ টাকা।
পুড়তে হবে না কাঠখড়, ক্ষয় হবে না জুতার তলাও। লাগবে না কোন জামানত। চাইলেই কয়েক মিনিটেই পাওয়া যাবে ঋণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন প্রলোভন দেখিয়ে পাতা হচ্ছে ঋণের ফাঁদ। জামানতবিহীন ঋণের হাতছানিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন তাহমিদের মতো অনেকেই।
অনুসন্ধানে দেখা যায় বর্তমানে ফেসবুকে র্যাপিড ক্যাশ, ক্যাশম্যান, ক্যাশক্যাশ, টাকাওয়ালা, এমক্যাশ বাংলাদেশ’সহ বেশকিছু অ্যাপসভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
প্রচলিত ব্যাংকিং নিয়মে একজন গ্রাহককে সুদ দিতে হয় ঋণের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। অথচ অ্যাপভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে সার্ভিস চার্জের নামে গ্রাহককে সুদ দিতে হচ্ছে ৫০ শতাংশের বেশি। অভিযোগ আছে গ্রাহকের ফোন হ্যাক করারও।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অ্যাপসগুলোর ফেসবুক পেইজে গিয়ে দেখা যায় অফিসের কোনো ঠিকানা নেই। দেওয়া হয়নি যোগাযোগের নম্বরও। তবে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পাওয়া নম্বর নিয়ে র্যাপিড ক্যাশ ও ক্যাশম্যানের কাস্টমার কেয়ারে ফোন দেয়া হয়। অনলাইনে ঋণ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন আছে কিনা সেসব বিষয়ে জানতে অফিসের ঠিকানা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে চাইলে, তা দিতে অস্বীকৃতি জানান গ্রাহক প্রতিনিধিরা।
এসব অ্যাপভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কত টাকা লেনদেন হচ্ছে তার কোনো তথ্য নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানেই না এসব অ্যাপভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বের কথা।
অ্যাপভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভুক্তভোগীদের পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের ফেসবুকে পেইজে অভিযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ। একইসাথে প্রতারণার বিষয়ে সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।