রকিবুল ইসলাম, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাত কর্মসূচির আওতায় লালমনিরহাট জেলার ৪৫টি ইউনিয়নের ৪শত ৫টি ওয়ার্ড ও ২টি পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ডে মোট ১লক্ষ ৩১হাজার ৪শত ৩০জন ভাতাধারীকে তাদের ব্যক্তিগত বিকাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পবিত্র ঈদ উল ফিতরের আগেই বয়স্ক, বিধবা ও অসচ্ছল ভাতার ৩হাজার টাকা এবং প্রতিবন্ধী ভাতার ৪হাজার ৫শত টাকা করে মোট ৩৯কোটি ৪২লক্ষ ৯০হাজার টাকা পৌঁছে দিবে জেলা প্রশাসন। এ খাতের ভাতা ভোগী ব্যক্তিদের হাতে লেখা অ্যানালগ বই নিয়ে ব্যাংকে কিংবা স্থানীয় সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়ে টাকা উত্তোলনের জন্য আর ধরনা দিতে হবেনা বয়স্ক ও প্রতিবন্দ্বীদের। তবুও ঐ ভোগান্তি থেকে পরিত্রাণ পায়নি বৃদ্ধ এবং প্রতিবন্দ্বী মানুষগুলো।
এই ডিজিটালাইজেশনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে নানা রকমের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধি মানুষগুলোর। লালমনিরহাট সমাজসেবা কার্যালয় ও বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউজে গিয়ে মিলছেনা এর কোন সঠিক সমাধান। অনিয়মের মধ্য দিয়ে ডিজিটালাইজেশনের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে অন্যকারো বিকাশ অ্যাকাউন্ট নাম্বার।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভাতাভোগীদের বিকাশ অ্যাকাউন্ট নাম্বারের যায়গায় অন্যকারো বিকাশ অ্যাকাউন্ট নাম্বার যুক্ত করা হয়েছে। ছালেমা বেগম, বই নম্বর,১০৮০৫ আইডি নম্বর,০১৫২০০৫৩৮৬০, বদিয়জ্জামান, বই নম্বর,৬৭৫৯, আইডি নম্বর,০১৫২০০১৭২২২, ৭নং ওর্য়াড চরখাটামারী। ভাতাভোগী এই ২জনের কাছে জানতে চাইলে, তাঁরা বলেন আমরা নির্দিষ্ট সময়ে মোবাইল নাম্বার জমা দিয়েছি, যে বিকাশ অ্যাকাউন্ট নাম্বার জমা দিয়েছি সেই নাম্বারে টাকা না দিয়ে অন্যকারো বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া হয়েছে। উক্ত মোবাইল নাম্বারের সাথে আমাদের দেওয়া মোবাইল নাম্বারের কোনরূপ মিল নেই। কুলাঘাট ইউনিয়নে আরও অর্ধশতাধিক ভাতাভোগীর একই সমস্যার সম্মুখীন।
লালমনিরহাট সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে ‘জি টু পি’ প্রকল্পের আওতায় জেলায় বয়স্ক ভাতাভোগী ৬৮হাজার ৭শত ৭৮জন, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা ভোগী ৩৮হাজার ৪শত ৮৯জন ও অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগী ২৪হাজার ১শত ৬৩জনকে সরকার বিকাশের মাধ্যমে তাদের ভাতা পরিশোধ করতে শতভাগ ডিজিটালাইজেশনের আওতায় নেয়ার চূড়ান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গত ১৪ জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এমপির সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার ইউনিয়নে প্রথম পাইলট প্রকল্প হিসেবে কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেই পাইলট প্রকল্প শেষে এবার বয়স্ক, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতাপ্রাপ্ত সুবিধা ভোগীদের চূড়ান্ত পর্যায়ে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনতে জেলার মোট ১লক্ষ ৩১হাজার ৪শত ৩০জনের বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর কার্যক্রম সম্পন্ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ভাতাধারী সুবিধাভোগী ৭২হাজার জনের মোবাইল নম্বরে বিকাশ অ্যাকাউন্ট চালু করে টাকা পাঠানোর জন্য তালিকা নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। অবশিষ্ট ৫৯হাজার ৪শত ৩০জনের মোবাইল নম্বরেও বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলার কার্যক্রম গতকাল পর্যন্ত ৮০শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর। জানতে চাইলে সমাজ সেবা কর্মকর্তারা বলেন আমাদের এখানে কোন প্রকার হাত নেই। যা করার বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ করবে। অপরদিকে বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ থেকে বলা হচ্ছে তারা সমাজ সেবা কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া কিছু করতে পারবে না। দুই অফিসের কর্মকর্তার গা-হেলা দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যেন কোনকিছুকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
কুলাঘাট ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা সায়হান সৈকত বলেন, কুলাঘাট ইউনিয়নের বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর মধ্যে ইতিমধ্যে ভাতা পেয়েছেন ১৫৩৮ জন। ভাতা পাননি ৭৬৬ জন।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর সাংবাদিকদের বলেন, এবারের ঈদ উল ফিতরের আগেই ভাতা ভোগীদের টাকা তাদের নিজ নিজ বিকাশ অ্যাকাউন্টে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এ ডিজিটালাইজেশন অটোমেশন সিস্টেম চালু হলে ভাতা ভোগীদের টাকা আত্মসাতের আর কোনো অভিযোগ থাকবে না। এটি সরকারের একটি মাইলফলক সফলতা হয়ে থাকবে।
জেলা প্রশাসন থেকে যদিও বলা হয়েছে যে, ঈদ-উল ফিতরের আগেই বয়স্ক,বিধবা ও প্রতিবন্দ্বী ভাতার টাকা বিতরণের কথা, কিন্তু এখনও ভাতার টাকা পাননি ৩০% ভাতাভোগীরা।
ভাতার টাকা বিতরণে শতভাগ নিশ্চিত তালিকা প্রস্তুত করনে সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের কাছে জোড়ালো দাবি জানিয়েছেন ভাতাভোগীরা।