স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা।। সৃষ্টির সেবা করলেই মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব। স্বার্থের পৃথিবীতে নিজের ভাবনা ছেড়ে নীরবে অপরের জন্য কিছু করা এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন। আমরা যেন ভুলে গেছি ভুপেন হাজারিকার সেই বিখ্যাত গান- “মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য।” সৃষ্টির মাঝে স্রস্টা বিরাজমান। এমন কঠিন বাস্তবতারও কিছু মানুষ থাকে যাঁদের জন্যই বোধকরি আমরা এগিয়ে যাবার উৎসাহ ও উদ্দীপনা পাই, সামনে চলার আলো দেখতে পাই। তেমনি একজন আলোকিত মানুষ বিশিষ্ট সমাজ সেবক, শিক্ষাণুরাগী, ব্যবসায়ী, ২ বার সিআইপি পদক প্রাপ্ত এ এম হারুনার রশিদ।
প্রচার বিমুখ এই মানুষটিকে নিয়ে কিছু না লিখলে বা ব্যক্তির জীবনে মনুষ্যত্ব বা গুণ প্রকাশ না করলে তার প্রকৃত মনুষ্যত্ব প্রকাশ পায় না। সমাজের কিছু মানুষের উদাহরণ সৃষ্টি হয়না। হারুনার রশিদের হৃদয়টা যেন শিশুতুল্য সহজ সরল স্নেহ ভালবাসায় পূর্ণ। স্বার্থ ছাড়া চিন্তাশীল এ মানুষটির কাজই হচ্ছে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আগামী প্রজন্মকে খাটি মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা এবং অসহায় মানুষের বন্ধু হিসেবে পাশে থাকা।
তাঁর সেবামূলক কর্মকাণ্ড খবরের কাগজতো দূরে থাক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচার করতে দেন না।
করোনাকালিন ঈদপূর্বে প্রায় ৩শ শিক্ষার্থীর মাঝে নগদ অর্থ প্রদান করেছিলেন এ সময় কয়েক জন গণমাধ্যম কর্মী সাক্ষাৎকার নিতে চাইলে তাদের ফিরিয়ে দেন। কোনভাবেই যেন প্রচার না হয় সে ব্যাপারে তাদের পরামর্শ দিলেন। মূলত মহান সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভ করাই তাঁর উদ্যেশ্য। তবুও তার কাছ থেকে অনুমতি ছাড়াই আজকের এই লেখা। অনুমতি চাইলে তিনি হয়তো লিখতেও দিতেন না। প্রচারবিমুখ এই মানুষটাকে নিয়ে কিছু না লিখলেই যেন বিকের কাছে নিজেকে বড় অপরাধী মনে হয়।
মানব দরদী এ মানুষটি খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার আন্দুলিয়া গ্রামের আকুঞ্জী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা ওয়াসেক আলী আকুঞ্জী ১৯৭১ সালে রাজাকারের হাতে নির্মমভাবে খুন হয়। ১০ম শ্রেণীতে পড়াকালীন এ এম হারুনার রশিদ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এ এম হারুনার রশিদ
সফলতার সাথে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ১৯৮০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাশ করেন। পড়ালেখা শেষ করে অনেক চাকরির সুযোগ পেলেও তিনি তা করেননি। ১৯৮১ সাল থেকেই এ এম হারুনার রশিদ খুলনার দৌলতপুরে পাট ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন। ৪২ বছর ব্যবসায়িক জীবনে সফল ব্যবসায়ি হিসেবে দেশে বিদেশে পরিচিতি লাভ করেন। পাট রপ্তানীতে বিশেষ ভূমিকা রাখায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিল্পমন্ত্রীর হাত থেকে তিনি ১৯১৫ ও ১৯১৮ সালে সিআইপি পদকে ভূষিত হন।
১৯৯২ সালে অসহায় গরীবের সন্তানদের পড়ালেখায় আর্থিক সহায়তার জন্য তিনি এবং তার ভাই তৎকালীন পুলিশে কর্মরত এ এম কামরুল ইসলাম
পিতার নামে প্রতিষ্ঠা করেন ওয়াসেক আলী শিক্ষা প্রকল্প। এ এম হারুনার রশিদ এবং অপর ভাই পুলিশ কর্মকর্তা এ এম কামরুল ইসলাম যৌথভাবে অসহায় মানুষের পাশে ব্রত হন। পরবর্তীতে মায়ের নামে সখিনা আলী সেবা প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করে অসুস্থদের সেবায় এগিয়ে আসেন। এ এম কামরুল ইসলাম ২ বছর আগে কেএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার গোয়েন্দা) পদে কর্মরত অবস্থায় অবসর নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করছেন।
এ এম হারুনার রশিদ ধর্মীয়মতে বিশ্বাস করেন যে, তার সম্পদ বা মালে গরিবের অধিকার আছে। মালের সদকাহ না দিলে সম্পদ পবিত্র হয়না। ব্যবসায় উন্নতিও হয়না। তাই হতদরিদ্রদের মুখে হাসি ফুটানোর জন্যই তিনি অদম্যভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আর দিনের কাজ শেষে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানান চোখের জল দিয়ে। তাঁর একটাই বিশ্বাস যে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সবকিছু জানেন, তিনি কাউকে নিরাশ করেন না। আর এই দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে তিনি কাজ করে চলছেন।
এলাকার সন্তানদের সুশিক্ষিত করার অদম্য প্রচেষ্টা তার দীর্ঘদিনের। দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ বহন করার জন্য ব্যক্তিগত অর্থ দিয়ে ১ হাজার ২শত পরিবারকে গাভী দিয়েছেন। গাভী পালনের সফলতার বিনিময়ে উৎসাহ প্রদানে তিনি আরও ১টি গাভী দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পরিবারকে। প্রতি বছর ঈদ উপলক্ষে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আড়াই থেকে ৩’শ শিক্ষার্থীকে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রদান করে আসছেন এ মহৎ ব্যক্তিটি। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত খরচে দরিদ্র পরিবারের ৫ জন শিক্ষার্থীকে এমবিবিএস পড়িয়ে ডাক্তার হিসেবে স্বাবলম্বি করেছেন। আরও ২৫ জন শিক্ষার্থীকে উচ্চ শিক্ষিত করার জন্য পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে সম্পূর্ণ খরচ চালিয়ে আসছেন।
ধর্মীয় গবেষক হিসেবে তিনি ব্যাপত খ্যাতি অর্জন করেছেন। ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ধর্মসহ প্রায় সকল ধর্ম নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করছেন। বিভিন্ন সেমিনার ও ধর্মীয় সভায় অংশ নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করে চলেছেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভের চেষ্টায় কাজ করছেন।
কৃষি ও কৃষক নিয়ে এ এম হারুনার রশিদের সুদূর প্রাসারী ভাবনা। তার ইউনিয়নের ৬ টি গ্রামে কৃষকদের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করছেন। প্রতিটি বোরো মৌসুমে ৬টি গ্রামের কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, সারসহ কৃষি সারঞ্জামাদি প্রদান করে কৃষকদের অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছেন।
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সারা দেশে “Stay Home, Stay Safe” এর নির্দেশনার কারণে হতদরিদ্র, অসহায় শ্রমিক, দিন মজুর ও কর্মহীন মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছেন দরদী এ মানুষটি।
এক আলোচনার মধ্যে এ এম হারুনার রশিদ বলেন; হতদরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফুটাানোর জন্যই অদম্যভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি যে, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সবকিছু জানেন, তিনি কাউকে নিরাশ করেন না। আল্লাহকে পেতে হলে তার সৃষ্টিকে ভালোবাসতে হবে। গরিবের হক বিলিয়ে দিতে হবে। তিনি বেকারত্ব দূরীকরণের পরিকল্পনা নিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছেন। গ্রামের ছেলে মেয়েদের খাটি মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যাপক পরিকল্পনা তার রয়েছে।
বর্তমানে প্রতিটি সমাজে এ এম হারুনার রশিদের মত এমন একজন সাদা মনের মানুষ খুব প্রয়োজন। যারা নিঃস্বার্থভাবে সমাজকে আলোকিত করে দেশের গরীব অসহায় ও ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে দোয়া করি তিনি যেন দীর্ঘজীবী হন। আমিন।
জন কল্যাণ মূলক সকল কাজের জন্য প্রসংশা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আর সেই সাথে বাবর মত এমন একজন অভিভাবক পেয়ে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন কাছে চাচার দীঘ্য নেক হায়াত কামনা করি,