নিউজ ডেস্ক: হাতে গুণে আর দু’–এক মাস। তার পরেই বঙ্গে ভোট। এতদিন রাজনীতিকরা এক দল ছেড়ে অন্য দলে যাচ্ছিলেন। এবার বুদ্ধিজীবীদের পালা। এককালে যাঁরা সিপিএম–এ ছিলেন, তাঁদের অনেকে এখন তৃণমূল ঘুরে বিজেপি–তে। এই বিষয়েই আজ টুইটারে হতাশা প্রকাশ করলেন তসলিমা নাসরিন।
তসলিমা লিখলনে, ‘পশ্চিমবঙ্গে অনেক লেখক/ শিল্পী রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছেন। যখন সিপিএম ক্ষমতায় ছিল, তখন সিপিএম–এ ছিলেন। যখন টিএমসি ক্ষমতায় এল, তখন ওই একই লোকেরা টিএমসি–তে যোগ দিলেন। এখন তাঁরাই বিজেপি–তে যোগ দিলেন, কারণ বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারে। তাঁরা কোনও মতাদর্শে বিশ্বাস করেন না। তাঁরা নিজের স্বার্থে কাজ করেন, মানুষের জন্য নয়।’
শুধু টুইটারে নয়, এই নিয়ে আজকাল ডট ইন–এর কাছে এক রাশ হতাশা প্রকাশ করলেন সাহিত্যিক। বললেন, ‘দেখলে এসব খারাপ লাগে। রাজনীতিকদের একটা আদর্শ থাকে। একটা আদর্শে বিশ্বাস কর। অথচ অন্য দল ক্ষমতায় এলে চলে যাও।’
তসলিমা জানালেন, বাংলাদেশেও তিনি একই জিনিস দেখেছেন। ‘সুবিধা হচ্ছে না, ক্ষমতাসীন দলে ভিড়ে যাও। আওয়ামি লিগ থেকে বিএনপি। আবার বিএনপি থেকে আওয়ামি লিগ।’ দলবদলকারীরা বারবার বলছেন, আগের দলে থেকে কাজ করতে পারছেন না। মানুষের সেবা করার জন্যই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি–তে যোগ দিচ্ছেন। তসলিমা কিন্তু এই যুক্তি মানতে নারাজ।
তাঁর মতে, ‘রাজনীতিকদের মানুষের সেবা করা উচিত। কিন্তু তাঁরা মানুষের সেবা না করে, আখের গুছিয়ে নেন। সেবা করার জন্য দল পাল্টান না। নিজের স্বার্থে দল বদলান। বাংলাদেশেও এর প্রমাণ মিলেছে।’
তবে রাজনীকিদের থেকেও তসলিমা অনেক বেশি হতাশ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে। তিনি বললেন, ‘ধর্মীয় মৌলবাদীরা খারাপ। ধর্মান্ধতার অন্ধকারে মানুষকে ডুবিয়ে রাখতে চান। রাজনীতিকরাও খারাপ। স্বার্থ নিয়ে চলেন। মানুষের ভালো চান না। ওঁরাও নষ্ট। কিন্তু বুদ্ধিজীবিরা নষ্ট হলে সমাজ নষ্ট হয়। রাজনীতিকরা নষ্ট হলে মনে লাগে না। কিন্তু বুদ্ধিজীবীরা নষ্ট হলে মনে লাগে।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘এই বুদ্ধিজীবীরা আদর্শ এত ঘন ঘন পাল্টায়, মনে হয় সত্যিই বুদ্ধিজীবী এঁরা? সুযোগসন্ধানী রাজনীতিকদের সঙ্গে তাহলে তাঁদের পার্থক্য কী?’ তসলিমার আক্ষেপ, ‘খারাপ লাগে, যদি এই বুদ্ধিজীবীরা নিরপেক্ষ থাকতেন, তাহলে কোনও দল ভুল করলে প্রতিবাদ করতে পারতেন। কিন্তু প্রতিবাদ করেন না। ওখানেই স্বার্থ। বুদ্ধিজীবী সৎ, আদর্শবান হবে, মানুষের ভালো চাইবেন, এটাই ভাবি আমরা। ওঁদের নমস্য মানি। ওঁরা মধ্যেও যখন রাজনীতিকদের মতো মুখ বুজে থাকা, মিথ্যে বলা, স্বার্থ খোঁজা দেখি, তখন আমাদের কিছু থাকে না।’