রকিবুল ইসলাম রুবেল,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এক বৃদ্ধ বীরমুক্তিযোদ্ধাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে চেয়ারের সাথে দঁড়ি দিয়ে বেঁধে নির্য়াতন করার অভিযোগ উঠেছে। আজ রবিবার দুপুরের হাতীবান্ধা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। থানা পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করতে মাঠে নেমেছে। এই ঘটনায় জেলা ছুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
থানা পুলিশ ও ভক্তভুগির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সূত্রে জানা গেছে, বীরমুক্তিযোদ্ধা বৃদ্ধ আকবর আলী ধনী (৭০)। তিনি ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের কমান্ডার। জেলার হাতীবান্ধ উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের উত্তর জাওরানি গ্রামের বাসিন্ধা। পেশায় দিনমজুর কৃষক ও অতি দরিদ্র। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহির উদ্দিন। কয়েকজন চকিদারকে সাথে নিয়ে ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে যায়। তাঁকে ইউপির চকিদারদের মাধ্যমে বাড়ি হতে নিয়ে চেয়ারম্যানের বাড়ির বৈঠক খানায় ডুকায়। পওে বৈঠকখানা হতে গ্রামের লোকজনকে বাহির করে দেয়। সেখানে চেয়ারম্যান ও চকিদার ছাড়া কেউ ছিল না। চেয়ারম্যানের নির্দেশে চকিদারগণ বীরমুক্তিযোদ্ধাকে চেয়ারের সাথে বেঁধে নির্যাতন করে। তার অপরাধ (মুক্তিযোদ্ধার) ছেলে প্রতিবেশীর গরু চুরি করেছে। বীরমুক্তিযোদ্ধাকে নির্যাতন করে তাঁর ছেলের অবস্থান জানতে চায়। তিনি কিছুই জানেনা ও তার ছেলের সাথে সম্পর্ক নেই বলে জানায়। তবুও তাঁকে নির্যাতন করা হয়। পরে বিষয়টি স্থানীয় এক মুক্তিযোদ্ধার ছেলে জানতে পেরে গ্রামের অন্যান্য লোকজনকে জানায়। স্থানীয় গ্রামের মানুষের হস্তক্ষেপ ও মধ্যস্থতায় বীরমুক্তিযোদ্ধা সেই সময়ের মত ছাড়া পায়। পরে কে বা কারা বীরমুক্তিযোদ্ধার উপর নির্যাতনের বর্ণনা ভিডিও করে ফেসবুক ও ফেসবুক মেসেঞ্জারে ছেড়ে দেয়। মুহুর্তে মুক্তিযোদ্ধাকে নির্যাতনের ঘটনাটি চাউর হয়ে যায়। এই নির্মম ঘটনায় জেলায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ভেলাগুড়ি মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের কমান্ডার বৃদ্ধ আকবর আলী ধনী জানান, মহির উদ্দিন ভেলাগুড়ি ইউপির চেয়ারম্যান নিজে থেকে চৌকিদারের মাধ্যমে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ছে চেযারম্যানের বাড়ির বৈঠক খানায়। সেখানে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে রাখে ও নির্যাতন করে। তখন লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে থাকি। তাঁর নির্যাতনের হাত হতে বাঁচতে হাউমাউ করে কান্না শুরু করি। তাঁর মনে এতোটুক দয়া হয়নি। এই নির্যাতনের ঘটনায় সঠিক বিচার চাই। এই লজ্জাজনক ঘটনার ও নির্যাতন পেতে কী জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এই মহির উদ্দিন চেয়ারম্যান। ইউনিয়নটিতে চকিদার, দফাদার, তার ভাই, ভাতিজা, স্বজনদের ও তার ক্যাডারদের নিয়ে এই একটি হরিলুটের সম্রাজ্য তৈরি করেছে। তারা মাদক সহ নানা একের পর এক অপকর্ম করছে। কয়েক দিন আগে চেয়ারম্যানের লোকদেও মাদক পাচার করতে গিয়ে বিজিবির হাতে বিপুল পরিমান মাদক সহ ৩ জন ইউপির চকিদার গ্রেফতার হয়। এই বিষয়ে হাতীবান্ধা থানায় মামলা হয়। চকিদার জেলে যায়। তবুও তার অপকর্মের স¤্রাজের এতোটুকু ভাটা পড়েনি। চেয়ারম্যানের পেশিশক্তির ভয়ে কেউ এখানে প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। ব্যক্তির অপকর্ম কেন? রাজনৈতিক সংগঠন ও প্রধানমন্ত্রী নিবেন। প্রশ্ন রাখেন।
এই ঘটনায় আজ রবিবার বীরমুক্তিযোদ্ধা বাদি হয়ে হাতীবান্ধা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। হাতীবান্ধা থানার ওসি মোঃ এরশাদুল আলম জানান, বীরমুক্তিযোদ্ধা বৃদ্ধ আকবার আলী ধনী(৭০)কে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের খবর শুনে মাঠে পর্যায়ে পুলিশের কর্মকর্তাদেও তদন্ত করতে পাঠিয়েছি। পুত্র অপরাধ করতে পারে। সত্য মিথ্যা পরের বিষয়। পুত্রের অপরাধে পিতাকে কোন ভাবেই নির্যাতন করতে পারে না। মুক্তিযোদ্ধার পুত্র চুরি করলে অথবা তার খোঁজ জানতে পুলিশ জিজ্ঞাসা করবে। এই চুরির বিষয়টি থানায় থানা পুলিশের দায়িত্ব। কেউ তো আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। সংবিধান সকলের জন্য এক। বীরমুক্তিযোদ্ধাগণ দেশের সবচাইতে সম্মানিত ব্যক্তি। আজ যারা যে, পদেরই থাকি। মুক্তিযোদ্ধা গণ দেশ স্বাধীন না করলে এই পদ কোথায় পেতাম। বিষয়টি পুলিশ গুরুত্বের সাথে নিয়ে কাজ করছে।
এদিকে একটি সূত্র বলছে, এর আগেও চেয়ারম্যানের ওই বাড়িতে এক প্রতিবাদী শিক্ষার্থী যুবককে চকিদার দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হয়। সেই নির্যাতিত শিক্ষার্থীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়। তাঁকে চকিদারের মাধ্যমে মাদক সেবী ও মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। গ্রামবাসীর প্রতিবাদে পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে। যুবকটি থানা পুলিশ ও আইনী জঠিলতা হতে রক্ষা পায়।
ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মহির উদ্দিন জানান, মুক্তিযোদ্ধাকে কোনো মারধর করা হয়নি। তার ছেলে গরু চোর । তার ছেলের সন্ধান পেতে তাকে ডাকা হয়ে ছিল। আপনি পরিষদ বাদ দিয়ে, নিজ বাড়ির বৈঠকখানায় বিচার সালিস করে কেন? চুরির ঘটনা ঘটলে পুলিশে খবর দিতে পারতেন। পুলিশ কাজে করত সহায়তা করতেন। এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তোর দিতে