সনত চক্রবর্তী, ফরিদপুর : দিনের সকাল থেকে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলাতে প্রতিটি মন্দিরে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে কামার ঘন্টা , ঢাকের বাদ্য, উলুধ্বনি মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা পালিত হয়েছে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা আজ শনিবার। বাণী অর্চনা ও নানা আয়োজন দিয়ে বিদ্যা, বাণী ও সুরের দেবী সরস্বতীর পূজা শুরু হয়েছে। ধর্মীয় বিধান অনুসারে সাদা রাজহাঁসে চড়ে বিদ্যা ও সুরের দেবী সরস্বতী পৃথিবীতে আসেন।
হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম এই ধর্মীয় উৎসবে পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর চরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন অগণিত ভক্ত। সনাতন ধর্মালম্বীদের মতে দেবী সরস্বতী সত্য, ন্যায় ও জ্ঞানালোকের প্রতীক। বিদ্যা, বাণী ও সুরের অধিষ্ঠাত্রী।
সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বিদ্যার দেবীর পূজা হতে দেখা যায়।উপজেলার নাট মন্দির,উপজেলা চত্বর, মহিলা কলেজ, ঋষি পাড়া, কামার গ্রামের বন্ধু সংগঠন উদ্যোগে , কামার গ্রামের আখড়া, ময়না বারোয়ারি মন্দির, সাতৈর, ঠাকুরপুর,আধারকোঠা, গুনবাহসহ বিভিন্ন জায়গায় পূজারিরা নিয়েছে ব্যপক প্রস্তুতি। মর্ত্যরে ভক্তকুল শ্বেতশুভ্র কল্যাণময়ী দেবী সরস্বতীর আবাহন করবে। ঢাক-ঢোল-কাঁসর, শঙ্খ ও উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠবে দেশের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ।
শাস্ত্রমতে, প্রতি বছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে শ্বেতশুভ্র কল্যাণময়ী বিদ্যাদেবীর বন্দনা করা হয়। কিন্তু এবার ফাল্গুন মাসে তিন তারিখ রোজ মঙ্গবার পঞ্চমী তিথি অনুযায়ী উৎসব হবে। ঐশ্বর্যদায়িনী, বুদ্ধিদায়িনী, জ্ঞানদায়িনী, সিদ্ধিদায়িনী, মোক্ষদায়িনী এবং শক্তির আধার হিসেবে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সরস্বতী দেবীর আরাধনা করেন।
সরস্বতী দেবী শ্বেতশুভ্র বসনা। দেবীর এক হাতে বেদ, অন্য হাতে বীণা। এজন্য তাকে বীণাপানিও বলা হয়। সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, জ্ঞান ও বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী তার আশীর্বাদের মাধ্যমে মানুষের চেতনাকে উদ্দীপ্ত করতে প্রতি বছর আবির্ভূত হন ভক্তদের মাঝে। বোয়ালমারী উপজেলা বিভিন্ন এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূজার আয়োজন হলেও সরস্বতী পূজার প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে (অস্থায়ী মন্দির) বোয়ালমারী উপজেলা চত্বর ও নাট মন্দির। সরস্বতী পূজা উপলক্ষে চমৎকার এক উৎসবে পরিণত হয়েছে।
সরস্বতীর পূজা সাধারণ পূজার নিয়মানুসারেই হয়। তবে এই পূজায় কয়েকটি বিশেষ উপাচার বা সামগ্রীর প্রয়োজন হয়। যেমন, অভ্রআবীর, আমের মুকুল, দোয়াত-কলম ও যবের শিস। বাসন্তী রঙের গাঁদা ফুলও প্রয়োজন হয়। লোকাচার অনুসারে, ছাত্রছাত্রীরা পূজার আগেও কুল খায় না। পূজার দিন পড়া লেখাও নিষিদ্ধ। যথাবিহিত পূজার পর লক্ষ্মী, নারায়ণ, দোয়াত-কলম, পুস্তক ও বাদ্যযন্ত্রেরও পূজা করার প্রথা প্রচলিত আছে। পূজান্তে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার প্রথাটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের দল বেঁধে অঞ্জলি দিতে দেখা যায়।
বোয়ালমারী উপজেলা চত্বরে সরস্বতী পূজার অঞ্জলি দিতে আসা এক ভক্ত বলেন, সরস্বতী বিদ্যার দেবী, তাকে পূজা করলে বিদ্যা লাভ করা যায় এবং অন্ধকার দূর করে আলোকবর্তিতার পথ দেখাতে কল্যাণময়ী দেবী সরস্বতীর পাদপদ্মে প্রণতি বা ফুল নিবেদন করা হয় ।তিনি আরো বলেন, বোয়ালমারী ঐতিহ্যগতভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এলাকা। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আবহমানকাল ধরে এ এলাকার সব মানুষ মিলেমিশে বসবাস করে আসছি ।