পিরোজপুর প্রতিনিধি : পিরোজপুর সদর উপজেলার পুরাতন খেয়াঘাটের শেষ প্রান্তে রয়েছে ৭১এর শহীদদের জন্য শহীদবেদী ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ এর গেট ও সামনের রাস্তা এখন কাঠব্যবসায়ী ও করাতকল (স্বমিল) মালিকদের দখলে। পুরাতন খেয়াঘাটের শহীদবেদীর এ ঘাটে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিদিন প্রায় ৪০/৫০ জন মানুষকে গুলি করে হত্যা করতো পাকিস্তানি বাহিনী। দেশ স্বাধীনের পরে এ জায়গাটিকে আটকে শহীদবেদী হিসেবে স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং এর পাশেই ২০২০ সালের ডিসেম্বরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ নির্মান করা হয়। কিন্ত দীর্ঘদিন ধরে শহীদবেদী ও মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ এর গেট ও সামনের রাস্তা আটকে কাঠ ব্যবসা করে আসছে কিছু অসাধু মালিক ও কাঠব্যবসায়ীরা। ফলে শহীদবেদী ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ এর গেট ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।
স্থানীয়রা জানায়, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ এর গেট আটকে একটি করাতকল (স্বমিল) রয়েছে। এর সামনে ও পাশের রাস্তা আটকে কাঠব্যবসায়ী লোকমান, মো: এজাজ, মিজান সহ বেশ কিছু ব্যবসায়ীরা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ এর গেট ও সামনের রাস্তা বড় বড় গাছ ফেলে আটকে রেখে ব্যবসা করে আসছে। মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ এর গেট এর সামনে চৌধুরী ব্রাদার্স এন্ড স্বমিল নামে যে করাতকল (স্বমিল) রয়েছে সেটির মালিক সুপ্রিম কোর্ট এর আইনজীবী এ্যাড. ইমতিয়াজুল হক চৌধুরী পরিচালনা করেন না। এ করাতকল (স্বমিল) টি আসাদুজ্জামান খান আসাদ নামে একজন ব্যবসায়ী দ্বারা পরিচালনা করতেন বলে জানান মালিক এ্যাড. ইমতিয়াজুল হক চৌধুরী।
করাতকল (স্বমিল) মালিক সুপ্রিম কোর্ট এর আইনজীবী এ্যাড. ইমতিয়াজুল হক চৌধুরী জানান, ৬০এর দশকে নির্মিত এ করাতকল (স্বমিল) টি আমার চাচা পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল হুদা চৌধুরী বাদশা এর সময়ে তৈরী পরবর্ততে এ করাতকল (স্বমিল) এর সাড়ে তিন শতাংশ জমি আমার বাবা পেলে আমি এ করাতকল (স্বমিল) এর পরিচালনার জন্য দায়িত্ব দেই আসাদুজ্জামান খান আসাদকে। তখন থেকেই এ করাতকল (স্বমিল) টি আমি বন্ধ করার জন্য অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে আসাদুজ্জামান খান আসাদকে দায়িত্ব দেই। কিন্ত আসাদ এ করাতকল (স্বমিল) টি পরিচালনার নামে জোড় পূর্বক পুরোটা নিজের দখলে নিয়ে নেয়। আমি এ করাতকল (স্বমিল) এর বিদ্যুৎ সংযোগটি বন্ধ করার জন্য ২০১৯ সালের নভেম্বরে নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর আবেদন করি এবং ২০২০ সালের জুলাই মাসে পিরোজপুর বন বিভাগের রেঞ্জ বন কর্মকর্তার কাছে এ করাতকল (স্বমিল) এর বন বিভাগের কোন লাইসেন্স না থাকায় এটি বন্ধর জন্য আবেদন দেই। কিন্ত কোন এক অদৃশ্য শক্তির কারনে কোন প্রকার বন বিভাগের লাইসেন্স ও ট্রেড লাইসেন্স না থাকার পরেও করাতকল (স্বমিল) কেউ বন্ধ করেনি। আমি জমির মালিক নিজে পরিবেশের কথা চিন্তা করে বারবার এ করাতকল (স্বমিল) টি বন্ধ করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছি। শহীদবেদী ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ এর গেট এর জন্য এটি সম্পূর্ন বন্ধ করে দিতে চাই।
তবে এ ব্যাপারে করাতকল (স্বমিল) টির বর্তমান মালিক আসাদুজ্জামান খান আসাদকে মুঠোফেনে যোগাযোগের চেষ্ঠা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে রেঞ্জ বন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, জেলার সকল উপজেলায় করাতকল (স্বমিল) লাইসেন্সে এর জন্য প্রত্যেক মাসে একাধিকবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। শহরের পুরাতন খেয়াঘাটের শেষ প্রান্তে যে করাতকল (স্বমিল) টি রয়েছে এর বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে। যে সকল করাতকল (স্বমিল) বন বিভাগের লাইসেন্স নেই সেগুলো বন্ধের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে পিরোজপুরে জেলা প্রশাসক আবু আলী মো: সাজ্জাদ হোসেন জানান, সারাদেশের ন্যয় পিরোজপুরেও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্বরনে নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ। এ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ এর গেট আটকে করাতকল (স্বমিল) ব্যবহারের বিষয়টি সরেজমিনে গিয়ে দেখে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।