নিউজ ডেস্ক: রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় পদ্মার ভাঙনে চকরাজাপুর ইউনিয়নের কালিদাসখালী ও লক্ষীনগর চরের ৩৫টি পরিবার আশ্রয় হারিয়ে পথে বসেছে। হুমকির মুখে আরও অর্ধশতাধিক বাড়ি।
জানা যায়, চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কালিদাসখালী ও লক্ষীনগর চরের মানুষ ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আর নিরাপত্তাহীনতায় আরও অর্ধশতাধিক পরিবার। এছাড়াও হুমকির মুখে চকরাজাপুর কমিউনিটি ক্লিনিক। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙছে পদ্মার পাড়। চাপ হয়ে মাটি ধসে পড়ে দীর্ঘ হচ্ছে ভাঙনের চিত্র। এক সপ্তাহের মধ্যে প্রায় দুই কিলেমিটার নদী ভাঙনে শত শত একর ফসলি জমিসহ গাছপালা ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার (৩ নম্বর কালিদাসখালী চর) শহিদুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহ আগে পদ্মার পানি বাড়তে শুরু করেছে। পাশাপাশি শুরু হয়েছে ভাঙন। এবার যে সমস্ত জমি ভাঙনের কবলে পড়েছে, তার সিংহভাগ জমিতে ছিল আম, খেজুর গাছ ও বাড়িঘর। এবার ভাঙনের কবলে আমারও ১০ বিঘা জমিসহ আম বাগান বিলীন হয়ে গেছে।
৩ নম্বর কালিদাসখালী চর ও চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমার ৮ বিঘা আম বাগান নদীগর্ভে এরমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। এমনকি আমার বাড়িটাও হুমকির মধ্যে রয়েছে। ভাঙন থেকে মাত্র ৬০ মিটার দূরে রয়েছে বাড়ি। ফলে এবার যে ভঙনের ডাক তাতে মনে হয় কালিদাসখালী ও লক্ষীনগর বলে কোনো চিহ্ন থাকবে না।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার ফজলুল হক বলেন, চকরাজাপুর বলে কোনো চিহ্ন নেই। এরমধ্যেই বিলীন হয়ে গেছে। আমার ওয়ার্ডের তিন ভাগের দুই ভাগ পদ্মার গর্ভে চলে গেছে। এবাব যে হারে নদী ভাঙা শুরু হয়েছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে আর কিছুদিনের মধ্যে আমার ওয়ার্ডও বিলীন হয়ে যাবে।
এদিকে ৬ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার আনোয়ার শিকদার বলেন, কয়েক বছরে আমার প্রায় ৩০ বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া আমার নির্বাচনী ওয়ার্ডের কোনো চিহ্ন নেই। এই ওয়ার্ডের ৩ শতাধিক পরিবার দুই বছরের ব্যবধানে অন্যত্রে চলে গেছে।
কালিদাসখালী চরের রতন আলীর স্ত্রী সালমা বেগম জানান, আমার মাত্র ১০ কাঠা জমি ছিল। তাও ভাঙনে চলে গেল। দুই সন্তান নিয়ে কী করে চলব, কোথায় যাবো কিছুই ভেবে পাচ্ছিনা। আমার আসলে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। ঘর তোলার জমি নেই টাকাও নেই।
এদিকে কয়েক বছরে ভাঙনের কবলে পড়ে পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি, বসতভিটা, রাস্তাঘাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিজিবি ক্যাম্প, মসজিদ। বিভিন্ন সময়ে নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে সর্বহারা হয়েছে প্রায় সহস্রাধিক পরিবার। এসব পরিবারের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে পদ্মা। এদের অনেকেই বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বসতবাড়ি গড়ে তুলে বসবাস করছে।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, প্রতি বছর ভাঙনের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ। তবে বর্তমানের ভাঙনের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৩৫টি পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাপিয়া সুলতানা বলেন, পদ্মার ভাঙন রোধে বাঁধের কাজ চলছে। কাজ সম্পন্ন হলে ভাঙন থাকবে না। তারপরও ভাঙনের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।