ফয়সাল হক চিলমারী (কুড়িগ্রাম) থেকেঃ দিনের পর দিন দেখতে দেখতে পেড়িয়ে যাচ্ছে স্বাধীনতার ৫০ বছর। তবুও ইতিহাসের স্থান গুলো আজ অবহেলা আর অযত্নেই রয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে অযত্নেই পড়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি স্মৃতির স্মৃতিস্তম্ভ। নির্মানের ৯বছর পেড়িয়ে গেলেও মুক্তিযুদ্ধের চিলমারী উপজেলা একখন্ড ইতিহাসের অংশ স্বাধীনতাযুদ্ধে সম্মূখ সমরের স্মৃতিস্তম্ভ টি পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়। ৯বছরেও আনুষ্ঠানিক ভাবে হয়নি উদ্বোধন বুঝে দেয়া হয়নি স্থানীয় প্রশাসনকে। তাই সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেন না কেউ। স্বাধীনতাযুদ্ধে সম্মূখ সমরের স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণের পর থেকেই অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে। পড়ে আছে একখন্ড ইতিহাস। জনমতে বাড়ছে ক্ষোভ। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বারবার উত্থাপন করেও ফল পায়নি মুক্তিযোদ্ধারা। অযত্ন আর অবেহেলায় পড়ে থাকায় বর্তমান প্রজন্ম এ স্থানটির গুরত্ব ও ইতিহাস নিয়ে থাকছে অন্ধকারে।
সূত্র জানায়, ২০১২ সালে ফেব্রুয়ারী মাসে প্রায় ২২ লাখ ১ হাজার ৫৫২ টাকা ব্যয়ে চিলমারী উপজেলার বালাবাড়ীহাট রেল স্টেশনের পাশে স্বাধীনতাযুদ্ধে সম্মূখ সমরের স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে এটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে গণপূর্ত বিভাগ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী স্মৃতিস্তম্ভের সাদা ফলকে উৎকীর্ণ করা হয় স্বাধীনতা যুদ্ধে বালাবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় পাকবাহিনী ও তার দোষরদের যুদ্ধকালিন সময়ে মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী মানুষের উপর নৃশংসতার ইতিহাস ও ১৯৭১ সালের ১৭ অক্টোবরের পাকহানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধের কথা। অযত্নে সেটিও নষ্ট হওয়ায় পথে। ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে উপজেলার বালাবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন পাকবাহিনীর একটি শক্ত ঘাটি ছিল। বৃহত্তর রংপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোষর রাজাকার, আলবদর বাহিনী মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী জনগনকে যুদ্ধকালিন সময় ধরে এনে উক্ত স্থানে অমানবিকভাবে নির্যাতন করে নৃশংস্বভাবে হত্যা করত। এমনকি বাঙ্গালীদের গায়ে পাট বেঁধে কেরসিন দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়া হত। শুধু তাই নয় বাঙ্গালী নারীদের দিনের পর দিন আটকে রেখে ধর্ষণ ও নির্যাতন করে হত্যাকান্ড চালানো হতো। ১৯৭১ সালে ১৭ অক্টোবর উক্ত স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকবাহিনীর তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখে সম্মুখ যুদ্ধ করতে গিয়ে অনেক অকুতভয় মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। যুদ্ধে আনুমানিক ২০জন পাক-হানাদার বাহিনী নিহত হয়। অনেক রক্তের বিনিময়ে বালাবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন শত্রুমুক্ত হয়। সম্মুখ যুদ্ধটি পরিচালনা করেছিলেন ১১নং সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল তাহের। স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মিত হওয়ায় বিশেষ করে এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা অত্যন্ত খুশি হলেও এটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় দীর্ঘ ৯বছর পেরিয়ে গেছে। সরেজমিন দেখা যায়, স্মৃতিস্তম্ভটি দীর্ঘদিন অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকায় এর চারিদিকে ঘেরা নিরাপত্তা বলয়ের লোহার বেষ্টনিতে মরিচা ধরেছে। প্রায় স্থানে ভেঙ্গে গেছে। কতিপয় মানুষ ডাস্টবিন, ধান শুকানোর চাতাল এবং কিছু নেশা খোর রাতে আড্ডাখানা বানিয়ে রেখেছে বলেও অনেকে অভিযোগ করেন। এলাকাবাসীর দাবি তুলেছেন স্মৃতিস্তম্ভটি জনসাধারণের জন্য শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করা হোক। এ ব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার আঃ রহিম বলেন, স্মৃতিস্তম্ভটি উদ্বোধন করে সকলের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করা জরুরি। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও বৃদ্ধারা বলেন, অনেক স্মৃতি জুড়ে আছে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মিত এলাকাকে ঘিরে বারবার দাবির পেক্ষিতে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মিত হলেও কেন এটি উম্মুক্ত করা হচ্ছে না তা আমারও বুঝে আসছে না। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ্ এ প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি নিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে আশা করছি দ্রুত এর সমাধান হবে।