ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধা ঃ গাইবান্ধায় পারিবারিক কলহের জেরে সেচ নালা (ইরিগেশন ক্যানেল) না দেওয়ায় ইরি-বোরো চাষের প্রায় এক একর জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। কয়েক দফায় স্থানীয়দের সহায়তাও মেলেনি কোনও সমাধান। বোরো মওসুমে ধান রোপণ করতে না পেরে হতাশায় জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের কৃষক জাকিরুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম ও কৃষক তারা মিয়া।
তাদের অভিযোগ, শুধু পারিবারিক কলহের জেরে সেচের জন্য তাদের জমি দিয়ে নালা (ড্রেন) না দেওয়ায় চাষাবাদ করতে পারছেন না তারা।
সরেজমিনে উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের খামার জামিরা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, চলতি মওসুমে ওই এলাকার আবাদি সব জমিতে লাগানো হয়েছে রোরো ধান। ওই সব জমিতে কেউ সেচ দিচ্ছেন, কেউ আগাছা দমন করছেন, কেউ বা সার ব্যবহার করছেন। তবে, দো ফসলি হওয়া সত্বেও জমিতে কিছুই করতে পারছেন না ওই গ্রামের আব্দুল ওয়ারেস মিয়ার ছেলে জাকিরুল, শহিদুল ও জাকিরুলের শ্বশুর তারা মিয়া। ধান রোপণ করা জমিগুলোর পাশেই তাদের প্রায় তিন বিঘা খাঁ খাঁ পাঁচটি জমি অনাবাদি পড়ে আছে।
স্থানীয়রা জানায়, ওই এলাকার আব্দুল মালেক (৯৮) এর নয় ছেলের মধ্যে বেঁচে আছে সাতজন। তাদের মধ্যে বড় ছেলে আব্দুল ওয়ারেস (৬৯)। আনাবাদি এসব জমির ৬০ শতক আব্দুল ওয়ারেসের ছেলে জাকিরুল ও শহিদুলের এবং এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি জাকিরুলের শ্বশুর তারা মিয়ার। পড়ে থাকা এসব জমির চার পাশেই রোপণ করা জমিগুলো বৃদ্ধ আব্দুল মালেকের ছেলে আজাহার, এনামুল ও আশরাফুলসহ ছয় ভাইয়ের। বড় ভাই ওয়ারেসের পরিবারের সাথে তাদের (ছয় ভাইয়ের) পারিবারিক দ্বন্দ্ব থাকায় এই ছয় ভাই একত্রিত হয়ে তাদের জমি দিয়ে ড্রেন (নালা) করতে না দেওয়ায় পড়ে আছে জমিগুলো। শুধু তাই নয়, তারা মিয়া কেবল জাকিরুলের আত্মীয় (শ্বশুর) হওয়ায় কারণেই তার জমিতেও পানি যাওয়ার নালা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পড়ে থাকা জমির মালিক জাকিরুল ইসলাম (৩০) বলেন, ‘শুধু পারিবারিক কলহের জেরে, শত্রুতা করে তারা পানি যাওয়ার ড্রেন (নালা) বন্ধ করে দিয়েছে। গত বছরেও আমি এসব জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম, তাদের জমি দিয়েই ড্রেন ছিল। আমি এসব জমিতে ধানের আবাদ করার জন্য বেঁছন (বীজ বপন) ফেলে ছিলাম। তাতে আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। তাদের জমি দিয়ে ড্রেন না দেওয়ার কারণে জমিতে ধান লাগাতে পারি নাই। আমি একাধিকবার সেচ পাম্প মালিকের কাছে পানি চেয়েছি। কিন্তু ড্রেন না দেওয়ার কারণে তারাও পানি দিতে পারে নাই’।
অপর কৃষক তারা মিয়া (৫৫) বলেন, ‘আমার দোষ কিসের? তারা আমার জমিতেও পানি দেওয়ার ড্রেন (নালা) বন্ধ করে দিয়েছে। আমার অপরাধ আমি জাকিরুলের শ্বশুর’। জমিতে চাষাবাদের সুযোগ করে দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
সেচ পাম্প মালিক শাহ আলমের ছেলে মাহাবুর রহমান বলেন, ‘পড়ে থাকা জমির মালিকরা আমাদের থেকে পানি চেয়েছিল। কিন্তু যাদের জমিতে ড্রেন না থাকার কারণে পানি দেওয়া যায়নি। তারা ড্রেনের ব্যবস্থা করতে পারলে আমার পানি দিতে সমস্যা নাই’।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আজাহার আলী (৬০) বলেন, আমাদের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ আছে। তাই আমরা তাদের জমি দিয়ে আমাদের ড্রেন করব না এবং আমাদের জমি দিয়েও তাদের জমিতে পানি যেতে দেব না’। একই কথা বলেন, আজাহার আলীর ছোট ভাই অভিযুক্ত এনামুল (৩৫) ও আশরাফুল (৩০)।
এ বিষয়ে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান মোবাইল ফোনে বলেন, সেচ কাজে পানি দিতে বাঁধা দেওয়া অন্যায়। আমরা বিষয়টি জানলাম, সরেজমিন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।