হাফিজ সেলিম, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে পানি কমার সাথে সাথে খরস্রোতা তিস্তানদী অববাহিকায় ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত এক সপ্তাহের ব্যাবধানে রাজারহাট উপজেলার বুড়িরহাট ও উলিপুর উপজেলার গোড়াইপিয়ার এলাকায় প্রায় ৪২টি বসত বাড়ি তিস্তা নদীর গ্রাস করেছে। এ-সব বসত- বাড়ি হারা মানুষ জন বর্তমানে পরিবার পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নীচে নিদারুণ কষ্টে দিবারাত্রি কাটাচ্ছে। গোড়াইপিয়ার গ্রামের বসত ভিটা হারা জাহাঙ্গীর আলম জানান,সবকিছু হারিয়ে ফেললাম। এখন সামনে শুধুই অনিশ্চয়তা। কি ভাবে বাঁচবো কোথায় থাকব জানিনা। এমন কথা শোনালেন, বুড়িরহাটের ক্ষতিগ্রস্ত আজিজুল হক, নওসাদ, সোলাইমান। তারা অভিযোগ করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিকল্পনাহীন কর্মকাণ্ডের কারণে শত শত মানুষ আজ ভিটেমাটি হারাচ্ছে।
সম্প্রতি ভারতের আসামসহ বিভিন্ন এলাকায় অতিবৃষ্টির কারণে উজানথেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ব্রহ্মপূত্র, তিস্তা, ধরলাসহ কুড়িগ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদ-নদীর পানি গত রোববার পর্যন্ত বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে। এ অবস্থায় নদ-নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন জলমগ্ন হয়।
আজ সোমবার (২৩আগষ্ট) সকালে ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ২সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিকেল ৩টার দিকে আরো ১০সেন্টিমিটার কমে ৮ সেন্টিমিটার বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আকস্মিক পানি বৃদ্ধির ফলে ধরলানদী অববাহিকার প্রায় সহস্রাধিক ঘর বাড়ি জলমগ্ন হয়।
কুড়িগ্রাম পাউবো জানায়, সোমবার (২৩ আগষ্ট) সকালে তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়ায় ব্রীজ পয়েন্টে ১ দশমিক ১৬ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপূত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৬২ সেন্টিমিটার এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে ২ দশমিক ২৯ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকাল পর্যন্ত সারা জেলায় ৩ হাজার ২’শ হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে নদ- নদী অববাহিকায় দ্বিগুন রোপা আমন ক্ষেত জলমগ্ন হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান।
সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান জানান,আমার এলাকার বাড়িঘরে পানি না উঠেছে এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় শতাধিক হেক্টর আমন ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
মোগলবাসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর জামাল জানান, ধরলা অববাহিকায় নিম্নাঞ্চলে শেষ মূহুর্তে যারা সেচ দিয়ে রোপা আমন লাগিয়েছে সেগুলো এখন পানির নীচে ।
হলোখানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উমর ফারুক বলেন, গত দুইদিনে ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমার ইউনিয়নের ১, ২, ৩ ও ৪নং ওয়ার্ডে প্রায় ৬ শতাধিক বাড়িঘর জলমগ্ন হয়েছে । কয়েকদিন আগে পানির অভাবে সেচদিয়ে রোপা আমন লাগানো ক্ষেত গুলো তলিয়ে গেছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিলুফা ইয়াছমিন জানান, সদর উপজেলার বন্যা কবলিত পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। বেশ কিছু এলাকার বাড়িঘর তলিয়ে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। নীচু এলাকার রোপা আমন ধান তলিয়ে গেছে। তথ্য পেলে গোটা চিত্রটা জানা যাবে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, চলতি বছরে ব্রহ্মপূত্র, তিস্তা, ধরলাসহ বেশ কিছু নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে প্রায় ৩ হাজার ২’শ হেক্টর রোপা আমন ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে। পানি দ্রুত নেমে গেলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
এদিকে, উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াইপিয়ার গ্রামে ভাঙ্গন কবলিত এলাকা থেকে ঘর বাড়ি সরানোর পাশাপাশি বৈদ্যুতিক খুটি সরিয়ে নিচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন।