শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:০৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
ঝিনাইদহে কোটা সংস্কারকারিদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া,গুলি বর্ষণ, পুলিশসহ আহত-৪০, আটক-২ সারা দেশে নিহতের সংখ্যা ১৩ স্বাচিপ ঝিনাইদহ জেলা শাখার সভাপতি ডাঃ মামুন, সম্পাদক ডাঃ কাওসার শিবির কর্মী-ছাত্রদল এবং বহিরাগতরা ঢাবির হলে তাণ্ডব চালিয়েছে-মোজাম্মেল হক সারা বাংলা র ৮৮ এর চতুর্থ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীপালন সারা বাংলা’র ৮৮ মাদারীপুর জেলা প্যানেলের উদ্যোগে চতুর্থ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীপালন ঝিনাইদহে কোটা বিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলা, আহত-২০ রংপুরে পুলিশের গুলিতে কোটা আন্দোলনকারী আবু সাঈদ নিহত চীন-রাশিয়া সামরিক মহড়া ছাত্র নিহতের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অসত্য: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
নোটিশ
যে সব জেলা, উপজেলায় প্রতিনিধি নেই সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। বায়োডাটা সহ নিউজ পাঠান। Email: newssonarbangla@gmail.com

কুষ্টিয়ার মর্গে টাকা না পেয়ে বাবার সামনে সন্তানের লাশের চামড়া তুললো ডোম

Reporter Name
Update : বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১, ৭:১৫ অপরাহ্ন

কুষ্টিয়া সংবাদদাতা:  বুক কাটতে পাঁচ হাজার, কপাল কাটতে ছয় হাজার আর পুরো শরীর কাটতে ১০ হাজার টাকা লাগবে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে থাকা ১৩ বছর বয়সী ছেলের লাশ কাটতে এভাবেই ভ্যানচালক বাবার সঙ্গে দরদাম করছিলেন মর্গের ডোম। কিন্তু দরিদ্র বাবা টাকা দিতে অসমর্থ হওয়ায় ঘটে এক নারকীয় ঘটনা। বাবার চোখের সামনেই ছেলের লাশ থেকে চামড়া তুলে ফেলতে থাকেন ডোম। সে দৃশ্য দেখে মর্গের সামনেই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন অসহায় বাবা কমল প্রামাণিক।

মঙ্গলবার বিকেলে খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান গণমাধ্যম কর্মীরা। এরপর লাশ উদ্ধার করে তুলে দেন অ্যাম্বুলেন্সে। এর আগে, টাকার জন্য দিনভর লাশ আটকে রাখেন মর্গের ডোম।

জানা গেছে, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের গাছিরদিয়া গ্রামের ভ্যানচালক কমল প্রমাণিকের ছেলে শান্ত কয়েক বছর মাদরাসায় পড়াশোনা করেছে। এরপর অভাব-অনটনের সংসারে পড়াশোনা ছেড়ে কৃষিকাজ শুরু করে। সোমবার সন্ধ্যায় মায়ের সঙ্গে অভিমান করে কীটনাশক পান করে শান্ত। এরপর পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে রাতেই কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রাত পৌনে ১০টার দিকে চিকিৎসক শান্তকে মৃত ঘোষণা করেন। তাৎক্ষণিক লাশ মর্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

নিহত শান্তর বাবা কমল প্রামাণিক জানান, মঙ্গলবার বিকেলে তিনি ছেলের লাশ আনতে মর্গে যান। কিন্তু ১০ হাজার টাকা না দিলে লাশ দিচ্ছিল না ডোম লক্ষণ লাল ও হীরা লাল। টাকা দিতে না পারায় তারা উল্টো লাশের ওপর ভয়ঙ্কর অত্যাচার চালায়।

কমল প্রামাণিক বলেন, লাশ কাটা ঘরের মধ্যে ডেকে নিয়ে ওরা আমার ছেলের লাশ দেখিয়ে বলে- বুকের অর্ধেক কাটলে পাঁচ হাজার, পুরো কাটলে ১০ হাজার আর কপাল কাটতে আরো ছয় হাজার টাকা লাগবে। তা না হলে লাশ কাটা হবে না। ওদের বারবার বলেছি আমি গরিব, আমার এত টাকা নাই। এরপর ওরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার চোখের সামনে ছেলের লাশ গরুর চামড়ার মতো ছিলতে থাকে।

তিনি আরো বলেন, পুলিশের সামনে লক্ষণ লাল ও হীরা লাল যখন টাকা দাবি করে তখন পুলিশ বলে- ‘এরা কি এসব বোঝে? তুমি এইটুকু কাটবা, ওইটুকু কাটবা দেখাচ্ছ। এরা তো ওইসব বোঝে না। যে যেমন লোক, তার সঙ্গে সে রকম করো।’ আমি পুলিশ ভাইকে বারবার অনুরোধ করে বলেছি, ভাই আমি গরিব মানুষ, ভ্যান চালিয়ে খাই। টাকা দেওয়ার মতো কোনো অবস্থা আমার নাই। উল্টো পুলিশ আমাকে বলে, এসব কথা এখানে চলবে না।

অসহায় এ ভ্যানচালক বলেন, রাতে লাশ মর্গে ঢোকানোর সঙ্গে সঙ্গে পাহারা দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা দাবি করে দুই ডোম। আমি গরিব মানুষ, টাকা কোথায় পাব- বলতেই আমার ওপর রেগে যায়। পরে আমার ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা ধার করে তাদের দিয়ে রাতে বাড়ি চলে যাই। সকালে আসার সঙ্গে সঙ্গে ৭০০ টাকা, পরে আরো ১০০ টাকা নেয়। দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকেও বিভিন্ন খরচের কথা বলে আমার কাছ থেকে ১৫৫০ টাকা নিয়েছে।

শান্তর চাচা মামুন বলেন, খবর পেয়ে দুপুরে আমি মর্গের সামনে গিয়ে দেখতে পাই দুই ডোম ও একজন পুলিশ সদস্য এক টেবিলে বসে সিগারেট খাচ্ছে। পাশে শান্তর আব্বা দাঁড়িয়ে টাকা নিয়ে কথা বলছেন। ওই সময় আমি মোবাইলে ভিডিও করার চেষ্টা করলে তারা টের পেয়ে আমাকে ভিডিও করতে দেয়নি। বিষয়টি জানতে পেরে সাংবাদিকরা মর্গের সামনে উপস্থিত হলে সন্ধ্যায় দুই ডোম তাড়াহুড়া করে লাশ একটি অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয়।

শুধু ভ্যানচালক কমল প্রামাণিক নন, ওই দুই ডোমের বিরুদ্ধে অনেকেই লাশ আটকে রেখে টাকা দাবির অভিযোগ করেছেন। কুষ্টিয়ার খাজানগর কাতলমারীর বাসিন্দা মিন্টু আলী জানান, তিনি পরের জায়গায় থেকে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান। গত ১২ জুলাই তার ছেলে মোহাম্মদ আলী পানিতে ডুবে গেলে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এর পর হাসপাতাল থেকে লাশ মর্গে নেয়া হলে দুই ডোম লক্ষণ ও হীরা পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে। অনেক অনুরোধের পর তারা আড়াই হাজার টাকায় লাশ ছাড়ে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবল হাবিব বলেন, আমার সামনেই ডোমরা টাকা দাবি করেছে। আমি তাদের কিছু বলিনি।

অভিযোগ অস্বীকার করে মর্গের ডোম লক্ষণ লাল বলেন, তাদের কাছে কোনো টাকা দাবি করা হয়নি। তারা ইচ্ছে করে লাশ ফেলে রাখে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এম এ মোমেন বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By Uttoron Host