রকিবুল ইসলাম রুবেল, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ ভালোবাসা, শব্দটি শুনলেই যে ছবিগুলো মনের চোখে ভেসে ওঠে, তা যার যার প্রিয় মানুষ গুলোর। কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটে কিছু প্রাণী প্রেমিকদের বেলায়। তেমনি এক প্রাণী প্রেমিক লালমনিরহাটের রেজাউল করিম রানা (৩৭) ডাকনাম রানা নামেই পরিচিত। কুকুর প্রেমী এই যুবকের দেখা মেলে তার ভালোবাসার কুকুর গুলোর সাথে রোজ রাত ৯ টায়। লালমনিরহাট শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশোন মোড় এলাকার সোনামণি ভিলার গেটের সামনে, রাত ৯ টা বাজলেই কুকুরের সাথে নিখাদ ভালোবাসা বিনিময়ের দৃশ্য দেখে অনেক পথিক হঠাৎ থমকে দারায়।
গত বছর মার্চের ২৬ তারিখ, করোনা ভাইরাসের প্রকপে করা লকডাউনে গোটাদেশ। সরকার ও বৃত্তবানদের দেওয়া ত্রাণ তখন নিম্নআয়ের মানুষের ভরসা। অভাবে কাছের মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো অনেকের, এমনটা বলছিলেন ঐ সময় ৬ টি ক্ষুধার্ত কুকুরের আশ্রয় দাতা রানা। বর্তমানে কুকুর গুলোর প্রজনন হওয়ার পরেও সংখ্যায় কমেছে।
দীর্ঘ দিন কুকুর গুলোকে রাতে খাবার দিতে দেখে রেজাউল করিম রানার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ওদের গত বছর ২৬ মার্চ প্রথম যখন ক্ষুধার্ত অবস্থায় দুপুরে দেখি তখন কেমন যেনো একটা মায়া লাগলো আর সেই মায়া থেকে এই ভালোবাসা। বাড়ির ভেতর থেকে প্রথমে খাবার এনে দেওয়ার পর খাওয়া শেষে ওরা বসে থাকলো। রাতে বাসায় ঢুকতেই দেখি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আবার খাবার দিলাম, ওরা খাওয়া শেষে আর কোথাও গেলোনা, তখনি সিদ্ধান্ত নেই ওরা আমার কাছেই থাকবে। রিজিক দাতা তো সকলের সৃষ্টিকর্তা। আমি নাহয় ওদের একটু দেখাশোনা করবো। আর ভালোবাসা তো শুধু মানুষের জন্য নয়। সেই থেকে এক সাথেই আছি। সম্প্রতি সময় ১টি মা কুকুর বাচ্চা দিয়েছে ২ টি। কুকুর ছানা দুটি সখ করে দুজন নিয়ে গেছে। আরেকটি কুকুর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। বাকিরা সকালে বাসায় যা থাকে সেটা খেয়েই বের হয়। দুপুরে এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করলেও খেতে আসেনা, একেবারে রাত ৯ টা বাজলেই বাড়ির গেটের সামনে কখনো ওরা আমার জন্য অপেক্ষা করে, কখনো আমি। রাতে ওদের খাবারটি নিজ হাতে ভাগ করে দেই ওরা সুশৃংখল ভাবে খেয়ে আমার বাড়ীসহ আশপাশ পাহারায় দেয়।
মোঃ রেজাউল করিম রানা ডাঃ মোঃ জমশেদ আলী রাজুর বড় ছেলে। সপরিবারে মিশোন মোড়ের সোনামণি ভিলায় বসবাস করেন। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক বিষয়ে বি, এস, সি শেষ করে বাড়ির সাথে নিজেদের মার্কেটেই কম্পিউটার ও মোবাইল এক্সেসরিজ ব্যাবসা করেন।
স্থানিয় ব্যাবসায়ী রহিম বাদশা (৩৩) বলেন, মিশোন মোড়ে বেশ কয়টি খাবার হোটেল রয়েছে যেগুলো করোনা ভাইরাসের কারনে প্রথম লকডাউনে পুরোপুরি বন্ধ ছিলো। ঠিক সেই সময় দেখেছি হোটেল গুলোর উপর নির্ভর করা অনেক কুকুরকে খেতে দিতো রানা। রাতে এখনো দেখি কুকুরদের অনেক আদর করে নিজ হাতে খাওয়ায়। এটি ভালো কাজ, অবশ্যই প্রশংসনীয়।
ফল ব্যাবসায়ী সুলতান হোসেন স্থানিয় ভাষায় বলেন, এলা মাইনষে মাইনষোক না খাওয়ায়। মেলা দিন থাকি দেখং ছোয়াটা কুত্যাগুল্যাক খিল্যায় আল্লাহ ওমার ভাল কইরবে।