নিউজ ডেস্ক: আগামীকাল সোমবার থেকে সাতদিন দেশব্যাপী এ লকডাউন কার্যকর থাকবে। লকডাউন চলাকালীন শুধুমাত্র কলকারখানা ও জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকবে। লকডাউন বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরিতে গতকাল বিকালে জরুরি বৈঠক করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বৈঠকের সারসংক্ষেপ অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই তা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে শনিবার দুপুরে লকডাউন ঘোষণার বিষয়টি ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমে গণমাধ্যমকে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনও গণমাধ্যমে ভিডিও বার্তা দেন। লকডাউন চলাকালীন যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়। গত ২৯শে মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পুনরায় বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব অফিস ও কারখানা অর্ধেক জনবল দিয়ে পরিচালনা করা, জনসমাগম সীমিত করা, গণপরিবহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনসহ ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সরকার। গত কয়েক দিন ধরেই প্রতিদিন ছয় হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার একদিনে শনাক্ত সাত হাজারের কাছাকাছি পৌঁছায়। পরিস্থিতির অবনতির কারণে সরকার নতুন করে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ভিডিও বার্তায় বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আপাতত সাতদিনের লকডাউন দেওয়া হলেও লকডাউনের শেষের দিকে গিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী বিষয়ে বিবেচনা করা হবে। এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন কেন, তা জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, আপাতত সাতদিন লকডাউন দিচ্ছি। আশা করছি, এই সাতদিন মানুষকে ঘরের মধ্যে রাখতে পারলে সংক্রমণ রোধ করতে পারবো। নয়তো সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে যাবে। মানুষের নানা বিষয় আছে, সেগুলো সাতদিন লকডাউনের শেষের দিকে বিবেচনা করবো, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেবো। এর আগে লকডাউনে শ্রমজীবী মানুষদের জন্য বিভিন্ন রকমের সহায়তার ব্যবস্থা ছিল, এবার কী হবে? এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, লকডাউন সাতদিনের জন্য সংক্ষিপ্ত হলে সেগুলো নিয়েও চিন্তাভাবনা থাকছে। প্রজ্ঞাপন যখন দেয়া হবে, তখন বিস্তারিত থাকবে। আজ (শনিবার) সন্ধ্যার পর হয়তো প্রজ্ঞাপন হতে পারে। প্রতিমন্ত্রী রাজধানীর বেইলী রোডের বাসা থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো ওই ভিডিও বার্তায় বলেন, লকডাউনে জরুরি সেবা দেয়- এমন প্রতিষ্ঠানগুলোই শুধু খোলা থাকবে। শিল্পকারখানাও খোলা থাকবে। শ্রমিকেরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিফ্ট অনুযায়ী কাজ করবেন। এদিকে সারা দেশে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউনের রূপরেখা তৈরিতে জরুরি বৈঠক করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসসহ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব ও সচিবরা অংশ নেন। শনিবার বিকালে জুমে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বৈঠকে তিন বাহিনীর প্রতিনিধি, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিজিবি’র মহাপরিচালক, আনসারের মহাপরিচালকসহ চারটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন। সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লকডাউনের সময়সীমা নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। লকডাউন বাস্তবায়নের কৌশল এবং এছাড়া শিল্পপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হলে সেখানে শ্রমিকরা কীভাবে কারখানায় আসবেন এবং কাজ করবেন তা নিয়েও বিস্তারিত আলেচনা হয়েছে। এই আলোচনার সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে তা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল গণমাধ্যমকে বলেছেন, সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে মানুষ মনে করে ছুটি হয়েছে, ঘুরতে চলে যায়। এ কারণে এবার লকডাউন দেয়া হয়েছে। সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সংক্রমণ বাড়তে থাকায় জাতীয় কমিটির পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। সেখানে আংশিক লকডাউনের পাশাপাশি পুরো লকডাউনের সুপারিশও ছিল। সংক্রমণ পরিস্থিতি খুব খারাপের দিকে গেলে লকডাউন দেওয়ার চিন্তা সরকারের আগেই ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে ১৮ দফা যে প্রস্তাব করা হয়েছিল তা অনেক ভেবেচিন্তে, অনেকের পরামর্শ নিয়ে করা হয়েছে। সরকার শুরুতে সব প্রস্তাব বাস্তবায়ন করেনি। এখন আস্তে আস্তে কঠোর হচ্ছে।
অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ কাল থেকে
করোনার দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ ঝুঁকি প্রতিরোধে আগামীকাল (৫ই এপ্রিল) থেকে দেশের সব অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ (সিএএবি)। শনিবার সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ মফিদুর রহমান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, সরকারের প্রজ্ঞাপনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী চলবে এবং এই আদেশের আওতায় পড়বে না বলেও জানান তিনি।